" />
শারদীয় দুর্গোৎসবের অষ্টমী তিথিতে কুমারী রূপে দেবী দুর্গার আরাধনা করলেন বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
প্রতি বছরই সবচেয়ে বড় পরিসরে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার গোপীবাগে রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠে। এবারও ছিল না তার ব্যতিক্রম।
রোববার সকাল থেকেই সবাই জড়ো হতে থাকেন রামকৃষ্ণ মিশনে। ঢাকের বাদ্য, কাঁসার ঘণ্টা, শঙ্খের আওয়াজ আর উলুধ্বনিতে মুখরিত হয় পূজা প্রাঙ্গণ, চলে ভক্তি গীতি। এছাড়া সকাল থেকেই দেবী দুর্গার আরাধনায় মণ্ডপে মণ্ডপে চলে পূজা আর চণ্ডিপাঠ।
রামকৃষ্ণ মিশনে বেলা ১১টায় শুরু হয় কুমারী পূজা, বেলা ১২টায় অঞ্জলি প্রদান ও প্রসাদ বিতরণের মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়।
রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী দেবধ্যানানন্দ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকল নারী জাতিকে সম্মান জানানোর জন্যই আমরা কুমারী পূজা করি। সাধারণত এক থেকে ১৬ বছরের মেয়েরা কুমারী পূজার উপযুক্ত। তবে তাদের অবশ্যই ঋতুমতী হওয়া চলবে না।”
শাস্ত্র মতে, মানববন্দনা, নারীর সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং ঈশ্বরের আরাধনাই কুমারী পূজার শিক্ষা। যে ত্রিশক্তিতে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি-স্থিতি ও লয়ের চক্রে আবর্তিত হচ্ছে, সেই শক্তি কুমারীতে বীজ আকারে আছে। এই বিশ্বাসেই হিন্দু ধর্মের মানুষেরা কুমারীকে দেবীদুর্গা হিসেবে আরাধনা করেন অষ্টমীতে।
সাধক রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বহু বছর আগে নিজের স্ত্রী সারদা দেবীকে মাতৃজ্ঞানে যে পূজা করেছিলেন, তারই ধারাবাহিকতায় উপমহাদেশের মিশন ও মঠগুলোতে কুমারী পূজা হয়ে আসছে।
রামকৃষ্ণ মিশনে সকালে নবপত্রিকাস্নানসহ পূজার অন্যান্য রীতি পালনের পর বেলা ১১টায় যখন কুমারী পূজা শুরু হয়, তখন মণ্ডপের প্যান্ডেলে তিঁল ধারণের জায়গা ছিল না। প্যান্ডেলে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় দুটি প্রজেক্টরের মাধ্যমে বড় পর্দায় দেখানো হয় কুমারী পূজা।
দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রামকৃষ্ণ মিশনে পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন করেন। ফলে সকাল থেকেই ছিল নিরাপত্তার কড়াকড়ি।
পূজার আগে কুমারীকে স্নান করিয়ে নতুন লাল শাড়ি, গয়না, পায়ে আলতা, ফুলের মালা এবং অলঙ্কারে সাজানো হয় দেবীরূপে। পদ্মফুল হাতে দেবী পূজার আসনে বসার পর মন্ত্রোপাঠ আর স্তুতিতে তার বন্দনা করা হয়।
পূজা শেষে রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণাত্মানন্দজী মহারাজ সাংবাদিকদের জানান, এবারের পূজায় কুমারী রূপে দেবীর আসনে ছিল শতাক্ষী গোস্বামী, তার বয়স ছয় বছর হওয়ায় শাস্ত্রমতে কুমারীর নাম ‘উমা’।
শ্যামল গোস্বামী ও রীতা গোস্বামীর মেয়ে শতাক্ষী প্লে গ্রুপের শিক্ষার্থী, তাদের বাসা ঢাকার আফতাবনগরে।
কুমারী পূজা `মাতৃভাবে মূলত ঈশ্বরেরই আরাধনা’ জানিয়ে পূর্ণাত্মানন্দজী মহারাজ বলেন, কুমারী কন্যাকে জীবন্ত প্রতিমা করে তাতে জগজ্জননীর উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। দুর্গা পূজার অষ্টমী বা নবমীতে সাধারণত পাঁচ থেকে সাত বছরের একজন কুমারীকে প্রতিমার পাশে বসিয়ে দেবীজ্ঞানে পূজা করা হয়।
“দুর্গাজ্ঞানে পূজা করে সকলের মধ্যে মাতৃভাবেরই সঞ্চার করা হয়। প্রায় সর্বজাতীয় কন্যাকেই কুমারীরূপে পূজা করা যেতে পারে। তবে স্বত্ত্বগুণসম্পন্না, শান্ত, পবিত্র, সত্যশীল এসব দৈবী সম্পদের অধিকারিণী কুমারীই জগজ্জননীর প্রতিমারূপে গ্রহণের বিধি আছে। এ পূজা যে কেবল রামকৃষ্ণ মঠই করে থাকে, তা নয়। দুর্গাপূজার অঙ্গরূপে এ পূজা অনেক আগে থেকেই প্রচলিত।”
শুক্রবার ষষ্ঠীতে দেবীর বোধনের পর শনিবার নবপত্রিকায় প্রবেশ ও স্থাপনের পর শুরু হয় মহাসপ্তমীর পূজা। রোববার সকালে কুমারী পূজা শুরুর আগে মহাঅষ্টমীর বিহিত পূজা হয়, সন্ধ্যায় হবে সন্ধিপূজা।
সোমবার মহানবমীর সকালেও বিহিত পূজা হবে এবং সন্ধ্যায় হবে সন্ধি পূজা। পরে মঙ্গলবার সকালে দর্পণ বিসর্জনের পর প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে এবারের দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।