" />
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
জন্ম এবং মৃত্যু রেজিস্ট্রেশন অধিদপ্তরের সার্ভারে অবৈধ অনুপ্রবেশ করার অভিযোগে পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ স্টেশন। এই চক্রের সদস্যরা ভূয়া জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সনদ প্রস্তুতকারী চক্রের স্বক্রিয় সদস্য। আটককৃতরা হলেন- মা. মাহবুব আলী, মো. শাহ আলম, মো. হাসান তারেক, কোহিনুর সুলতানা, মো. ফয়সাল। এ সময়ে তাদের কাছ থেকে জন্ম সনদ, জন্ম সনদ তৈরির ভুয়া কাগজপত্রসহ আটটি ফাইল, তিনটি হার্ডডিস্ক, চারটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিআইডির সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সিআইডি জানায়, চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি জন্ম ও মৃত্যুর নিবন্ধন অধিধপ্তরের রেজিস্টার জেনারেল মো. রাশেদুল ইসলাম সিআইডির কাছে একটি অভিযোগ করেন। অভিযোগে রাশেদুল ইসলাম বলেন, একটি চক্র অবৈধ বিকল্প পদ্ধতিতে জন্ম ও মূত্যু নিবন্ধন সার্ভারে ঢুকছে। আর ওই চক্রটি অবৈধভাবে জন্ম নিবন্ধনের সনদ প্রস্তুত করছে। তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন অধিদপ্তরের রেজিস্ট্রার জেনারেল।
সিআইডি বলছে, ওই অভিযোগ পাওয়ার পরে সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়ার নির্দেশনায় সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) এই বিষয়ে অনুসন্ধান করে। আর কয়েকজন ভুক্তভোগীর সাথে যোগাযোগ করে তথ্য সংগ্রহ করে। ভুক্তভোগীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ‘জন্ম নিবন্ধন হেল্প ডেস্ক’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপের সন্ধান পাওয়া যায়। যেখানে ফেসবুকে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে তারা বলছে একদিনেই দেশের যে কোন জেলার জন্ম-মৃত্যু সনদ সংগ্রহ করুন।
সিআইডির ভাষ্য, সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ওই ফেসবুক গ্রুপের এডমিনসহ ভুক্তভোগীর সাথে জন্ম নিবন্ধনের ব্যাপারে যোগাযোগকারী চক্রটিকে সনাক্ত করে। পরবর্তীতে সাইবার ইন্টেলিজেন্স এন্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট শাখা রাজধানীর পল্লবী এলাকায় একটি অভিযান চালায়। অভিযানে ওই ফেসবুক গ্রুপের দুইজন এডমিন মো. মাহবুব আলী ও মো. শাহ আলমকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন অঞ্চলের (৪) স্প্রেম্যান মো. হাসান তারেক এবং ভ্যাকসিনেটর কোহিনুর সুলতানা নামের দুইজনকে আটক করা হয়। তাদেরকে আটকের সময় সেখানে মো. হাসান তারেকের কাছে জন্ম নিবন্ধনের জন্য ভুয়া কাগজপত্রসহ ফাইল জমা দিতে আসা এই চক্রের সদস্য মো. ফয়সাল কে আটক করা হয়। এ সময়ে তাদের কাছ থেকে জন্ম সনদ, জন্ম সনদ তৈরির ভুয়া কাগজপত্রসহ আটটি ফাইল, তিনটি হার্ডডিস্ক এবং চারটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়।
আটককৃতদের বরাত দিয়ে সিআইডি জানায়, উপরে বর্নিত ফেসবুক গ্রুপটি মো. মাহবুব আলী ও মো. শাহ আলমপরিচালনা করতেন। তারা ফেসবুকের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশ থেকে লোভনীয় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট সংগ্রহ করতেন। আর মো. ফয়সাল তার দোকানে ফরম পুরন করতে আসা ক্লায়েন্টদের দেওয়া তথ্যের সাথে ভুয়া তথ্য সংযোজন করে জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট তৈরির ফাইল তৈরি করে মো. হাসান তারেক এবং ভ্যাকসিনেটর কোহিনুর সুলতানা নামের ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন অঞ্চলের দুইজন কর্মচারীর কাছে জমা দিতেন। প্রতিটি ফাইলের বিপরীতে ৫৫০টাকা থেকে এক হাজার টাকা করে দিতেন। যদিও জন্ম নিবন্ধনের সরকারি ফি মাত্র ৫০ টাকা। এই কাজে তারা দেশের সকল জেলা থেকে ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে যে তথ্য সংগ্রহ করতেন। তার সাথে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন অঞ্চলের (৪) আওতাধীন এলাকার একটিমাত্র বিদ্যুৎ বিলের কাগজ সকল আবেদনের সাথে সংযুক্ত করে দিতেন। অনেক ক্ষেত্রে মিরপুরের একটি স্কুলের ট্রান্সক্রিপ্ট এডিট করে সেখানে শুধুমাত্র ছাত্র-ছাত্রীর নাম, পিতার নাম পরিবর্তন করে একই রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বরে ট্রান্সক্রিপ্ট একাধিক আবেদনরে সাথে সংযুক্ত করে দিতেন এই চক্রটির সদস্যরা। এই কাগজ কোন রকম যাচাই-বাছাই ছাড়াই চক্রটিকে জন্ম সনদ দেওয়া হতো।
সিআইডির বক্তব্য, আটককৃত মো. হাসান তারেক এবং কোহিনুর সুলতানা নামের ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন অঞ্চলের দুজন কর্মচারী অবৈধভাবে আর্থিক সুবিধা নিয়ে নিবন্ধনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় আইডি পাসওয়ার্ড নিয়ে সার্ভারে প্রবেশ করতেন। আর ভুয়া তথ্য সংবলিত আবেদনপত্রে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন সার্টিফিকেট ইস্যু করে মো. মাহবুব আলী ও মো. ফয়সাল কে সরবরাহ করতেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে সিআইডিকে জানায়, বিগত ছয় মাস ধরে তারা সার্ভারে অবৈধ অনুপ্রবেশ করে অন্তত তিন হাজার ভুয়া সনদ ইস্যু করেছেন। আর তাদের এই কাজে অফিসের আরো কর্মচারী এবং সিটি কর্পোরেশনের উত্তর দক্ষিণসহ অন্যান্য অফিসেও এরকম অসাধু কর্মচারী সক্রিয়ভাবে জড়িত আছে। তাদেরকেও চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এভাবে ভুয়া তথ্য দিয়ে জন্ম নিবন্ধন এবং এই জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র দিয়েজাতীয় পরিচয় পত্র, পাসপোর্টসহ বিভিন্ন পরিচয়পত্র ইস্যু করা হচ্ছে। যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য চরম হুমকি স্বরূপ।
আটককৃতদের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করা হয়েছে।
ঢাকাটাইমস/০২ মার্চ/এএ