" /> সরকারী নির্দেশনা উপেক্ষিত,শেষ হয়নি ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ, ফসল নিয়ে উদ্বেগে লক্ষ লক্ষ কৃষক – নাগরিক দৃষ্টি টেলিভিশন
রবিবার, ২৬ মার্চ ২০২৩, ০৬:৪০ অপরাহ্ন

সরকারী নির্দেশনা উপেক্ষিত,শেষ হয়নি ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ, ফসল নিয়ে উদ্বেগে লক্ষ লক্ষ কৃষক

IMG 20230227 205007


সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি


সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী ২৮শে ফেব্রুয়ারীর মধ্যে শত ভাগ বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ২৮ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার পর্যন্ত সুনামগঞ্জে বাধেঁর কাজ সম্পূর্ণ শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ। তবে ৮০ভাগ পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের কাজ হয়েছে বলে দাবি করেছেন,পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার। তিনি আরও জানান,এপর্যন্ত বেশীর ভাগ বাঁধের মাটির কাজ শেষ হয়েছে। বাকী গুলোর কাজ আগামী সাপ্তাহেই শেষ হবে।

কিন্তু প্রকল্প বাস্থবায়ন কমিটি সদস্য বিজন সেন রায়সহ হাওর পাড়ের কৃষক ও সচেতন মানুষজন বলেছেন ভিন্ন কথা তারা বলছেন সর্বোচ্ছ ৪০-৪৫ভাগ কাজ হয়েছে। অনেক বাঁধে এখনও মাটির কাজেই শেষ হয়নি। তাই এক ফসলী বোরো ফসলী জমির ওপর নির্ভরশীল লাখ লাখ কৃষকদের মাঝে চাপা ক্ষোব বিরাজ করছে।

কাবিটা নীতিমালা-২০১৭অনুসারে ৩০শে নভেম্বরের মধ্যে প্রাক্কলন শেষ করে ১৫ই ডিসেম্বর ফসলরক্ষায় বাঁধের কাজ শুরু এবং ২৮ফেব্ররুয়ারি শেষ করার কথা। কিন্তু নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে চলতি বছরে ১১জানুয়ারীর পর পিআইসি ঘোষণা করে পাউবো। এর ফলে ২৮শে ফ্রেরুয়ারীর মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ করার সরকারি নির্দেশ থাকলে তা প্রতি বছরের মত এবারও হচ্ছে না বলে জানান,জেলার শনির হাওর পাড়ের কৃষক সাদেক আলী।

এদিকে,গত ১৬ই ফেব্রুয়ারী বুধবার বিকেলে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের উপ মন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম হাওর রক্ষা বাঁধ পরির্দশনে এসে বলেছেন, বাধেঁ কোনো অনিয়ম হলে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আগামী ৭মার্চের মধ্যে সকল বাঁধের কাজ শেষ করা হবে।
সেই মৌখিক নির্দেশনা ৭মার্চ কে সামনে রেখে প্রকল্প বাস্থবায়ন কমিটি সভাপতি ও সদস্য সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা কাজ ও করতে দেখা গেছে বাঁধ গুলোতে।

পাউবো সুত্রে জানাযায়,চলতি বছরে সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলায় ১হাজর ৭৮ টি প্রকল্পে ২০৮কোটি টাকা বাঁধের কাজে বরাদ্দ। ৭৫৯ কিলোমিটার বাঁধের কাজ চলছে। হাওরে ১ হাজার ৭৮ টি ফসল রক্ষা বাধের মধ্যে ৭৯৩টি বাধঁ ২১৮টি ক্লোজারের মধ্যে ১৯৩টি ক্লোজারের মাটি ফেলার কাজ শেষ হয়েছে। এই পর্যন্ত বরাদ্দ হয়েছে ১০০ কোটি টাকা ছাড় হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি দ্রুত দ্বিতীয় কিস্তি ও তৃতীয় কিস্তির বিলের টাকা পেয়ে যাবে।

