নিজস্ব প্রতিবেদক,
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড—এনবিআরের যুগ্ম কমিশনার মাসুমা খাতুনকে অপহরণের পেছনে তার সাবেক স্বামী হারুন-অর রশিদের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন—র্যাব।
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা হারুন-অর রশিদের রাগ-ক্ষোভ ছিল স্ত্রী মাসুমা খাতুনের ওপর। তারই জের থেকেই মাসুমা খাতুনকে অপহরণের পরিকল্পনা করেন তিনি। পরিকল্পনায় ব্যবহার করা হয় ভুক্তভোগী মাসুমার সাবেক ড্রাইভার মাসুদকে। মাসুদের নেতৃত্বে অপহরণ মিশনে অংশ নেয় মোট সাতজন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী হারুন কর্তৃক হাতিরঝিলে ৫০ হাজার টাকায় একটি বাসা ঠিক করা হয়। তবে অহপরণ করে মাসুমাকে ওই বাসায় নেওয়া সম্ভব না হওয়ায় নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এলাকার একটি গ্যারেজে নেওয়া হয়। সেখানে গাড়ীতেই তাকে ব্যাপক মারধর করা হয়।
পরদিন মাসুমাকে নিয়ে অপহরণকারীরা রাজধানীর মাদারটেক এলাকায় যাওযার পর সেখানে ওই নারী কর্মকর্তার চিৎকারে এলাকাবাসীর হাতে আটক হয় তিনজন। পালিয়ে যায় সাবেক ড্রাইভার মাসুদসহ চারজন।
এনবিআর কর্মকর্তা মাসুমাবে অপহরণ ও নির্মম নির্যাতনের ঘটনায় রমনা থানায় দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি মাসুম ওরফে মাসুদসহ জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র্যাব।
র্যাব কর্তৃক গ্রেপ্তাররা হলেন, মামলার প্রধান আসামি মো. মাসুম ওরফে মাসুদ, সহযোগী আব্দুল জলিল ওরফে পনুও মো. হাফিজ ওরফে শাহিন। র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-১ ও র্যাব-৩ এর যৌথ অভিযানে শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, গত ১৭ আগস্ট রাত আনুমানিক সোয়া ৮টার দিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর একজন নারী যুগ্ন কর কমিশনার রাজধানীর মগবাজার এলাকায় কতিপয় দুর্বৃত্তদের মাধ্যমে অপহৃত হন। পরবর্তীতে অপহরণের ১৮ ঘন্টা পর ১৮ আগস্ট রাজধানীর মাদারটেক এলাকা থেকে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী নিজেই তার সাবেক গাড়ি চালক মাসুদ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে রাজধানীর রমনা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। এলাকাবাসী কর্তৃক আটক তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখায় রমনা থানা পুলিশ।
তারা হলেন, সাইফুল ইসলাম, আবু বকর সিদ্দীক ও ইয়াছিন আরাফাত ওরফে রাজু। একই ঘটনায় জড়িত শান্ত পলাতক রয়েছে। ওই ঘটনায় র্যাব অপহরণের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। গত রাতে মামলার প্রধান আসামি মাসুম ওরফে মাসুদ সহযোগী আব্দুল জলিল ও হাফিজকে গ্রেপ্তার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার তিনজনের কাছ থেকে প্রাপ্ততথ্যের ভিত্তিতে কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তার মাসুদ পূর্বে ভুক্তভোগীর ব্যক্তিগত গাড়ির ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ১ আগস্ট ব্যক্তিগত শৃঙ্খলাজনিত কারণে ভুক্তভোগী তাকে চাকুরি হতে অব্যাহতি দেন। ফলে গ্রেপ্তার মাসুদের মধ্যে ভুক্তভোগীর প্রতি ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও আক্রোশের সৃষ্টি হয়।
বিপুল টাকার প্রলোভন, নগদ ৭০ হাজারে অপহরণে চুক্তি
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার মাসুদ জানায়, তাকে গাড়িচালকের চাকরি থেকে বাদ দেওয়ার পর ভুক্তভোগীর প্রথম স্বামী হারুন অর রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ভুক্তভোগী নারী কর কর্মকর্তাকে উচিত শিক্ষা দিতে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকার একটি বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য মাসুদকে বিপুল পরিমান অর্থ ও উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখায়। হারুন এজন্য অগ্রিম ৭০ হাজার টাকা দেয়। কাজের পরে তাকে আর ড্রাইভিং করতে হবে না ও উন্নত জীবন যাপন করার সকল ব্যবস্থা করে দেবে বলে আশ্বাস দেয়।
মাসুদের নেতৃত্বে সাতজন অংশ নেন। অপহরণ মিশনে গত ১৫ আগস্ট রাজধানীর সবুজবাগ এলাকায় গ্রেপ্তার মাসুদ তার পরিচিতি হাফিজ, পনু, রাজু, সাব্বির, সাইফুল ও শান্তকে পরিকল্পনার কথা জানায় ও সবাইকে টাকা ভাগ করে দেন। তারা রাজধানীর বেইলি রোড এলাকা হতে ভুক্তভোগীকে অপহরণের সিদ্ধান্ত নেন। ভুক্তভোগীর বর্তমান গাড়ি চালকের সঙ্গে গ্রেপ্তারকৃত হাফিজের সুসম্পর্ক থাকায় ভুক্তভোগীর অবস্থান গাড়ি চালক থেকে জেনে মাসুদকে জানান।
দুর্ঘটনার নাটক সাজিয়ে নারী কর কর্মকর্তাকে অপহরণ পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৭ আগস্ট রাত ৮ টার দিকে তারা রাজধানীর বেইলি রোড এলাকায় অবস্থান নেন। ভুক্তভোগী রাত সোয়া ৮টার দিকে রাজধানীর মগবাজার থেকে নিজ গাড়িযোগে বেইলি রোড এলাকায় পৌঁছালে একটি মোটরসাইকেল ও একটি রিকশা দিয়ে ভুক্তভোগীর গাড়ির সঙ্গে লাগিয়ে দিয়ে দুর্ঘটনার নাটক সাজিয়ে গতিরোধ করেন।