ঢাকা , রবিবার, জুলাই ২৭, ২০২৫

রাজনৈতিক ও বৈদেশিক খাত স্থিতিশীল হলে প্রবৃদ্ধি বাড়বে

Jul ২৭, ২০২৫
অর্থনীতি
রাজনৈতিক ও বৈদেশিক খাত স্থিতিশীল হলে প্রবৃদ্ধি বাড়বে

নিজস্ব প্রতিবেদক : যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বৈশ্বিক ঋণমান যাচাইকারী সংস্থা এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল বলেছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও বৈদেশিক খাতে সার্বিক লেনদেনে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা গেলে আগামী এক বছরের মধ্যে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হারে আবার গতি ফিরে আসতে পারে। এই ধারাবাহিকতা থাকলে পরবর্তী তিন বছরে প্রবৃদ্ধির হার গড়ে ৬ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে। তবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও বৈদেশিক লেনদেনে স্থিতিশীলতা বাধাগ্রস্ত হলে প্রবৃদ্ধির হারও বাধাগ্রস্ত হবে। এক্ষেত্রে ২০২৬ সালের সম্ভাব্য জাতীয় নির্বাচন অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি অর্জনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে পারে বলে মন্তব্য করেছে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে এমন মন্তব্য করেছে।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য ৩৫ শতাংশ পালটা শুল্ককে দেশের বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ঝুঁকি হিসাবে আখ্যায়িত করেছে। এই শুল্ক কার্যকর হলে তৈরি পোশাক খাতের প্রতিযোগিতা ধরে রাখতে ও দেশের শ্রমবাজারে প্রভাব ফেলতে পারে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত এখনো অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক। কারণ এখানে শ্রমের খরচ কম এবং শ্রমশক্তির সহজলভ্যতাও রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত শুল্ক হার বাংলাদেশকে ওই বাজারে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে পিছিয়ে দিতে পারে বলে সংস্থাটি সতর্ক করেছে।

প্রতিবেদনে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল বাংলাদেশের ঋণমান ‘স্থিতিশীল’ রেখেছে। সংস্থাটি বাংলাদেশের অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদি ঋণমান আগের মতোই ‘বি প্লাস’ ধরে রেখেছে। পাশাপাশি স্বল্পমেয়াদি রেটিং ‘বি’ বহাল রেখেছে। এর আগেও তারা বাংলাদেশের ঋণমানে এমন রেটিং দিয়েছিল।

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কয়েক মাস ঋণমান যাচাইকারী সংস্থাগুলোকে বাংলাদেশের ঋণমানে আগের নেতিবাচক বার্তা তুলে নেওয়ার সুপারিশ করেছিল। তবে কোনো বৈশ্বিক ঋণমান যাচাইকারী সংস্থাই এটি করেনি। তবে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল এবারের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ঋণ অপরিবর্তিত রেখেছে।

এসঅ্যান্ডপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে দুই বছরে বাংলাদেশের প্রকৃত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি ফিরতে শুরু করেছে। তবে রাজনৈতিক ও সার্বিক বৈদেশিক লেনদেনে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হলে আগামী এক বছরের মধ্যে দেশের প্রবৃদ্ধির হারে আবার গতি ফিরে আসতে পারে। সে ধারাবাহিকতায় পরবর্তী তিন বছরে প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে গড়ে ৬ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। এতে বোঝা যায়, বাংলাদেশের বৈদেশিক খাতে সার্বিক লেনদেনের সক্ষমতা ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হচ্ছে।

এছাড়া বাংলাদেশ বর্তমানে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় উন্নয়ন অংশীদারদের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য বৈদেশিক আর্থিক সহায়তা বা ঋণ পাচ্ছে। এর সঙ্গে রয়েছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ঊর্ধ্বগতি ও তৈরি পোশাক খাত থেকে বাড়তি রপ্তানি আয়। যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনকে শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে গেছে। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে বৈদেশিক খাতে লেনদেনের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে। যা দেশের অর্থনীতিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নেবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ডলারের বিপরীতে টাকার নমনীয় বিনিময় হার চালু রাখা, টাকা অবমূল্যায়ন মেনে নেওয়া, সংকোচনমুখী মুদ্রানীতির অনুসরণের ফলে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বেড়েছে। এতে বৈদেশিক খাতে তারল্যের জোগানও বেড়েছে। এসব পদক্ষেপের ফলে মূল্যস্ফীতির হার কমেছে। এ হার বর্তমানের তুলনায় আগামীতে আরও কমে এলে দেশের অর্থনীতিতে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়তে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে বিনিয়োগকারীদের এখনো বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগত কাঠামোর পরিবর্তন, অবকাঠামোগত ঘাটতি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মতো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা।

যদি একটি নির্বাচিত সরকার গঠনের মাধ্যমে আগামীতে আরও স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি হয়, তাহলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে এবং দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত সংস্কারের ভিত্তি গঠনে সহায়ক হতে পারে বলে এতে মন্তব্য করা হয়েছে।

এনডিটিভিবিডি/২৭জুলাই/এএ