ঢাকা , রবিবার, জুলাই ১৩, ২০২৫

জ্যামিতিক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু : জুনে ভাঙল পাঁচ মাসের রেকর্ড, আগস্ট-সেপ্টেম্বর হতে পারে ভয়াবহ

Jul ১৩, ২০২৫
স্বাস্থ্য
জ্যামিতিক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু : জুনে ভাঙল পাঁচ মাসের রেকর্ড, আগস্ট-সেপ্টেম্বর হতে পারে ভয়াবহ

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ ফের ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে। ২০২৩ সালের ভয়াবহ স্মৃতি যেন আবার ফিরে আসছে। সবশেষ জুন মাসে রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা একলাফে গত পাঁচ মাসের মিলিত সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে চলতি জুলাই এবং আগামী আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৪ হাজার ৩৪৫ জন। এরপর মাত্র একমাসে অর্থাৎ জুনের ৩০ দিনে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯৫১ জনে। অর্থাৎ আগের ৫ মাস মিলে যত জন ভর্তি হয়েছিল জুনে এক মাসেই তার চেয়ে বেশি ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এই মাসে মৃতের সংখ্যাও অনেক বেশি। আগের ৫ মাসে মারা গেছে ২৩ জন আর এই এক মাসে মারা গেছে ১৯ জন। এছাড়া, জুলাইয়ের প্রথম ১২ দিনে মৃতের সংখ্যা ১৩-তে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ মৃত্যুহার দিন দিন বাড়ছে।

বছরের শুরু থেকে জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গুর গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী। জানুয়ারি মাসে যেখানে রোগী ছিল মাত্র এক হাজার ১৬১ জন এবং মৃত্যু ১০, সেখানে জুন মাসে আক্রান্ত প্রায় পাঁচগুণ বেশি, ৫ হাজার ৯৫১ এবং মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৯

মশার উৎপাত, ঢাকাবাসী দেখছে কেবল ‘আশ্বাস’

ডেঙ্গুর এমন ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। তারা বলছেন, এই ভয়াবহ পরিসংখ্যান শুধু সংখ্যা নয়, দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সক্ষমতার জন্য সংকেত। যা আরও গভীর চিন্তার কারণ। ডেঙ্গুর সংক্রমণ ও মৃত্যু যেমন বাড়ছে, তেমনি এটি ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে, বিশেষ করে আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে। কারণ, এই সময় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পিক টাইম বা সর্বোচ্চ সময়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায়, বছরের শুরু থেকে জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গুর গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী। জানুয়ারি মাসে যেখানে রোগী ছিল মাত্র এক হাজার ১৬১ জন এবং মৃত্যু ১০, সেখানে জুন মাসে আক্রান্ত প্রায় পাঁচগুণ বেশি, ৫ হাজার ৯৫১ জন এবং মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৯।

জুলাইয়ের ১২ দিনে ৪ হাজার ১৬৪ জন ভর্তি হওয়া এবং ১৩ জনের মৃত্যুর খবর এই সংকটকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখায় নতুন পরিচালক
জলবায়ু পরিবর্তন এখন এডিস মশার বিস্তারকে আরও ত্বরান্বিত করছে। অস্বাভাবিক বৃষ্টি, তাপমাত্রার ওঠানামা ও আর্দ্রতার তারতম্য মশার জীবনচক্রে সহায়তা করছে এবং ভাইরাস সংক্রমণ আরও দ্রুত হচ্ছে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে অল্প সময়ের বৃষ্টিতে যখন বিভিন্ন ছোট–বড় পাত্রে পানি জমে থাকে, তখন তা দ্রুত মশার প্রজননস্থলে রূপ নেয়
২০২৩ সালের দুঃস্বপ্ন ফিরে আসছে?
দেশে ডেঙ্গুর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বছর ছিল ২০২৩। ওই বছর আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা গেছেন এক হাজার ৭০৫ জন, যা আগের ২৩ বছরের সম্মিলিত সংখ্যা ছাপিয়ে গিয়েছিল। সেই সময়ের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যখাত ব্যাপক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিল। বর্তমান প্রবণতা এবং পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যাচ্ছে, এই দুঃস্বপ্ন যেন আবারও ফিরে আসছে।

বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, যদি যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া না হয় তাহলে ২০২৫ সালের আগস্টে আমরা ২০২৩ সালের চেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছি।

ডেঙ্গু সংক্রমণের এই চিত্র শুধু রাজধানীর নয়, দেশের প্রতিটি জেলার জন্যই বিপদ সংকেত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেশে প্রতিটি জেলায় এডিস মশার লার্ভার ঘনত্বের সূচক ‘ব্রেটো ইনডেক্স’ ২০-এর ওপরে পাওয়া গেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, ২০-এর উপরে ব্রেটো ইনডেক্স মানে ওই এলাকা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এই গবেষণায় বিশেষ করে বরগুনা, বরিশাল, কুমিল্লা, কক্সবাজার, গাজীপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চাঁদপুর, মাদারীপুরসহ অন্তত ১১টি জেলা আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুর বিস্ফোরণের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা যদি থামানো না যায়, তবে আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে আমরা ২০২৩ সালের ভয়াবহ ডেঙ্গু মহামারির চেয়ে অনেক বড় সংকটের মুখোমুখি হতে পারি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, গবেষণার ফোরকাস্টিং মডেল অনুযায়ী— আগামী আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে বরগুনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, কক্সবাজার, গাজীপুর, পিরোজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চাঁদপুর এবং মাদারীপুর জেলায় ডেঙ্গুর প্রকোপ মারাত্মক আকার নিতে পারে।

ডেঙ্গু সংক্রমণের এই চিত্র শুধু রাজধানীর নয়, দেশের প্রতিটি জেলার জন্যই বিপদ সংকেত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রতিটি জেলায় এডিস মশার লার্ভার ঘনত্বের সূচক ‘ব্রেটো ইনডেক্স’ ২০-এর ওপরে পাওয়া গেছে

তিনি বলেন, মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা ডেঙ্গুর ভয়াবহ পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখনই যদি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয়, তাহলে ডেঙ্গুর সংক্রমণ জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাবে, যা নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন হয়ে যাবে।

অধ্যাপক কবিরুল বাশার জানান, তারা নিয়মিত ট্রেন্ড বিশ্লেষণ করেন এবং দৈনিক ও সাপ্তাহিক ডেটার ভিত্তিতে সংক্রমণের প্রবৃদ্ধির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেন। ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ডেঙ্গুর ঊর্ধ্বগতি দেখে সহজেই অনুমান করা যায়— আগামী মাসে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হবে।

ডেঙ্গু ঠেকাতে ‘সর্বোচ্চ’ প্রস্তুতি নেবে স্বাস্থ্য বিভাগ

তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরের পূর্বাভাসও তাদের মডেলের সঙ্গে মিলে গেছে। ডেঙ্গু নিয়ে নিবেদিতভাবে কাজ করা একটি টিম প্রতিদিন এই বিষয়ে গবেষণা করে।

তিনি কড়া ভাষায় বলেন, সিটি করপোরেশন এবং স্থানীয় প্রশাসন যথাযথভাবে কাজ করছে না। সাধারণ জনগণও ডেঙ্গুকে প্রয়োজনীয় গুরুত্ব দিচ্ছে না। এমনকি সরকারি মহলেও তাদের সতর্কবার্তাকে পাত্তা দেওয়া হয় না। সবাই ভাবছে, এসব কথা শুধু আভাস মাত্র। কিন্তু যখন বিপদ চূড়ান্ত আকার নেয়, তখন তৎপর হওয়া শুরু হয়।

চিকুনগুনিয়ায় কারা বেশি আক্রান্ত হয়, চিকিৎসা কী?
অধ্যাপক কবিরুল বাশার আরও উল্লেখ করেন, বরগুনায় ডেঙ্গু মারাত্মক আকার নিতে পারে, তা গত বছরই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার ও সিটি করপোরেশন কেউই সেই সতর্কবার্তাকে গুরুত্ব দেয়নি।

