" /> প্রতি বছর দেশে আট হাজার ৬৮ জন নারী জরায়ূ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন – নাগরিক দৃষ্টি টেলিভিশন
শনিবার, ০১ এপ্রিল ২০২৩, ০৪:২৫ অপরাহ্ন

প্রতি বছর দেশে আট হাজার ৬৮ জন নারী জরায়ূ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন

53a96b7d 3c7c 4a13 9f71 d2c620eafbe7 min

এনডিটিভি অনলাইন ডেস্ক
নিজস্ব প্রতিবেদক
পৃথিবীব্যাপী জরায়ুমুখের ক্যান্সারের প্রবণতা কমলেও বাংলাদেশে মহিলাদের ক্যান্সারের মধ্যে জরায়ু ক্যান্সার দ্বিতীয় স্থানে আছে। গ্লোবোকন ২০২০ এর তথ্য মতে, প্রতি বছর আট হাজার ৬৮ জন মহিলার জরায়ু ক্যান্সার সনাক্ত হয় আর পাঁচ হাজার ২১৪ জনের প্রতিবছর মৃত্যু হয়। রবিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এ ব্লক অডিটোরিয়ামে সেন্ট্রাল সেমিনার সাব কমিটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সার্ভিক্যাল বা জরায়ুমুখের ক্যান্সার’ বিষয়ক সেন্ট্রাল সেমিনারে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধে এসব কথা জানানো হয়।
জরায়ুমুখের ক্যান্সার’ বিষয়ক সেন্ট্রাল সেমিনারের বৈজ্ঞনিক প্রবন্ধে সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারহানা খাতুন বলেন, পৃথিবীব্যাপী জরায়ুমুখের ক্যান্সারের প্রবণতা কমলেও বাংলাদেশে মহিলাদের ক্যান্সারের মধ্যে জরায়ু ক্যান্সার দ্বিতীয় স্থানে আছে। গ্লোবোকন ২০২০ এর তথ্য মতে, প্রতিবছর আট হাজার ৬৮ জন মহিলার জরায়ু ক্যান্সার সনাক্ত হয় এবং পাঁচ হাজার ২১৪ জনের প্রতিবছর মৃত্যু হয়। বাংলাদেশে ১৫ বছর থেকে শুরু করে প্রায় ৫৪ মিলিয়ন মহিলা জরায়ুর ক্যান্সার ঝুঁকির মধ্যে আছে। বাল্যবিবাহ, কম বয়সে বাচ্চা নেওয়া, ২ বা ৩ এর অধিক বাচ্চা নেওয়া, ধুমপান ইত্যাদি জরায়ু মুখের ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। জরায়ু ক্যান্সারের প্রধান লক্ষণ হলো অনিয়মিত রক্তস্রাব, সহবাসে রক্ত যাওয়া, অতিরিক্ত সাদা স্রাব, গন্ধযুক্ত সাদা স্রাব যাওয়া ইত্যাদি। জরায়ুর ক্যান্সারে চিকিৎসা নির্ভর করে কোন পর্যায়ে রোগটি সনাক্ত হয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় সনাক্ত হলে অপারেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায় এবং চতুর্থ পর্যায়ের জরায়ুর ক্যান্সার রেডিওথেরাপি মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায়। কিন্তু আমাদের দেশে জরায়ুর ক্যান্সারের অপারেশন করার জন্য গাইনী অনকোলজি বিশেষজ্ঞ আরো প্রয়োজন এবং রেডিথেরাপির মেশিনও আরো বেশি দরকার। তাই ক্যান্সার হওয়ার আগেই এই রোগ ক্যান্সার পূর্ববর্তী অবস্থায় সনাক্ত করতে পারলে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া সম্ভব।

