নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি অনেকটা নিজের খেয়েই যেন বনের মহিষ তাড়ান নারায়ণগঞ্জের বেসরকারি ক্রিকেট অ্যাকাডেমিগুলো। তাদের নেই কোনো তদারকি, নেই অভিভাবক। অ্যাকাডেমি পরিচালনায় নিজেদের খরচ নিজেরাই বহন করে থাকে। জেলা ক্রীড়া সংস্থা কিংবা সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা আসে না।:
তদারকির অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে প্রতিভাবান খেলোয়াড়
বাড়তি আয় কিংবা বেতন নেই কোচ-খেলোয়াড়দের
স্পন্সর নেই, অ্যাকাডেমি চলে নিজ খরচে
তবে ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এসব অ্যাকাডেমিগুলোকে সহযোগিতা করা হলে জাতীয় পর্যায়ে আরও ভালো খেলোয়াড় পাওয়া যেতো। জাতীয় পর্যায়ে যারা খেলেন তারা এসব বেসরকারি অ্যাকাডেমি থেকেই উঠে আসেন। তাই আগে থেকেই তদারকি করা গেলে পাইপলাইন আরও অনেক মজবুত হতো। অনেক জেলায় ভালো খেলোয়াড় আছে কিন্তু সুযোগের অভাবে খেলতে পারছে না। তদারকির অভাবে অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় হারিয়ে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নারায়ণগঞ্জে প্রায় অর্ধশতাধিক বেসরকারি অ্যাকাডেমি রয়েছে। এর মধ্যে দু’একটি অ্যাকাডেমির স্পন্সর রয়েছে। আর কয়েকটা অ্যাকাডেমি ক্লাবভিত্তিক পরিচালিত হয়ে থাকে। তবে বেশিরভাগ অ্যাকাডেমি ব্যক্তিগতভাবে পরিচালিত হয়ে থাকে। অ্যাকাডেমি থেকে খেলে বিভিন্ন পর্যায়ে যাওয়া কিংবা অন্য কোনো পেশায় প্রতিষ্ঠিত হওয়া খেলোয়াড়দের আর্থিক সহযোগিতায় এসব একাডেমি পরিচালিত হয়ে আসছে।
‘নারায়ণগঞ্জে ক্রিকেটকে তেমন প্রাধান্য দেওয়া হয় না। সেইসঙ্গে আমাদের মাঠগুলোও ক্রিকেটের জন্য উপযোগী না। যদি আমাদেরকে সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয় তাহলে আরও ভালো করতে পারবো।’
শীতলক্ষ্যা একাডেমি থেকে ঢাকা সাউথ ডিভিশনে আন্ডার ফোরটিনে খেলার সুযোগ পেয়েছেন সুজন। সেইসঙ্গে ফিফটিন ন্যাশনালে আসামের বিরুদ্ধে টেস্ট খেলারও সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
সুজন বলেন, নারায়ণগঞ্জে ক্রিকেটকে তেমন প্রাধান্য দেওয়া হয় না। সেইসঙ্গে আমাদের মাঠগুলোও ক্রিকেটের জন্য উপযোগী না। যদি আমাদেরকে সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয় তাহলে আরও ভালো করতে পারবো। কিন্তু আমরা সবসময় সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকি।
নারায়ণগঞ্জ ক্ল্যামন ক্রিকেট অ্যাকাডেমির সহকারী কোচ জিয়াউল হক বলেন, নারায়ণগঞ্জের কয়েকটা অ্যাকাডেমির স্পন্সর রয়েছে। আর বেশিরভাগ অ্যাকাডেমি ব্যক্তিগত কিংবা ক্লাব থেকে পরিচালনা করা হয়। জেলা ক্রীড়া সংস্থা কিংবা সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা আসে না। যদি সহযোগিতা আসতো তাহলে হয়ত আরও ভালো হতো। এসব অ্যাকাডেমিগুলোর যারা কোচ আছেন তাদের বাড়তি কোনো আয় নেই, কোনো বেতনও নেই। অনেকে অনেক কিছু মনে করেন কিন্তু বাস্তবে এর বিপরীত। যারা কোচ আছেন তাদের কোনো রকম চলে।
