" />
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
বাংলাদেশে বর্তমানে দুই কোটি মানুষ কিডনি রোগে ভুগছেন, তারমধ্যে ৪০ থেকে ৫০ লাখ শিশু কিডনি রোগে ভুগছে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি (শিশু কিডনি) বিভাগ। পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি (শিশু কিডনি) বিভাগের ভাষ্য,সারা বিশে^ বর্তমানে প্রায় ৮৫০ মিলিয়ন মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত রয়েছেন। আর প্রতি বছর কিডনী রোগে মারা যায় ৪১ লাখ (২৪ লাখ মানুষ ধীর গতিতে আকস্মিক কিডনি বিকলে মারা যায় আরো ১৭ লাখ মানুষ)।
বিএসএমএমইউ বিশ্ব কিডনি দিবস পালিত হচ্ছে । বৃহস্পতিবার বিএসএমএমইউর পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি (শিশু কিডনি) বিভাগের উদ্যোগে বিশ্ব কিডনি দিবস উপলক্ষ্যে র্যালিসহ নানা আয়োজনের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে সকাল নয়টায় বিএসএমএমইউর বটতলা থেকে বিএসএমএমইউর উপাচার্য মো. শারফুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়। র্যালিটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অংশ প্রদক্ষিণ করে বিএসএমএমইউর ডি ব্লকের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউর উপাচার্য শিশু কিডনি রোগীদের রোগ প্রতিরোধের উপর গুরুত্বারোপ করেন ও করোনা মহামারীর সময়ে শিশু কিডনি রোগীদের হেমোডায়ালাইসিস সেবা দেওয়া সহ কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট কার্যক্রম অব্যাহত রাখায় ওই বিভাগের শিক্ষক চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানান। মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বিএসএমএমইউয়ে শিশু কিডনি রোগীদের চিকিৎসার সুবিধার্থে হেমোডায়ালাইসিস সেবা সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা বরাদ্দ দেওয়ার আশ্বাস দেন। সবশেষে শিশু কিডনি বিভাগের শিক্ষক চিকিৎসকদের একটি টিম শিশু কিডনি রোগীদের নিয়ে পদ্মা সেতু ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যাত্রা। আর পদ্মা সেতু ভ্রমণ করে সেখানে আনন্দপূর্ণ সময় অতিবাহিত করেন।
বিএসএমএম পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি (শিশু কিডনী) বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সারা বিশে^ বর্তমানে প্রায় ৮৫০ মিলিয়ন মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত রয়েছেন। আর প্রতি বছর কিডনী রোগে মারা যায় ৪১ লাখ (২৪ লাখ মানুষ ধীর গতিতে আকস্মিক কিডনি বিকলে মারা যায় আরো ১৭ লাখ মানুষ)। বাংলাদেশে বর্তমানে দুই কোটি মানুষ কিডনি রোগে ভুগছে। তার মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ লাখ শিশু কিডনি রোগে ভুগছে। বাংলাদেশে শিশু কিডনি রোগীদের চিকিৎসার যাত্রা শুরু হয় ১৯৮২ সালে। বিএসএমএমইউর শিশু বিভাগের একটি ইউনিটে আটটি শয্যা নিয়ে এবং ওই সময়েই প্রথম পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস শুরু হয় । প্রথম কিডনি বায়োপসি করেছিলেন অধ্যাপক মনিমুল হক। এরপর নানা সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়েও এই বিভাগ শিশু কিডনি রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালে প্রথম পেডিয়াট্রিক্স হিমোডায়ালাইসিস শুরু হয় এবং ২০০৬ সালে প্রথম শিশুদের কিডনি প্রতিস্থাপন করে।
বর্তমান প্রগতিশীল বিশ্ব দিন দিন নানা ধরনের দুর্যোগের সম্মুখীন হচ্ছে। যেমন বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক ব্যাধি, বন্যা, দুর্ভিক্ষ, খড়া, ভুমিকম্প ইত্যাদি। ২০১৯ সাল থেকে বিশ্ব এক ভয়াবহ মহামারি কোভিডের-১৯ সম্মুখীন হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশকেও এই মহামারির মোকাবেলা করতে হয়েছে। এতে প্রাপ্ত বয়স্কদের মতো শিশু স্বাস্থ্যও হুমকির সম্মুখীন ছিল। কিন্তু শিশু কিডনি বিভাগ বিএসএমএমইউর এই দুর্যোগকালীন সময়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যেও শিশু চিকিৎসা অব্যাহত রাখে। এই বিভাগের চিকিৎসক, সেবিকা ও অন্যান্য কর্মচারীবৃন্দ কঠিন ত্যাগ ও আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে। এই বিভাগ এই দুর্যোগকালীন সময়ে বর্হিবিভাগে পাঁচ হাজার ৪৯৩ জন এবং অন্তবিভাগে ৬৮৫ জন শিশু কিডনি রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এই বিভাগের করোনাকালীন সময়ে ৭৩ জন কিডনি বিকল (ইএসআরডি) রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হয়। তারমধ্যে ৪০ জন রোগী রক্তের ডায়ালাইসিস, আটজন সিএপিডি এবং ২৫ জন রোগী আইপিডি পায়। বিশ্বের উন্নত দেশেও যখন কিডনি বিকল রোগীদের ডায়ালাইসিস দিতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে এই বিভাগের ডায়ালাইসিস একদিনের জন্যও বন্ধ থাকেনি। এছাড়াও এই বিভাগের মোট ১৩ জন শিশু কিডনি রোগীর কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়, যার মধ্যে দুই জনের করোনাকালীন সময়েই প্রতিস্থাপন করা হয়। কিন্তু এই সকল কিডনি রোগীদের চিকিৎসা করতে গিয়ে এই বিভাগ কিছুটা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো দারিদ্রতা। সমাজের বিত্তবান লোক এবং সরকার একই সাথে এগিয়ে আসলে এই কঠিন সমস্যার মকোবেলা করা সম্ভব। তাই অপ্রত্যাশিত দুর্যোগের প্রস্ততি এবং ঝুঁকিপূর্ণদের সহায়তায় আমরা সবাই এগিয়ে আসি।
অনুষ্ঠানে বিএসএমএমইউর উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) একেএম মোশাররফ হোসেন, ডিন মোহাম্মদ হোসেন, ডিন রনজিত রঞ্জন রায়, নাক কান গলা বিভাগের অধ্যাপক এএইচএম জহুরুল হক সাচ্চু, শিশু কিডনি বিভাগের চেয়ারম্যান আফরোজা বেগম, অধ্যাপক গোলাম মাঈনউদ্দিন, অধ্যাপক ডা. সৈয়দ সাইমুল হক প্রমুখসহ ওই বিভাগের শিক্ষক, চিকিৎসকেরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাটাইমস/০৯ মার্চ/এএ
এনডিটিভি,এসইই