আর জরায়ুমুখের ক্যান্সার’ বিষয়ক সেন্ট্রাল সেমিনারে বিএসএমএমইউর উপাচার্য মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দ্রুত চিহ্নিত করাই জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায়। বাল্য বিবাহ বন্ধ এবং মহিলাদের যাতে ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে বিবাহ হয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএসএমএমইউয়ে জরায়ুমুখের ক্যান্সার চিহ্নিতকরণ ও চিকিৎসার সবধরণের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে এর সুফল সবার কাছে পৌঁছাতে হলে এই সেবা কার্যক্রম দেশব্যাপী জোরদার করতে হবে।
বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, জরায়ুমুখের ক্যান্সার চিকিৎসায় গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজি বিভাগ, অবস এন্ড গাইনি বিভাগ, ভাইরোলজি বিভাগ, প্যাথলজি বিভাগ, অনকোলজি বিভাগ, রেডিওলজি বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্টদের সম্বনিতভাবে কাজ করতে হবে। জরায়ুমুখের ক্যান্সার যথা সময়ে চিহ্নিত করার লক্ষ্যে সারা দেশে স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম আরো জোরদার করতে হবে।
সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারজানা শারমিন তার ‘ইভালুয়েশন অফ পোস্ট মেনোপজাল ব্লিডিং’ শীর্ষক প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, মহিলাদের মাসিক বন্ধ হবার পরও রক্তক্ষরণ হলে তাকে পোস্ট মেনোপজাল ব্লিডিং বলে এবং এটা নারী স্বাস্থ্যের জন্য একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়। সাধারণত ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে এই রক্তক্ষরণের কারণটা স্বাভাবিক কিন্তু ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে এটা জরায়ুর ক্যান্সারের জন্য হয়ে থাকে। তাই প্রত্যেক মহিলাকে মাসিক বন্ধ হবার পরও এরকম রক্তক্ষরণ হলে ডাক্তারের পরামর্শ মতো পরীক্ষা নিরীক্ষা ও চিকিৎসা নেয়া উচিত। কারণ মহিলাদের জরায়ুর ক্যান্সার জটিলতা বা সমস্যা তৈরি করবার আগেই ধরা পড়লে প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই যেসব মহিলাদের জরায়ুর ক্যান্সারের ঝুঁকিতে পড়বার সম্ভাবনা রয়েছে, তাদেরকে মাসিক বন্ধ হবার পরও নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শে ও ফলোআপে থাকা উচিত।
কনসালটেন্ট ডা. মনোয়ারা বেগম জরায়ু মুখ ক্যান্সার সনাক্তকরণ ও প্রতিকার বিষয়ে তিনি বলেন, জরায়ুমুখ ক্যান্সার সম্পূর্ণ প্রতিরোধ করা যায়। ক্যান্সার সনাক্তকরণ পরীক্ষায় মাধ্যমে যেহেতু আমাদের দেশে জরায়ু মুখ ক্যান্সার দ্বিতীয় অবস্থানে আছে তাই জরায়ু মুখ ক্যান্সার সনাক্তকরণের জন্য ৩০ বৎসরের উর্ধ্বে সবাইকে সচেতন করতে হবে এবং ভায়া পরীক্ষা করায় মাধ্যমে জরায়ু মুখ ক্যান্সার সনাক্ত করা যায় তা জানাতে হবে। ভায়া ছাড়াও এইচপিভি ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে এই ক্যান্সার চিহ্নিত করা যায়। জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধে সমস্ত বালিকাদের (৯ থেকে ১৪ বৎসরের মধ্যে) এইচপিভি ভ্যাকসিন দিতে হবে এবং বাল্য বিবাহ বন্ধ করতে হবে এবং দুইয়ের বেশি সন্তান নিতে নিষেধ করতে হবে। জরায়ু মুখ ক্যান্সার সনাক্তের জন্য এইচপিভি ভ্যাকসিন কার্যক্রম সরকারের ইপিআই কর্মসূচীতে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।
সেমিনারে বিএসএমএমইউর উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) মো. মনিরুজ্জামান খান প্রমুখসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন স্তরের শিক্ষক, কনসালটেন্ট, চিকিৎসক ও রেসিডেন্টরা উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিএসএমএমইউ সেন্ট্রাল সাব কমিটির চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সেন্ট্রাল সাব কমিটির সদস্য সচিব নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহ সবুজ ও মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফাতিমা জোহরা। সেমিনারে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অবস এন্ড গাইনি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারজানা শারমিন, গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারহানা খাতুন, কনসালটেন্ট ডা. মনোয়ারা বেগম।

এনডিটিভি,এসইই


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুকে আমরা