নিজস্ব প্রতিবেদক,
স্টার মেকার অ্যাপসে গান গেয়ে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে মো. মাসুদ রানা নামের এক প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো ইনভেটিগেশন (পিবিআই)। সোমবার বিকালে পিবিআইয়ের সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্টার মেকার অ্যাপস জি সাকিব খান নামের একটি আইডি দিয়ে গান গেয়ে নারীদেরকে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার ঘটনায় জড়িত এক প্রতারককে পাবনা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই যশোর জেলার একটি দল।মাসুদ রানা ওরফে সাকিব খান নিজেকে সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন পরিচয়ে গান পরিবেশন করতো। ভুক্তভোগী ওই গানে কমেন্ট করলে সাকিব খানের সাথে ভুক্তভোগীর পরিচয় হয়। সাকিব খান নিজেকে সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন এবং বাড়ী রাজশাহী বলে পরিচয় দেয়। স্টার মেকার জি সাকিব খান (ফাহিম) নামের আইডির মাধ্যমে ভুক্তভোগীর সাথে অন-লাইন বন্ধুত্ব হয়। ভুক্তভোগী একটি সরকারী প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক হওয়ায় সাকিব খান তাকে যোগাযোগ করে আরো ভালো চাকরির লোভ দেখিয়ে দুই লাখ টাকা নগদ একাউন্টের মাধ্যমে নেয়। পরবতীর্তে সাকিব খান আরো টাকা দাবি করলে ভুক্তভোগী বুঝতে পারে তিনি প্রতারণার স্বীকার হয়েছে। তখন ভুক্তভোগী ওই টাকা ফেরত চায়। তখন সাকিব খান ওই টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে ভুক্তভোগীকে আশ্বস্ত করে। চলতি বছরের ৭ জুলাই যশোর চাঁচড়া মোড়ে ভুক্তভোগীকে দেখা করতে বলে। তখন ভুক্তভোগী ওই জায়গায় গেলে গেলে চাঁচড়া মোড়ের মধুমতি হোটেলে বসে সাকিব খান ভুক্তভোগীকে জুস খেতে বলে। জুস খাওয়ার পর ভুক্তভোগী কোন কিছু না বুঝেই সাকিব খানের কথা মত তার ব্যবহৃত একটি স্বর্ণের চেইন, এক জোড়া স্বর্ণের কানের দুল, একটি স্বর্ণের আংটি যার দাম দুই লাখ ৪১ হাজার টাকা ও একটি সাম্যসাং মোবাইল সাকিব খানকে দিয়ে দেয়। সাকিব খান ভুক্তভোগীর সামনে থেকে স্বর্ণালংকার ও মোবাইল নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে চলে যায়।
ভুক্তভোগী তখন বুঝতে পারে মো. মাসুদ রানা ওরফে সাকিব খান তার সাথে প্রতারণা করেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ১৫ জুলাই যশোর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপারের কাছে একটি আবেদন করে। তখন পিবিআইয়ের এসপি ছায়া তদন্তের জন্য উপপরিদর্শক (এসআই) রেজোয়ানকে নির্দেশ দেন।
এসআই রেজোয়ান ওই আবেদনটির অনুসন্ধানের সময়ে জানতে পারে, মো. মাসুদ রানা ওরফে সাকিব খান পেশায় একজন কৃষক। তিনি এসএসসি পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। তিনি পেশায় কৃষক হলেও মূলত স্টার মেকার অ্যাপে আর্মি ক্যাপ্টেন পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন মেয়ের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে। পরবর্তীতে ভাল চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকর নিয়ে নেয়। এরআগেও তিনি একাধিক মেয়ের সাথে প্রতারণা করে। তিনি ভুক্তভোগীর সাথে একইভাবে সখ্যতা গড়ে তোলেন। আর ভুক্তভোগীকে বেশি বেতনের চাকরি দেওয়ার লোভ দেখিয়ে নগদ ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দুই লাখ টাকা আর দুই লাখ ৪১ হাজার টাকা দামের স্বর্ণালংকার নিয়ে নেয়। তিনি একজন বড় মাপের প্রতারক বলে জানা যায়।
ওই অভিযোগটি তদন্তের সময়ে মাসুদ রানা ওরফে সাকিব খান ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সত্যতা পাওয়া গেলে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদারের সঠিক তত্ত্ববধান ও দিক নির্দেশনায়, পিবিআইয়ের যশোর জেলার পুলিশ সুপার রেশমা শারমিনের নেতৃত্ত্বে এসআই রেজোয়ান, এসআই শরীফ এনামুল হক, এসআই মো. জিয়াউর রহমান, এসআই রতন মিয়া সহ যশোরের আভিযানিক দল গত ২ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ১১ টার সময়ে পাবনার ভাঙ্গুরা থানার থানা রোডের ওমর ট্রেডার্সের দোকানের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময়ে তার কাছ থেকে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ব্যবহৃত সাম্যসাংয়ের এম-১০ মডেলের মোবাইল ফোন এবং পরবতীর্তে গত ৩ সেপ্টেম্বর সাকিব খানের দেওয়া স্বীকারোক্তি মতে, ভুক্তভোগীর কাছ থেকে নেওয়া স্বর্ণালংকার খুলনার হেলাতলা রোডের নিউ অনিমা জুয়েলার্স থেকে ১২.৫৮ গ্রাম গলিত স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী বাদী হয়ে মাসুদ রানা ওরফে সাকিব খানের বিরুদ্ধে কোতয়ালী মডেল থানায় একটি মামলা করেন। কোতয়ালী মডেল থানার মামলা নম্বর-১৯। ধারা: ৪০৬/৪২০/৩২৮/৩৭৯ পেনাল কোড। ওই মামলাটি পিবিআই, যশোর জেলা স্ব-উদ্দ্যোগে গ্রহণ করে মামলার তদন্তভার এসআই (নিঃ) রেজোয়ানের কাছে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রেজোয়ান আসামি মাসুদ রানাকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত আসামি ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করলে ৩ সেপ্টেম্বর আদালতে সোপর্দ করা হয়। আসামি মাসুদ রানা আদালতে ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
গ্রেপ্তারকৃত মো. মাসুদ রানা ওরফে সাকিব খাঁন পাবনা জেলার ভাঙ্গুরা থানার গোনাইগাছি গ্রামের মো. মফিজ উদ্দিনের ছেলে।