নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর গুলশানে একজন সাবেক সংসদ সদস্যের বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাঁচ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের এ হেন কর্মকাণ্ড নিয়ে এবার মুখ খুললেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা।
এ ঘটনা জানাজানির পর শনিবার (২৬ জুলাই) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আটক পাঁচজনের একটি ছবি শেয়ার করে তিনি পোস্ট দিয়েছেন।
এতে উমামা ফাতেমা লেখেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত ৫ জনের চাঁদাবাজির খবর শুনে আমার পরিচিত ব্যক্তিবর্গ এতটাই আশ্চর্যান্বিত হওয়ার অভিনয় করছেন যে আমার মনে হচ্ছে আমিই সবথেকে কম আশ্চর্য হয়েছি। এই ছেলেগুলাকে তো নেতাদের পেছনে প্রটোকল দিতে দেখা গেছে এতদিন যাবৎ। সচিবালয় থেকে শুরু করে মিছিল-মিটিং, মারামারি সব জায়গাতেই সমন্বয়কদের ডান হাত, বাম হাত হিসেবে নির্বিঘ্নে প্রটোকল দিয়ে গেছে। গুলশান বনানী গ্যাং কালচারের অজস্র অভিযোগ অভ্যন্তরীণভাবে তাদের বিরুদ্ধে ছিল’।
তিনি লেখেন, ‘এই ছবির রিয়াদ নামের ছেলেটা গত ডিসেম্বর মাসে রূপায়ন টাওয়ারে আমার সামনে অত্যন্ত উশৃঙ্খল আচরণ করেছিল। আমরা মেয়েরা তাকে থামানোর চেষ্টা করলে আমাদের উপর পাল্টা চড়াও হয়। ঐ ঘটনার পর ছেলেটার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে হুমকি, মারামারি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে। আমি জেনে তখন মোটেও অবাক হইনি, কারণ ততদিনে বৈষম্যবিরোধীতে এই ধরনের মানুষজনের আনাগোনাই সর্বোত্র টের পাওয়া যেত। ঠিকই তারা রূপায়ন টাওয়ারে অবাধে আসা যাওয়া করত। কারো দুর্নীতি বা অসততার ব্যাপারে অভিযোগ জানালে উত্তরে পিনড্রপ সাইলেন্স উপহার পেতে হবে। আর আমি চোখের সামনে দেখতাম এসব লোকজনই কীভাবে দিন শেষে এক্সেস করে নেয়। আজকে এতমাস পর এই প্ল্যাটফর্মের দিকে তাকালে বলার ভাষা পাই না কোনো?! যে যেভাবে পারছে এই প্ল্যাটফর্মকে নষ্ট করেছে’।
তিনি আরও লেখেন, ‘আজকের এই চাঁদাবাজির খবর দেখে আশপাশের সবাই এত অবাক হওয়ার ভান করছেন বিষয়টা কিছুটা হাস্যকর বটে : ইশ! মানুষ কত নিঃষ্পাপ! সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর মতো তারা আবিষ্কার করেছেন এই ছেলেগুলো আজ কীভাবে চাঁদাবাজি করল?! অত্যন্ত দুঃখিত বন্ধুরা, বলতে হবে এই প্রথম কোনো চাঁদাবাজি করতে গিয়ে তারা পুলিশের হাতে ধরা খেল। ঠিকমতো খোঁজ নিলে বুঝবেন, এদের শেকড় অনেক গভীরে’।
চাঁদা না দিলে পুলিশ-সেনাবাহিনী দিয়ে গ্রেপ্তারের ভয় দেখানো হয় : গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ে কয়েকজন আবু জাফর (সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের স্বামী) নামে একজন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসীর বাসা থেকে গত ১৭ জুলাই ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে তারা বলে পুলিশ বা সেনাবাহিনী দিয়ে গ্রেফতার করাবে। এই ভয়ে ১০ লাখ টাকা দিয়ে দেন ভুক্তভোগী। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আবু জাফর আগে আওয়ামী লীগ করতেন।
এ সময় এই প্রবাসী জানান, তিনি অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করেন। তিনি কোনো রাজনীতির মধ্যে এখন নাই, দেশে এসেছেন বেড়াতে। এরপরও তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ১০ লাখ টাকা নেয় চাঁদাবাজরা। এরপরও ভুক্তভোগী আবু জাফর পুলিশকে জানাননি।
এর দুইদিন পর বাকি ৪০ লাখ টাকা নিতে চাঁদাবাজরা ওই বাসায় আবার যায়। শনিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদের নেতৃত্ব ৪০ লাখ টাকা চাওয়া হয়। এরপর আবু জাফর পুলিশকে জানালে দ্রুত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে হাতেনাতে পাঁচ চাঁদাবাজকে আটক করে।
আটকরা হলেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, জ্যেষ্ঠ সংগঠক ও কেন্দ্রীয় ক্রীড়া সেলের সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ, সদস্য মো. সিয়াম ও সাদমান সাদাব এবং আমিনুল ইসলাম।
আটকদের রাজনৈতিক পরিচয় আছে কি না জানতে চাইলে ওসি বলেন, পরিচয় শনাক্তের কাজ চলছে। যাচাই-বাছাই করে পরে জানানো হবে। আটকদের মধ্যে চারজন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং একজন একটি কলেজের শিক্ষার্থী।
চাঁদাবাজির ঘটনায় ওই অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার অভিযোগটি এজাহার হিসেবে রুজু করা হবে বলেও জানিয়েছেন গুলশান থানার ওসি হাফিজুর রহমান।
এনডিটিভিবিডি/২৭জুলাই/এএ