" /> বিসিবি-ডিএসএ দ্বন্দ্বে শবদেহে পরিণতহলো বগুড়ার ‘শহীদ চাঁন্দু স্টেডিয়াম’ – নাগরিক দৃষ্টি টেলিভিশন
বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩, ০৩:৩৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ

বিসিবি-ডিএসএ দ্বন্দ্বে শবদেহে পরিণত
হলো বগুড়ার ‘শহীদ চাঁন্দু স্টেডিয়াম’

BOGURA SHAHID CHANDU STEDI PIC 2023 min

বগুড়া প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সাথে বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার (ডিএসএ) দ্বন্দ্বের নির্মম শিকার হয়ে শবদেহে পরিণত হলো বগুড়ার শহীদ চাঁন্দু স্টেডিয়াম। জেলা ক্রীড়া সংস্থার অসহযোগিতাকে দায়ী করা হয়েছে মর্মে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব বরাবরে দেওয়া বিসিবির নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সাক্ষরিত এক চিঠিতে এমনই তথ্য উল্লেখ রয়েছে। একই সঙ্গে ভেন্যুতে থাকা কর্মরত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। স্টেডিয়ামে ব্যবহৃত সকল মালামাল ও যন্ত্রপাতি ঢাকায় ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বিসিবি সূত্র জানায়, বিসিবি ৮ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত বগুড়ায় চার দিনের তিনটি ম্যাচ আয়োজন সূচি তৈরি করে। সূচি অনুযায়ী ৬ মার্চ টিমগুলো বগুড়ায় এসে ৭ মার্চ থেকে অনুশীলন শুরুর কথা। কিন্তু ১ মার্চ থেকে জেলা ক্রীড়া সংস্থা এই স্টেডিয়ামে প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ শুরু করায় বিসিবির সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয়। ২৫ মার্চ পর্যন্ত স্টেডিয়াম ব্যবহারে অনড় অবস্থান নেয় জেলা ক্রীড়া সংস্থা। এতে বিসিবি তার পূর্বনির্ধারিত তিনটি চার দিনের ম্যাচ অন্য ভেন্যুতে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে বগুড়া থেকে বিসিবি সব স্টাফ ও স্টেডিয়ামে ব্যবহৃত মালপত্র ঢাকায় সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেয়।


তবে বিসিবি’র এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করে তাদের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মিলন জানান, স্টেডিয়ামে ব্যবহৃত সকল মালামাল ও যন্ত্রপাতি এমনকি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্থানান্তর করা হবে এ বিষয়ে তাকে বিসিবি থেকে কোনো চিঠি দিয়ে জানানো হয়নি।
তবে বিসিবি ও ডিএসএ এর দ্বন্দ্বের ফলে দেশের অন্যতম সেরা এই ভেন্যুতে আর্ন্তজাতিক ম্যাচের পর জাতীয় ক্রিকেট লীগের খেলাও দেখতে পারবে না বগুড়াবাসী। এর ফলে মুশফিক, ঋতুমনিদের প্রিয় এই গ্রাউন্সে অনুশীলনের পথও বন্ধ হয়ে গেলো।


স্বাধীনতার আগে বগুড়া সদরের মালগ্রাম মৌজার মালগ্রাম এলাকায় স্টেডিয়াম তৈরি করা হয়। এই স্টেডিয়ামের বগুড়া বিভাগীয় স্টেডিয়াম নামে পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে স্বাধীনতা যুদ্ধে ফুটবলার চাঁন্দু শহীদ হলে স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ‘শহীদ চাঁন্দু স্টেডিয়াম’ হিসেবে নামকরন করা হয়। সেই থেকেই স্টেডিয়ামটিতেই চলতো ফুটবল, ক্রিকেট এ্যাথলেটিকসসহ নানা খেলাধূলা। পরবর্তীতে ২০০২ সালে এটি আর্ন্তজাতিক স্টেডিয়াম হিসেবে গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়।


এর প্রেক্ষিতে ২০০৩-০৪ অর্থ বছরে ২১ কোটি টাকায় বগুড়া শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামকে একটি আন্তর্জাতিক ভেনু্যুতে ফ্লাড-লাইট স্থাপন করা হয়। ১৮ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতার স্টেডিয়ামে চার টাওয়ারে ১০০টি করে মোট ৪০০ ফ্লাড-লাইট রয়েছে। এই লাইটগুলো ৮ লাখ ওয়াট বিদ্যুতের আলো সরবরাহ করতে পারে। আন্তর্জাতিক খেলা বন্ধের পরে ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে একবার ফ্লাডলাইটগুলো জ্বালানো হয়েছিল। তবে এরপর সেগুলো আর জ্বলেনি।


