" />
করা হয়েছে অনুসন্ধান কমিটি; খতিয়ে দেখা হবে প্রার্থীদের অর্থ-সম্পদের বিবরণী চিত্র
স্টাফ রিপোর্টার :
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অবৈধ অর্থের লেনদেন বন্ধে অভিযান জোরদার করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে তথ্য গোপন, অর্থ-পাচার, স্থানান্তর, রূপান্তর ও অবৈধ লেনদেন প্রতিরোধে সক্রিয় হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণাধীন বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অবৈধ অর্থের লেনদেন বন্ধে বিশেষ ঝটিকা অভিযান জোরদার করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া অভিযোগ ও তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান চালাচ্ছে। একই সঙ্গে দুদকের বিশেষ টিমের সদস্যরা অভিযোগ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নজরদারিতে রেখেছেন। এক্ষেত্রে এনবিআরের গোয়েন্দা ইউনিটকেও সক্রিয় করা হয়েছে।
তথ্য গোপন, অর্থ-পাচার, স্থানান্তর, রূপান্তর ও অবৈধ লেনদেন প্রতিরোধে সক্রিয় হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণাধীন বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে অবৈধ লেনদেন, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে অর্থায়ন ও দেশে-বিদেশে অর্থ স্থানান্তরের বিষয়গুলো নিবিড়ভাবে খতিয়ে দেখবে প্রতিষ্ঠানগুলো। আপাতত এসব প্রতিষ্ঠান নিজস্ব পরিকল্পনায় কাজ গুছিয়ে রাখছে যেন তফসিল ঘোষণার পর তাৎক্ষণিকভাবে সম্মিলিত বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয়।
জানা গেছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুদকের শূন্য সহিষ্ণুতা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এবং বিদায়ী বছরের শেষভাগে সরকারি দলসহ বিভিন্ন দলের
নেতাকর্মীদের দুর্নীতি অনুসন্ধানে মাঠে নামছে দুদক। অবৈধ সম্পদ অর্জনের সঙ্গে জড়িত সন্দেহের তালিকায় থাকা ব্যাক্তি জনের সম্পদ ও ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে এনবিআর বেশকিছু প্রভাবশালী রাজনীতিক ব্যাক্তি ও সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদ ও ব্যাংক হিসাব তলব করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে দুদক। দুদক সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন দল থেকে সংসদ প্রার্থী হওয়াদের হলফনামা আমলে নিয়ে পর্যালোচনা শুরু করবে দুদক, এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংক।
নির্বাচন কমিশনে প্রার্থীদের জমা দেয়া হলফনামায় মন্ত্রী-সংসদ ও আলোচিত নেতাদের পেশা, সম্পদের পরিমাণ ও আয়-ব্যয়ের তথ্যে অনেকেই চমকিত হন। প্রার্থীদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি,ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও সঞ্চয়পত্রের পরিমাণ ১০ বছর আগের তুলনায় কয়েকশ গুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়। প্রায় একই হারে বেড়ে যায় রাজনীতি নির্ভরশীলদের সম্পদও। দুদক সূত্র জানিয়েছে, হলফনামা অনুযায়ী যারা রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন; তাদের সম্পদ অনুসন্ধানে শিগগিরই
মাঠে নামবে দুদক। এ জন্য শিগগিরই অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হবে।
এ কমিটি নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে হলফনামার তথ্য ও এনবিআর থেকে আয়কর নথি সংগ্রহ করবে। দুদকের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সদ্য নির্বাচনে প্রার্থী হওয়াদের হলফনামা ও আয়কর নথির সম্পদ মিলিয়ে দেখা হবে। হলফনামার সম্পদের হিসাব যাচাই করে যাদের নামে-বেনামে অস্বাভাবিক সম্পদ পাওয়া যাবে তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অনুসন্ধান করা হবে।
তাদের আয়ের বৈধ উৎসখতিয়ে দেখা হবে। যাদের হিসাবে গরমিল ও অসামঞ্জস্য পাওয়া যাবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে তলব করা হবে এবং অনুসন্ধানে যাদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহিভর্‚ত সম্পদ অর্জনের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাবে; তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। যেহেতু নির্বাচনের সময় আর্থিক লেনদেনের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অবৈধ লেনদেন হয়; এক্ষেত্রে মানি লন্ডারিং আইনে দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধের অংশটুকুতে দুদক
সক্রিয়ভাবে কাজ করবে। শুধু অর্থ পাচার নয়, বরং কোনো অর্থ অজানা স্থানে স্থানান্তর, কোনো অর্থ-সম্পদের তথ্য গোপন করে সরিয়ে ফেলাও দুদকের তফসিলভুক্ত মানি লন্ডারিং আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এসব বিষয়ে দুদক সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, প্রার্থীদের নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামা খতিয়ে দেখা হবে। হলফনামায় সম্পদের মিথ্যা ও ভুল তথ্য দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান অথবা অন্য কোনো মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এলে দুদক আইনগতভাবে অনুসন্ধান করবে। তবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশন বা কোনো সংস্থা তথ্য চাইলে দুদকের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনের সময় হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো, ফরসেজ আইও বা ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে অবৈধভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে অর্থ
লেনদেনের পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই বিষয়টি প্রতিরোধে এবার জোরালো পদক্ষেপ নেয়া হবে। আসন্ন নির্বাচনে অবৈধ অর্থের লেনদেন বন্ধ করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও (এনবিআর) নজরদারি বাড়িয়েছে। বিশেষভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমদানি-রপ্তানির মাধ্যমে দেশে অবৈধ অর্থ নিয়ে এসে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে ব্যবহার হচ্ছে কি না তা কঠোরভাবে খতিয়ে দেখছে প্রতিষ্ঠানটি।
নির্বাচনে কোনো অর্থপাচারকারী বা রাজস্ব খেলাপি যাতে প্রার্থী হতে নাপারেন; সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দরসহ সব স্থলবন্দরে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি-রপ্তানির নামে অবৈধ আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, এসব আমাদের নিয়মিত কাজের অংশ। তবে স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে নির্বাচনের আগে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে যেকোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে এনবিআর। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বলেন, অতীতে দেখা গেছে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে এবং নির্বাচনকেন্দ্রিক সন্ত্রাসী কার্যক্রম ঘটাতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে দেশে অবৈধ অর্থ, অস্ত্র ও গোলাবারুদ আনা হয়েছে। এনবিআরের উচিত এ বিষয়ে নজদারি বাড়ানো।