দেশে ডেঙ্গুর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বছর ছিল ২০২৩। ওই বছর আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা গেছেন এক হাজার ৭০৫ জন, যা আগের ২৩ বছরের সম্মিলিত সংখ্যা ছাপিয়ে গিয়েছিল। সেই সময়ের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যখাত ব্যাপক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিল। বর্তমান প্রবণতা এবং পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যাচ্ছে, এই দুঃস্বপ্ন যেন আবারও ফিরে আসছে

অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ডেঙ্গুর বিস্তারের পেছনে একাধিক পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত কারণ রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হলো— অপরিকল্পিত নগরায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, জনসংখ্যার ঘনত্ব ও নাগরিক জীবনের দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিবর্তন। দেশের শহরাঞ্চলে বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জের মতো এলাকায় অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণকাজের কারণে তৈরি হচ্ছে মশার প্রজননের আদর্শ পরিবেশ।

তিনি আরও বলেন, নির্মাণাধীন ভবনে খোলা ড্রাম, বালতি, পানির ট্যাংক কিংবা পরিত্যক্ত ভবনে দিনের পর দিন জমে থাকা পানি নিয়মিত পরিষ্কার না করায় সেখানে অনায়াসে এডিস মশা বংশবিস্তার করে। বহুতল ভবনগুলোর বেজমেন্টে গাড়ি পার্কিং ও গাড়ি ধোয়ার জায়গায় সৃষ্টি হচ্ছে মশার প্রজননস্থল। তা ছাড়া, কিছু কিছু এলাকায় পানির সংকট থাকার কারণে বৃষ্টি বা সাপ্লাইয়ের পানি ড্রাম, বালতি ও অন্যান্য পাত্রে ধরে রেখে নাগরিকেরা নিজেরাই তৈরি করছে মশার অনন্য বাসস্থান।

কবিরুল বাশার বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে লার্ভা ধ্বংস সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হলেও দেশে অনেক এলাকায় নিয়মিত মনিটরিং বা লার্ভা পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। জনবল সংকট, প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা ও কার্যকর পরিকল্পনার অভাবে পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনগুলো এ কাজে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে পারছে না। এ কারণে অনেক এলাকায় নিভৃতে লার্ভা বেড়ে উঠছে এবং তা ডেঙ্গুর বিস্তারকে ত্বরান্বিত করছে।

‘সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাবও ডেঙ্গু মোকাবিলায় বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই জানেন না কোথায় মশা ডিম পাড়ে, কীভাবে লার্ভা ধ্বংস করতে হয় কিংবা এডিস মশা কখন কামড়ায়। কেউ কেউ জানলেও দায়িত্ববান আচরণ করেন না। বাড়ির ছাদ, বারান্দা বা আঙিনায় জমে থাকা পানির প্রতি সতর্কতা অবলম্বন করেন না।’

তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো— জলবায়ু পরিবর্তন এখন এডিস মশার বিস্তারকে আরও ত্বরান্বিত করছে। অস্বাভাবিক বৃষ্টি, তাপমাত্রার ওঠানামা ও আর্দ্রতার তারতম্য এডিস মশার জীবনচক্রে সহায়তা করছে এবং ভাইরাস সংক্রমণ আরও দ্রুত হচ্ছে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে অল্প সময়ের বৃষ্টিতে যখন বিভিন্ন ছোট–বড় পাত্রে পানি জমে থাকে, তখন তা দ্রুত মশার প্রজননস্থলে রূপ নেয়।

‘ডেঙ্গুর বর্তমান পরিস্থিতি শুধু একটি রোগ নয়, বরং জলবায়ু, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের সম্মিলিত সংকট, যার সমাধান জরুরি। এ সংকট মোকাবিলায় সমন্বিত পদক্ষেপ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’
কিছুদিন আগে বরগুনায় একটি ডেঙ্গু আউটব্রেক দেখা দিয়েছিল। আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিই। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও সতর্ক নজরদারি চালু আছে

