" />
ভোটের হিসাব কষছে আওয়ামী লীগ নিচ্ছে নির্বাচনের প্রস্তুতি
# কেউ প্রকাশ্যে আর কেউ নীরবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলছে বহুমুখী জল্পনা-কল্পনা
এসএম শামসুজ্জোহা, ঢাকা থেকে :
দেশে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। মাঠের তৎপরতা বাড়িয়ে ভোটাদের দরজায় কড়া নাড়ছে রাজনৈতিক দলগুলো। সরকারবিরোধী প্লাটফর্মে ছোট দলগুলো জোটবদ্ধ হচ্ছে। ভোটকেন্দ্রিক উত্তাপ ক্রমশ ছড়াচ্ছে রাজপথে। এর মধ্যে হ্যাটট্রিক জয়ী আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের টানা তৃতীয় মেয়াদের পঞ্চম বর্ষের শেষার্ধে দাঁড়িয়ে সাফল্য-
সীমাবদ্ধতার মাঝে থেকে নির্বাচনী হিসাব কষছে দেশের প্রাচীনতম এই দলটি।
ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো যে যার মতো প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। কেউ প্রকাশ্যে আর কেউ নীরবে নির্বাচনে ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর ভোটাররা কিছুটা হতাশা নিয়ে নীরবে হিসাব কষছে বিগত সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকান্ড নিয়ে। এসব মিলিয়ে ভোটারদের সামনে একটি গুরত্বপূর্ণ সময় অপেক্ষা করছে। সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলছে বহুমুখী ভোটের হিসাব-নিকাশ। কেমন নির্বাচন হবে- তা নিয়ে জনগণের মধ্যেও রয়েছে জল্পনা-কল্পনা। নির্ভার থাকতে ছক আঁকছে টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ।
জেতার পথ খুঁজছে চলতি সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও চায় বড় বিজয়। অন্য দলগুলোও পিছিয়ে নেই স্বার্থের হিসাবে। আবার সময়ের
পরিবর্তনে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয় তা নিয়েও ভাবনা রয়েছে সব দলের। সব বাধা পেরিয়ে সরকার যতটা অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং জীবনমানের পরিবর্তন করেছে তা অতীতের কোনো সরকার করতে পারেনি বলছেন বিশ্লষকরা।
তবে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, সরকার সফল। যে কারণে দেশের মানুষ আবারও ভোটের মার্কা হিসেবেবেছে নেবে নৌকাকে। জানা গেছে, সেপ্টেম্বর থেকে সরকারের বিগত সময়ের উন্নয়নকে সামনে রেখে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়ে চলবে ভোটের আগ পর্যন্ত। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে-
এমন প্রতিশ্রæতি নিয়েই জনগণের দোরগোড়ায় যাবে কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল আওয়ামী লীগ। দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে- মানুষ তাদের উন্নয়নকে গ্রহণ করেছে। রাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে আগামী নির্বাচনে ভোটাররা নৌকার পক্ষে থাকবে বলেই প্রত্যাশা
ক্ষমতাসীনদের।
আগামী নির্বাচনে বিএনপির আসা বা না আসা নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাচ্ছে না আওয়ামী লীগ। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের চাপে কিছুটা অস্বস্তিতে আছে দলটি। তবে তারা বিশ্বাস করে, শেষ পর্যন্ত দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে এবং বিএনপি সেই নির্বাচনে আসবে। তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপির যে আন্দোলন ও অবস্থান; তা নিয়েও আওয়ামী লীগ বিচলিত নয়। কেননা সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে ঘুরে যাওয়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিংবা মার্কিন প্রতিনিধি কেউই তত্ত¡াবধায়ক সরকার ইস্যুতে কোনো
কথা বলেননি বলে দাবি করে আসছে দলটি।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেন, দেশ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সংবিধানের মধ্যে থেকেই তা হবে। বিএনপি ভোট ঠেকাতে পারবে না। সেই সক্ষমতা তাদের নেই। আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এখন নির্বাচন নিয়েই ভাবছে। বিএনপি কী করবে না করবে তা নিয়ে ভাবার সময় নেই। বর্তমান সরকারের ধারাবাহিকতার কারণেই গত বছর পদ্মা সেতুর মতো সাহসী অবকাঠামো চালু করা সম্ভব হয়েছে। ঢাকার বুকে চলছে মেট্রোরেল। ওদিকে কর্ণফুলী টানেলও প্রায় প্রস্তুত। গত বছর একই দিনে উদ্বোধন করা হয় ১০০ সেতু এবং ১০০ সড়ক। চলছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কর্মযজ্ঞ। তাই অনেকেই বলেন, ২০২২ আক্ষরিক অর্থেই ছিল, অবকাঠামো উন্নয়নের বছর। কেন্দ্র থেকে প্রান্ত সর্বত্র ডিজিটাল সেবা আজ দোরগোড়ায়। তবে গত চার বছর মসৃণ ছিল না সরকারের চলার পথ। একদিকে করোনার থাবা অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞা। যার রেশ চলছে এখনো। সেই ধকলে
বেড়ে গেছে জ্বালানির দাম, বেড়েছে আমদানি ব্যয়ও। যার প্রভাব গিয়ে পড়ছে ভোক্তার পকেটে। এত কিছুর পরও স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে দেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। তাইতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের বর্তমান মেয়াদের চতুর্থ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বলেছেন, ‘শিল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। জেন্ডার সমতা এবং নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে।’
এদিকে সরকারের উন্নয়ন আর অগ্রগতিকে সাধুবাদ জানিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মুদ্রার একদিকে যেমন উন্নতি আছে; তেমনি উল্টো পিঠে আছে নানা হতাশার গল্প। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, এই সরকারের শেষ বছরে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারা। বিশ্লেষকদের মতে, জনগণের মনের ভাষা বুঝেছিলেন বলেই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না’। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার আগামীতেও জনগণের মনের ভাষা বুঝেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে পরিচালিত হবে; সেটাই চায় কোটি বাঙালি।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, সেপ্টেম্বর থেকে আমরা মাঠে নামব বিষয়টি এমন নয়। আমরা তো মাঠেই আছি। আমরা সারা বছরই ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে মাঠেই আছি। তবে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাদের কেন্দ্রীয় নেতারা মানুষের কাছে যাচ্ছেন। উন্নয়নের কথা বলছেন। বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্রে বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগ জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে প্রতিবার ক্ষমতায় এসেছে। এবারও জনগণের ভোটেই নির্বাচিত
হবে।’ ##