২০০৬ সালের ৮মার্চ থেকে শুরু হয় বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার মধ্যেকার টেস্ট ম্যাচ। ওই ম্যাচে বাংলাদেশ হারে ১০ উইকেটে।এই মাঠে প্রথম একদিনের ম্যাচ হয় ২০ ফেব্রুয়ারি। বাংলাদেশ শ্রীলংকার বিরুদ্ধে প্রথম ওডিআই জিতেছিলো এই মাঠেই। একই বছর ৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে এই মাঠে খেলেছে। এটিই এই মাঠের শেষ ম্যাচ। এই মাঠের ৫টি একদিনের ম্যাচের মধ্যে ৪ টিতে বাংলাদেশ জিতেছিলো। পুরুষদল ছাড়াও পাকিস্তান ও শ্রীলংকার নারী ক্রিকেট দল এই মাঠে খেলেছে।


দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে আন্তর্জাতিক মানের খেলা বন্ধ থাকলেও বাংলাদেশের বিভিন্ন লীগের খেলা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রথম তিন শতকের রানে পৌঁছায় এর মাঠেই। কেনিয়ার বিপক্ষে ৫০ ওভারপূর্তির শেষ বলে মাশরাফির ছক্কায় ৩০০ রানের স্বাদ গ্রহণ করে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। ওই ম্যাচে বাংলাদেশ জয়লাভ করে। এর আগে এরপর ২০০৬ সালের ৩০ জানুয়ারি আইসিসি বগুড়ার শহীদ চাঁন্দু স্টেডিয়ামকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু হিসেবে ঘোষণা করে। একই বছরে স্টেডিয়ামটি আন্তর্জাতিক টেস্ট ভেন্যুর স্বীকৃতিও পায়।
অথচ হঠাৎ করেই বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে বগুড়ার শহীদ চাঁন্দু স্টেডিয়ামকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছে হস্তান্তরের কথা জানায়। বিগত কয়েক বছর ধরে বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার অসহযোগিতার ফলে শহীদ চাঁন্দু স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কর্তৃক নিয়মিত টুর্নামেন্ট/ক্রিকেট লিগ আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড শহীদ চাঁন্দু স্টেডিয়ামের রক্ষণাবেক্ষণের যাবতীয় দায়-দায়িত্ব জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেই পত্রে উল্লেখ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই স্টেডিয়ামের রক্ষণাবেক্ষণের যাবতীয় দায়-দায়িত্ব জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। ভেন্যুতে কর্মরত বিসিবির ১৭ কর্মকর্তা/কর্মচারীকে ইতোমধ্যে অন্য ভেন্যুতে বদলি করা হয়েছে বলে জানায় শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের বিসিবির ভেন্যু ম্যানেজার জামিলুর রহমান জামিল।
বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মিলন জানান, বগুড়ার এই স্টেডিয়াম থেকে দেশের সেরা খেলোয়াড় তৈরী হচ্ছে। হয়তো এটা হিংসা কারণ। তাছাড়া বিসিবি’র হটকারি সিদ্ধান্তেই স্টেডিয়ামে ব্যবহৃত সকল মালামাল ও যন্ত্রপাতি এমনকি জনবল সরানো হয়। তবে এ স্টেডিয়ামটি আন্তর্জাতিকভাবে উন্নীত করণে অজ্ঞাতকারণে বগুড়ার- ৭টি আসনের এমপি ও জেলার সরকার দলীয় নেতৃবৃন্দের আন্তরিকতার অভাব ছিল বলে তিনি দাবী করেন।
বগুড়ার জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, আমি কয়েকমাস হলো বগুড়া যোগদান করেছি, স্টেডিয়াম নিয়ে বিসিবি সাথে জেলা ক্রীড়া সংস্থার অর্ন্তদ্বন্দ্ব নিয়ে কেউ আমাকে অবগত করেনি। তবে শহীদ চাঁন্দু স্টেডিয়াম থেকে বিসিবির মালামাল প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের পর তিনি বিসিবির চেয়ারম্যান ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীকে ফোন করে বিষয়টি পূনঃ বিবেচনা করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেন এই কর্মকর্তা ।
এদিকে, বগুড়া থেকে আচমকা স্টেডিয়ামের সব মালপত্র এবং স্টাফ প্রত্যাহারের খবরে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়ে জেলা ক্রীড়ামোদীদের কাছে। তাইতো ভেন্যু বাতিলের প্রতিবাদে শুক্রবার(৩মার্চ) বিকেলে স্টেডিয়ামের মূল গেটের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে। বিসিবি চলে গেলে বগুড়া তথা উত্তরাঞ্চলের নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটার তৈরীতে বড় ধরণের ক্ষতি হবে। খেলাধুলা না থাকলে উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েরা বিপথে যাবে বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও মানববন্ধনে অনতিবিলম্বে বিসিবির এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক কর্মকর্তা, ক্রীড়া সংগঠকরা ও সচেতন বগুড়াবাসী।

দীপক কুমার সরকার
বগুড়া প্রতিনিধি
০১৭১২ ৯৫৬৪৫৫
০৪ মার্চ ২০২৩


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুকে আমরা