‘এসব অ্যাকাডেমিগুলোর যারা কোচ আছেন তাদের বাড়তি কোনো আয় নেই, কোনো বেতনও নেই। অনেকে অনেক কিছু মনে করেন কিন্তু বাস্তবে এর বিপরীত। যারা কোচ আছেন তাদের কোনো রকম চলে।’
শীতলক্ষ্যা অ্যাকাডেমির প্রধান কোচ মো. মাকছুদুল আলম বলেন, ২০১১ সাল থেকেই শহরের জিমখানা মাঠে এই অ্যাকাডেমি পরিচালনা করে আসছি। আমাদের এখানে ৩০ থেকে ৩৫ জন ছেলে মেয়ে আছে। তারা প্রতিদিনই সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্র্যাকটিস করে। যারা প্র্যাকটিস করে তাদের কোনো বেতন সিস্টেম নেই। প্র্যাকটিসের জন্য যেসব জিনিসপত্র প্রয়োজন হয় সেগুলো কিছুটা দিয়ে থাকে। অথচ আমাদের খেলোয়াড়রা দেশের বিভিন্ন খেলায় অংশগ্রহণ করে আসছে।
তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জে যেসব অ্যাকাডেমি আছে বেশিরভাগেরই কোনো স্পন্সর নেই। দুইটা অ্যাকাডেমি ছিল যাদের স্পন্সর ছিল। আর বাকি অ্যাকাডেমিগুলো নিজ উদ্যোগে নিজ চেষ্টায় চলে আসছে। যদি সহযোগিতা পাওয়া যেত তাহলে হয়ত আরও ভালো করা যেতো।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম নাসির বলেন, বেসরকারি ক্রিকেট অ্যাকাডেমি যারা পরিচালনা করেন তাদের অবস্থা নিজের খেয়ে বনের মহিষ তাড়ানোর মতো। একসময় যারা ক্রিকেট খেলেছে অন্য কোথাও যেতে পারেনি তারা একটা কোচিং সেন্টার খুলছে। বিভিন্ন অভিভাবক তাদের ছেলে মেয়েদের প্র্যাকটিস করার সুযোগ দেয়। কোনো কোনো অ্যাকাডেমি নামমাত্র কিছু টাকা দিয়ে কোনো রকম প্র্যাকটিস চালিয়ে যায়। ওইখান থেকে খেলোয়াড় তৈরি হয়।
‘প্রতি জেলায় এই ধরনের বেসরকারি অ্যাকাডেমি রয়েছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তথ্য নেওয়া উচিত। তাদের কী কী সুযোগ সুবিধার প্রয়োজন, কী কী সাপোর্ট দরকার এগুলো দেখা উচিত। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, এই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকার জন্য বেসরকারি ক্রিকেট অ্যাকাডেমি তৈরি হয়। ক্রিকেটের উন্নয়নের স্বার্থে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড নজরদারি করলে ভালো হয়।’
তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের এগুলোর দিকে নজর দেওয়া উচিত। প্রতি জেলায় এই ধরনের বেসরকারি অ্যাকাডেমি রয়েছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তথ্য নেওয়া উচিত। তাদের কী কী সুযোগ সুবিধার প্রয়োজন, কী কী সাপোর্ট দরকার এগুলো দেখা উচিত। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, এই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকার জন্য বেসরকারি ক্রিকেট অ্যাকাডেমি তৈরি হয়। ক্রিকেটের উন্নয়নের স্বার্থে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড নজরদারি করলে ভালো হয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ফারজানা আক্তার সাথী বলেন, আমরা আসলে স্কুল কলেজ পর্যায়ে খেলাধুলা পরিচালনা করে থাকি। এর বাইরে অ্যাকাডেমি নিয়ে কিছু করার সুযোগ অনেক কম। তারপরও অনেক সময় চেষ্টা করে থাকি বেসরকারি অ্যাকাডেমিগুলোর জন্য কিছু করার।
এনডিটিভিবিডি/০৭জুলাই/এএ