নিজস্ব প্রতিবেদক,
ইরাক প্রবাসী ছেলের নির্যাতন সইতে না পেরে মা খতেজা বেগম অপহরণকারী চক্রের বিকালে ছয় লাখ টাকা দিয়েছেন। খতেজা বেগম ছেলেকে নির্যাতন করছে এই দৃশ্যের ভিডিও ইমোতে লাইভে দেখে ১২ টি বিকাশ নম্বরে ছয় লাখ টাকা দিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো ইনভেটিগেশনের (পিবিআই) ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) ড. খুদরাত ই খুদা।
এরআগে ইরাকে বাংলাদেশী এক যুবককে নির্যাতন করে ছয় লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় আট জনকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। রবিবার দুপুরে তাদেরকে বাংলাদেশের বরিশাল, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ, মাগুরা এবং খুলনা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পিবিআইয়ের ভাষ্য, ভুক্তভোগী ইরাক প্রবাসী মোসলেম মোল্লা নৈবাবগঞ্জ থানার দড়িকান্দা গ্রামের তোতা মিয়ার ছেলে মোসলেম মোল্লা । তিনি ২০১৬ সালে জীবিকার তাগিদে কাজের উদ্দশ্যে ইরাক গিয়ে এমন ঘটনার শিকার হন। এ ঘটনার পর ২০২১ সালে মোসলেম মামলা করেন। এ মামলায় এখন পর্যন্ত আট জনকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই।
সোমবার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই এর সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানাব ঢাকা জেলা পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. কুদরাত-ই-খুদা।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- আলী হোসেন, শামীম, শিরিন সুলতানা, মোহাম্মদ ঘরামী, রবিউল ঘরামী, শাহিদা বেগম, সাহনাজ আক্তার লিপি ও আকবর সরদার ।
পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার বলেন,অপহরণকারীরা মোসলেমকে নির্যাতন করে ইমোর মাধ্যমে তার মাকে ভিডিও দেখিয়ে টাকা আদায় করতো। তারা তার মাকে ভিডিও দেখিয়ে বলতো টাকা না দিলে তাকে হত্যা করবে। এ ঘটনায় মোসলেমের মা চক্রটিকে ১২ টি বিকাশে তিন লাখ টাকা পাঠান।
যেভাবে মোসলেমকে ইরাকে নিয়ে অপহরণ করা হয়:
মুলত মোসলেম ইরাকে গিয়েছিলেন কাজের তাগিদে। সেখানে তিনি কাজ করার ফাঁকে চাকরি হারান। এক সময় বেকার হয়ে পড়েন। এসময় ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে সেলিম মিয়া নামের একজনের সাথে তার পরিচয় হয়। তিনি তাকে ভালো বেতনের কাজের প্রলোভন দেখিয়ে আনোয়ার, শাহনেওয়াজ, রুহুল আমিন, মনির, হাসিবুর, সাব্বির দের হাতে তুলে দেন। মোসলেমকে নিয়ে তারা একটি আবদ্ধ রুমে আটক করে রাখেন। এরপর তার সাথে থাকা দুই হাজার ইউএস ডলার বাংলাদেশী মুদ্রায় (প্রায় ২ লাখ টাকা ও একটি দেড় লাখ টাকা মূল্যের আইফোন ছিনিয়ে নিয়ে তাকে নির্যাতন করতে থাকেন। তিন দিন ধরে নির্মম, বর্বর নির্যাতনের পর সেই নির্যাতনের দৃশ্য অ্যান্ডরয়েড মোবাইল ফোনের ইমো অ্যাপের মাধ্যমে লাইভ ভিডিও কলে ভুক্তভোগী মোসলেমের মা খতেজা বেগমকে দেখানো হয়। পরে তারা ১১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। মোসলেমের মা খতেজা বেগম ছেলের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তাদের পাঠানো ১২ টি বিকাশ নাম্বারে ২৬ টি ট্রাঞ্জেকশনের মাধ্যমে ছয় লাখ টাকা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে ড. কুদরাত ই খুদা বলেন,এ ঘটনায় আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কিন্তু আরো আসামি ইরাকে অবস্থান করছে। তারা হলেন- আনোয়ার, শাহনেওয়াজ, রুহুল আমিন, মনির, হাসিবুর, সাব্বির ছাড়াও আরো অনেকে। ইরাকে অবস্থান করলেও বাংলাদশে তাদের পরিবারের সদস্যরা এই মুক্তিপণের টাকা বিভিন্ন বিকাশ এজেন্টের দোকান ও নিজেদের পারসোনাল বিকাশ নম্বর থেকে ক্যাশ আউট করে নিতো। শাহনেওয়াজ অপহরণ চক্রের দলনেতা বলে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলেও জানান তিনি