জুনে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে আর্দ্রতা ছিল বেশি। জনস্বাস্থ্যবিদ ও কীটতত্ত্ববিদরা মনে করছেন, এ কারণে ডেঙ্গু রোগবাহী এডিস মশার বিস্তার বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশে ডেঙ্গুকে ‘জরুরি জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি’ ঘোষণার মত দিচ্ছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট জনস্বাস্থ্যবিদ ও ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, এখন যেভাবে ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে, তাতে একে আর হেলাফেলা করা উচিত নয়। এখন ডেঙ্গু পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে একে ‘জরুরি জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি’ ঘোষণা করা দরকার।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের চেষ্টা যথেষ্ট নয় উল্লেখ করে মুশতাক হোসেন বলেন, ‘প্রয়োজনীয় বরাদ্দেরও সমস্যা দেখা যাচ্ছে। এজন্য সরকারকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সহযোগিতা নেওয়া দরকার।’

ডেঙ্গু আক্রান্ত আরও ২৮৭ জন হাসপাতালে

তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ায় ডেঙ্গু সংক্রমণ খুব দ্রুত বিস্তার লাভ করে। একটি ভবনে একজন আক্রান্ত হলে অল্প সময়েই সেই রোগ আশপাশের অনেককে সংক্রমিত করে ফেলে। শহরের বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি, পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাস্টিকের বোতল, ফুলের টব, ক্যান বা প্যাকেটজাত খাবারের খালি কৌটা— সবই মশার ডিম পাড়ার উপযুক্ত জায়গা।

তিনি আরও বলেন, বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টির কারণে তৈরি হওয়া জলাবদ্ধতা ও উচ্চ আর্দ্রতা এডিস মশার জন্য অত্যন্ত উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করে। মশা খুব অল্প পানিতেও ডিম পাড়ে ও মাত্র পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যেই সেই ডিম থেকে পূর্ণাঙ্গ মশা জন্মে যায়। এভাবে টানা বৃষ্টি ও অনিয়ন্ত্রিত পানি নিষ্কাশনের অভাব ডেঙ্গুর বিস্তারকে জ্যামিতিক হারে বাড়িয়ে তোলে। পরিকল্পনাহীন নগরায়ন, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও অকার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে শহরের প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ছোট-বড় পাত্রে পানি জমে থাকে, যা সময়মতো ধ্বংস না করা হলে মশা নিয়ন্ত্রণের সব উদ্যোগ ব্যর্থ হতে বাধ্য।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে লার্ভা ধ্বংস সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হলেও অনেক এলাকায় নিয়মিত মনিটরিং বা লার্ভা পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। জনবলের সংকট, প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা ও কার্যকর পরিকল্পনার অভাবে পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনগুলো কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে পারছে না। এ কারণে অনেক এলাকায় নিভৃতে লার্ভা বেড়ে উঠছে এবং তা ডেঙ্গুর বিস্তারকে ত্বরান্বিত করছে

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেন, ডেঙ্গুর ধরন বদলে গেছে। এখন এমন অনেক রোগী আসছেন, যাদের দ্রুত বিশেষ পর্যবেক্ষণে নেওয়ার প্রয়োজন হয়। তাদের কারও হেমাটোক্রিট লেভেল দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে, কারও অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হচ্ছে, আবার কেউ প্লাজমা লিকেজে ভুগছেন। এ ধরণের পরিস্থিতি ব্যবস্থাপনায় পোর্টেবল আল্ট্রাসনোগ্রাম ও বেডসাইড হেমাটোক্রিট মেশিন অত্যন্ত কার্যকর।

বরগুনার ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ডিজি জানান, কিছুদিন আগে বরগুনায় একটি ডেঙ্গু আউটব্রেক দেখা দিয়েছিল। আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিই। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও সতর্ক নজরদারি চালু আছে।

তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু মোকাবিলায় আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে জনসচেতনতায়। জ্বর হলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

এনডিটিভিবিডি/১৩জুলাই/এএ