" /> ঋণের সুদহারে পরিবর্তন আসছে : গভর্নর – নাগরিক দৃষ্টি টেলিভিশন
শনিবার, ০১ এপ্রিল ২০২৩, ০৪:৫৭ অপরাহ্ন

ঋণের সুদহারে পরিবর্তন আসছে : গভর্নর

image 82405 1678632785

এনডিটিভি অনলাইন ডেস্ক

ঢাকা, ১২ মার্চ, ২০২৩ (বাসস): বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, ব্যাংক ঋণের সুদহারের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসছে। বিদ্যমান বেঁধে দেয়া সুদহার তুলে দিয়ে বাজার-ভিত্তিক রেফারেন্স রেট বিকশিত করার কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া বিনিময় হার বাজার ভিত্তিক করার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও কাজ করছে সংস্থাটি।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) আয়োজিত বিজনেস সামিটের দ্বিতীয় দিন আজ রোববার ‘লং টার্ম ফাইন্যান্স’ শীর্ষক প্লেনারি অধিবেশনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক ছিলেন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান বুর্মার এন্ড পার্টনার্স (বাংলাদেশ) লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ম্যানেজিং পার্টনার খালিদ কাদির, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আলী রেজা ইফতেখার, সৌদি এক্সিম ব্যাংকের পরিচালক (আন্তর্জাতিক সহযোগিতা) ইয়াহিয়া আল হার্দী ও নিউ ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের (এনডিবি) মহাপরিচালক ড. ডি জে পানডিয়ান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান অধিবেশন সঞ্চালনা করেন এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শান্তা এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট এর ভাইস চেয়ারম্যান ড. আরিফ রহমান।
আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, আমরা বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করছি। একাধিক হারও বাদ দেবো। শীঘ্রই একটি বাজার-ভিত্তিক বিনিময় হার ব্যবস্থা দেখতে পাবেন। এছাড়া আমরা সুদের হার নিয়ে কাজ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে আমানতের সুদের হারের ফ্লোর এবং সিলিং প্রত্যাহার করা হয়েছে। একটি করিডোর দেওয়া হবে সুদ হারের, তা হবে বাজারভিত্তিক রেফারেন্স রেট অনুযায়ী। খুব শীঘ্রই আমরা এই নতুন উদ্যোগটি চালু করতে সক্ষম হবো। খেলাপি ঋণ নিয়ে গভর্নর বলেন, ঋণখেলাপি কমাতে আমরা উদ্যোক্তাদের ঋণের বদলে গ্যারান্টি দেবো। আর উদ্যোক্তারা শেয়ারবাজার থেকে বিনিয়োগ তুলবে। ব্যাংক গ্যারান্টি থাকলে বিনিয়োগকারীরা আশ্বস্ত হবেন, অন্যদিকে যারা টাকা নিচ্ছেন তাদের মধ্যে খেলাপির মনোভাব কমে আসবে। বন্ড মার্কেটকে শক্তিশালী করার উপর জোর দিয়ে রউফ তালুকদার বলেন, বন্ড মার্কেট শক্তিশালী করতে পারলে বাজারে বিনিয়োগের ধারা বৃদ্ধি পাবে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়ন ব্যবস্থা টেকসই নয়। কারণ দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের ৯৯ শতাংশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান করে থাকে। মূলত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্বল্পমেয়াদী অর্থ নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করে থাকে। এ বিষয়টি হচ্ছে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির অন্যতম এটি একটি কারণ।
অধিবেশনে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেন, আমাদের পুঁজিবাজারে আরও অনেক অনেক বেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী প্রয়োজন। এখানে যত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী রয়েছে, তা যথেষ্ট নয়। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বাড়লে আমাদের পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আকৃষ্ট হবেন এবং বিনিয়োগ বাড়বে।
পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রণমূলক সংস্কারের জন্য পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য করহার যৌক্তিক করতে হবে। ছোট পুঁজির কোম্পানিগুলোর জন্য কর হার যৌক্তিক করতে হবে। অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য কোম্পানিগুলোকে প্রণোদনা দিতে হবে। তথ্য প্রকাশের প্রয়োজনীয়তার যৌক্তিকতা তুলে ধরেন তিনি।
আসিফ ইব্রাহিম বলেন, আমাদের পুঁজিবাজারে ডেরিভেটিভস মার্কেট চালু করতে কাজ চলছে। এটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডেরিভেটিভস মার্কেট চালু করতে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ কাজ করে যাচ্ছে। আর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) রিয়েল এস্টেট ডেরিভেটিভ মার্কেট (আরইআইটি) নিয়ে কাজ করছে।
ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার বলেন, খেলাপি ঋণ ব্যাংক খাতের ক্যান্সার। খেলাপি ঋণ ব্যাংক খাতে ক্ষতি সৃষ্টি করে। আমনতকারীদের আমনতকে লুস করে ফেলে। ব্যাংকগুলোর গুড গভর্নেন্সের কারণে খেলাপি ঋণ বাড়তে থাকে। তাই আমানতকারী ও শেয়ার হোল্ডারদের রক্ষা করতে খেলাপি ঋণ বাড়তে দেয়া উচিত না।
অনুষ্ঠানে বিএসইসি’র কমিশনার শেখ শামসুদ্দীন আহমেদ বলেন, একটি গতিময় ও স্থিতিশীল পুঁজিবাজার গড়ে তুলতে অনেক প্রকল্প গ্রহণ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। আমরা সব খাতেই প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর পথে রয়েছি। কিছু কাজ হয়েছে, আরো কাজ হচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কোনো সুবিধা নিতে চাইলে বিএসইসি তাদের স্বাগত জানাবে।
বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান বুর্মার এন্ড পার্টনার্স (বাংলাদেশ) লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ম্যানেজিং পার্টনার খালিদ কাদির বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে যে অবস্থানে রয়েছে, এতে মিনি চায়না হিসেবে পরিচিত হতে পারে। কারণ এ দেশে সব ধরণের ব্যবসার উৎপাদন কার্যক্রম চালানো সম্ভব। এছাড়া আমাদের দেশে কেবল সস্তা কর্মী নয়, পর্যাপ্ত সংখ্যক কর্মীর চাহিদা মেটানোর সক্ষমতা রয়েছে। কারণ অনান্য দেশে সস্তা কর্মী থাকলেও পর্যাপ্ত সংখ্যক কর্মীর প্রয়োজনীয়তা মেটানোর সক্ষমতা নেই। এটাই হলো বাংলাদেশে বিনিয়োগের অন্যতম সুযোগ।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশে বিনিয়োগের ৯৯ শতাংশ অর্থ আসে ব্যাংকসহ নানা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে। মাত্র ১ শতাংশ অর্থের জোগান দেয় শেয়ারবাজার। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সৃষ্টিতে একটি শক্তিশালী শেয়ারবাজারের কোনো বিকল্প নেই।

এনডিটিভি,এসইই


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুকে আমরা