" />
নিজস্ব প্রতিবেদক: যেকোন উৎসবকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বাড়ে। ছিনতাইকারীরা ১৪ ফেব্রুয়ারির বিশ^ ভালোবাসা দিবসে, পহেলা ফাল্গুনে এবং বই মেলাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশেপাশের এলাকায় উৎসব মুখরতা তৈরি হওয়ার সুযোগ কাজে লাগায়। উৎসব মুখর পরিবেশে রাজধানীর শাহবাগ, শাহজাহানপুর, মতিঝিল, কমলাপুর, খিলগাঁওসহ আরও বেশ কয়েকটি জায়গায় বড় ধরনের ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেছিল ছিনতাইকারীদের এই চক্রটি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে র্যাব-৩ এর সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
এরআগে রাজধানীর মতিঝিল, মুগদা, ওয়ারী, খিলগাঁও, বংশাল, সবুজবাগ ও শাহজাহানপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায় র্যাব-৩। অভিযানে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতাসহ মোট ২৯ জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এ সময়ে তাদের কাছ থেকে ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র উদ্ধার করে র্যাব-৩। র্যাব-৩ বিগত ছয়মাসে ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে ৫৯টি অভিযান চালিয়ে ২০৪ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. রাকেশ ওরফে কালাচাঁন, মো. আব্দুল মান্নান, মো. ইমরান গাজী, মো. আকাশ, মো. ইসরাফিল, মো. সিয়াম, মো. মানিক, নাহিদ পারভেজ, মো. আরাফাত, মো. শাকিল, মো. রিয়াদ, মো. আব্দুল রব মিয়া, মো. সাইফুল ইসলাম, মো. রাসেল, মো. ইসমাইল, লোকনাথ রাজ বংশি, শম্ভু চন্দ্র দাস, মো. শামীম, মো. রাজু, মো. মোজাফ্ফর, মো. হাসান, মো. হৃদয়, মো. আরিফ, মো. আতিকুল ইসলাম, মো. হেলাল, মো. রুবেল, মো. রতন ওরফে মানিক, মো. তছলিম এবং মো. আনোয়ার। এ সময়ে তাদের কাছ থেকে সুইচ গিয়ার, চাকু, ক্ষুর, এন্টিকাটার, কাঁচি, ব্লেড, মোবাইল ফোন এবং নগদ টাকাসহ বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র জব্দ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, বুধবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত র্যাব-৩ এর কয়েকটি দল এক সাথে রাজধানীর মতিঝিল, মুগদা, ওয়ারী, খিলগাঁও, বংশাল, সবুজবাগ ও শাহজাহানপুর এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতাসহ মোট ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, যে, যেকোন উৎসবকে কেন্দ্র করে ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বাড়ে। ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ^ভালোবাসা দিবস, পহেলা ফাল্গুণ এবং বই মেলাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশেপাশের এলাকায় উৎসব মুখর পরিবেশ তৈরি হয়। এসুযোগে রাজধানীর শাহবাগ, শাহজাহানপুর, মতিঝিল, কমলাপুর, খিলগাঁওসহ আরও বেশ কয়েকটি জায়গায় বড় ধরনের ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে আসছিল এই চক্রটি। এছাড়াও আসন্ন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস তথা ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে নাশকতা তৈরির মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ছিনতাই করারও পরিকল্পনা ছিল এই চক্রটির।
গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, সাধারণত এসব এলাকায় ছিনতাইকারী এই চক্রটির সদস্যরা ঘোরাফেরা করতে থাকে। এছাড়াও সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারি চক্রের অন্যান্য সদস্যরা বিভিন্ন অলি গলিতে ওৎপেতে থাকে। সুযোগ পাওয়া মাত্রই তারা পথচারী, রিকশা আরোহী, যানজটে থাকা সিএনজি, অটোরিকশার যাত্রীদের ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে সর্বস্ব লুটে নেয়। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত তুলনামূলক জনশূন্য রাস্তা, লঞ্চঘাট, বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন এলাকায় ছিনতাইকারিরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাদের ছিনতাইকাজে বাধা দিলে তারা নিরীহ পথচারীদের প্রাণঘাতী আঘাত করতে দ্বিধা বোধ করেনা।
গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে খিলগাঁও মালিবাগ রেইল গেইট, কমলাপুর, মতিঝিল, হাতিরঝিল, শাহবাগ, পল্টন, মানিকনগর, নন্দীপাড়া, গুলিস্তান এলাকায় সন্ধ্যা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত ছিনতাইকারীদের বেশ তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ছিনতাইকাররি চক্রের সদস্যরা যেসকল ব্যক্তির কাছ থেকে ছিনতাই করবে তাদেরকে আগে থেকে অনুসরণ করতে থাকে। আর অনুসরণকৃত ব্যক্তির সাথে ছিনতাইকারি চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন ধরনের কথা বলে থাকে। একপর্যায়ে কথা বলতে বলতে ওই ব্যক্তিকে সুবিধামতো কোনো জায়গায় নিয়ে যায়। পরে সেখানে ছিনতাইকারি চক্রের অন্য সদস্যরা উপস্থিত হয়। চক্রের একজন সদস্য ওই ব্যক্তির সঙ্গে বিতর্কে জড়ায় ও মারধর শুরু করে। লোকজন এগিয়ে আসলে বলে, নিজেদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝির কারণে এ মারামারি। ততক্ষণে ছিনতাইয়ের কাজটি তাদের চক্রের কেউ একজন সেরে ফেলে। এছাড়াও তারা ছিনতাইয়ের কাজে বিভিন্ন অভিনব কৌশল অবলম্বন করে থাকে। আর ছিনতাইয়ের কাজে বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে। যখন কোন রিকশা অথবা সিএনজি আরোহী যাত্রীদেরকে টার্গেট করে। তারা অন্য একটি রিকশা অথবা সিএনজি নিয়ে ওই ব্যক্তির পিছনে যেতে থাকে। ছিনতাইকারিদের সুবিধামত জায়গায় পৌঁছে যাত্রীকে এবং চালককে দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে রিক্সা ও সিএনজি যাত্রীর সবকিছু লুটে নেয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, ছিনতাইকারিরা তাদের ছিনতাই করা টাকা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের নেশা করে। আবার কেউ কেউ জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। ওই চক্রের সদস্যদের রাজধানীতে বসবাসের জন্য স্থায়ীভাবে কোন বাসস্থান নেই। তারা সকলেই রাজধানীর ভাসমান অবস্থায় বসবাস করে। এই চক্রের সদস্যদের মধ্যে প্রায় সকলের বিরুদ্ধে মাদক ও ছিনতাইসহ একাধিক মামলা রয়েছে।