" />
নিজস্ব প্রতিবেদক,
স্বর্ণ ব্যবসায়ী রাজিব কর রাজুকে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে আসামি রাজধানীর কোতয়ালী থানার তিন পুলিশ সদস্যকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনফেস্টিগেশন (পিবিআই)। যদিও পুলিশের বিভাগীয় তদন্তে তাদের দোষী সাব্যস্ত করে গুরুদণ্ড দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
এদিকে পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে বাদী গত মার্চ মাসে নারাজি দাখিল করলেও এ পর্যন্ত আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন নাই। ফলে আদালতে সে হয়রানি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন।২০১৩ সালের ২ মার্চ নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) এর ৪/৫ ধারায় স্বর্ণ ব্যবসায়ী রাজিব কর রাজু ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি মামলা করেন।মামলায় রাজধানীর কোতয়ালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান, এসআই জলিল ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ফরিদ ভূঁইয়াকে আসামি করেন।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের তৎকালীন বিচারক (বর্তমানে বিচারপতি) কেএম ইমরুল কায়েশ বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনফেস্টিগেশন (পিবিআই)কে তদন্তের নির্দেশ দেন।মামলায় অভিযোগ, ২০১৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি রাত আড়াইটার দিকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই এসআই মিজান ও এএসআই ফরিদ ভূঁইয়া সাদা পোশাকে ভিকটিমের ৬৯ নম্বর গোয়ালনগর কোতয়ালীর বাসায় সিলিং ভেঙে ঢুকে। কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আসামিরা ভিকটিম রাজুকে হাতকড়া পরিয়ে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে। ভিকটিমের বাসা তল্লাশি করে ১১ লাখ ৫৮ হাজার ৩৩৮ টাকার স্বর্ণ এবং তার মায়ের চোখ অপারেশন করার ৪১ হাজার ৩০০ টাকা ছাড়াও বাসা থেকে মোবাইল, ল্যাপটপ কোতয়ালী থানায় নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে আসামিরা তার ওপর অমানসিক নির্যাতন চালায়। নির্যাতনে ভিকটিম অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে চিকিৎসা শেষে তাকে আবার থানায় নিয়ে আসে আসামিরা। তাকে পাঁচ লাখ টাকা দিতে বলে পুলিশ। টাকা না দিলে অস্ত্র ও মাদক মামলার আসামি বানিয়ে ক্রসফায়ারের হুমকি দেওয়া হয়। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আসামিকে আবারও নির্যাতন করে পুলিশ কর্মকর্তারা। নির্যাতনে গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়ায় পরদিন ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজুকে মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর থানায় এনে দ্বিতীয় দফায় নির্যাতন করে এসআই জলিল। হাতের নখ উপড়ে ফেলা হয়। বাম হাত ভেঙে দেওয়া হয়। বাম পায়ে প্রচ- আঘাত দিয়ে অচল করে ফেলা হয়। এরপর পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। টাকা দিলে ছেড়ে দেওয়া হবে, না দিলে মাদক মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেয়। খবর পেয়ে রাজুর বড় ভাই আশিষ কর এসআই মিজানের হাতে দুই লাখ টাকা তুলে দেন। পরে ১১ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টায় তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। তবে সাদা কাগজে নাম-ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর লিখে রাখেন। এরপর পুলিশ হুমকি দিয়ে বলে, তুই যদি মুখ খুলিস এবং তোকে যদি তাঁতীবাজার এলাকায় দেখতে পাই তবে মেরে ফেলব।
আসামিদের নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে ভিকটিম প্রায় এক বছর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরে এ বিষয়ে ভিকটিম কোতয়ালী থানায় মামলা করতে যান। কিন্তু থানা কর্তৃপক্ষ মামলা না নিয়ে তাকে ঘুরাতে থাকেন। শেষে আদালতে মামলা করেন।
অন্যদিকে বাদী এ বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে আবেদন করলে অভিযোগটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় এবং পুলিশ সদর দপ্তরে ব্যবস্থা নিতে বলে। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে বিভাগীয় মামলায় অভিযোগ প্রমান হওয়ায় ডিএমপি আসামি মিজানুর রহমান, মো. আব্দুল জলিল এবং ফরিদ মিয়াকে একটি ইনক্রিমেন্ট সমপরিমান টাকা আগামী ৫ বছরের জন্য কর্তনের আদেশ দেয়।
আর আদালতে করা মামলায় পিবিআই ঢাকা মেট্টো (উত্তর) এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিয়া কুতুবুর রহমান চৌধুরী অভিযোগ প্রমানিত হয়নি মর্মে ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করেন।পুলিশ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর বাদী গত ২ মার্চ আদালতে নারাজি দাখিল করেন। নারাজি দাখিলের দিই বাদী জবানবন্দি গ্রহণের বিধান থাকলেও সেদিনসহ জবানবন্দি গ্রহণের জন্য চারটি ধার্য্য তারিখ গেলেও আদালত জবানবন্দি গ্রহণ করেন নাই।
এ সম্পর্কে বাদীর অভিযোগ পিবিআই সম্পূর্ণরূপে আসামিদের পক্ষ নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। এখানে তদন্ত কর্মকর্তা শ্রী কৃষ্ণ মন্ডল নামে এক ব্যক্তি আমাকে স্বর্ণ কেনার জন্য টাকা দেয়। তার অভিযোগের ভিত্তিতে আমার বাসায় আসামিরা আসে বলেছেন। যে ব্যক্তিকে আমি চিনি না, দেখিনিও নি। সে ব্যক্তির সঙ্গে আমার একটি আপোষ নামা দেখানো হয়েছে। যা জাল-জালিয়াতির মধ্যেমে সৃজন করেছেন। মামলা তদন্তাধীন অবস্থায় একাধিক জায়গা থেকে টাকা নিয়ে আপোষের প্রস্তাব করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিজেই বলেছে, ২৫ লাখ টাকা নিয়ে দেই, আপোষ করে ফেলেন।