হাওর বাঁচাও আন্দোলনের তাহিরপুর উপজেলা শাখার নেতা তোজাম্মিল হক নাসরুম জানান,এবারও তাহিরপুরে গুরুত্বপূর্ণ বাঁধের কাজে ঢিলেমি লক্ষ্য করা গেছে। পাউবো বরাবরই নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করেনা। সঠিক সময়ে হাওর প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজ শুরু না হওয়ায় তরিগড়ি করে বাঁধের কাজ করতে গিয়ে প্রতিটি বাধেঁই ঝুকিঁপূর্ন ও দূর্ভল হয়। ফলে বৃষ্টির পানি ও সামন্য পাহাড়ী পানির ঢলের চাপে বাঁধ ভেঙ্গে পানি হাওরে প্রবেশ করে। সে কারনে এবারও লাখ লাখ কৃষক উৎবেগ,উৎকণ্ঠা আর আত্নংকের মধ্যে সময় পার করছে বাধঁ ভাঙার আশংকায়। এবার হাওরের কোন ক্ষতি হলে এর দায়ভার পাউবোসহ সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে দায় দায়িত্ব নিতে হবে।

শনি হাওরের কৃষক কাদির মিয়া,আলমগীর,সালাম মিয়া জানান,সময় মত বাধঁ নির্মান কাজ শুরু না হওয়া,সেই সাথে অনিয়ম ও দূর্নীতির কারণে প্রতি বছরই ৪০ভাগ কাজ হয় না। সরকার ফসল রক্ষা বাঁধের বিষয়টি গুরুত্ব দিলেও বাঁধ নির্মাণে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির দায়িত্বশীলরা গুরুত্ব দেয়না। প্রতিবছর বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও কাজের বেলায় দেরী ও নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করায় সরকারের অর্থের অপচয়ের সাথে সাথে হাওর ধংশ হচ্ছে। ফলে সামান্য পাহাড়ী ঢলের পানিতে বাঁধ গুলো ভেঙ্গে হাওরগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। এবারও বোরো ফসল হারানোর আত্নংকে আছি কারন এখনও বাঁধ নির্মান কাজ শেষ হয়নি।

IMG 20230227 204937 1

তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ হাসান উদ দৌলা বলেন,চলতি মৌসুমে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ১৭হাজার ৩৯৩হেক্টর জমিতে ইরি-বোর ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে ৮০হাজার মেট্রিকটনের বেশি চাল উৎপাদন হবে। এর মূল্য ২শ ৪৪কোটি ৮০লাখ টাকার বেশী।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা জানান,আমি সরেজমিন বিভিন্ন হাওরের বাধেঁর কাজ পরির্দশনে গিয়ে পিআইসিদেরকে দ্রুত বাঁধের কাজ শেষ করার জন্য তাগিদ দিচ্ছি এবং বাঁধের কাজ প্রায় শেষের পথে। আগামী সাপ্তাহে সব বাঁধের কাজ শেষ হবে। যারা সরকারী নীতিমালা অমান্য করবে তাদের বিরোদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চলতি বছরে এ উপজেলায় ১১৩টি পিআইসি অনুমোদন করে ৮৪.৫০০শত কিলোমিটার বাধেঁ ২০কোটি ৯৬লাখ ৩৪হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী জানান,যারা বাঁধ নির্মাণের সাথে জড়িত তারা বলেছেন তারা নির্ধারিত সময় মধ্যেই করতে পারবে। কিন্তু ২৮ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে শেষ না করতে পারলেও আরও কয়েক দিনের মধ্যে শেষ করতে পারব। সে অনুযায়ী নির্দেশনা দেয়া হয়েছে অন্যথায় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও বাঁধের বিষয়ে স্থায়ী সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানিয়েছি যা দেখছি আগামীতে বাঁধের মাটি পাওয়া সম্ভব হবে না।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুকে আমরা