" /> লাভায় ঢাকা প্রাচীন শহরের ধ্বংসস্তূপে ‘অদৃশ্য’ সৌরপ্যানেল – নাগরিক দৃষ্টি টেলিভিশন
বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩, ১২:৪৭ অপরাহ্ন

লাভায় ঢাকা প্রাচীন শহরের ধ্বংসস্তূপে ‘অদৃশ্য’ সৌরপ্যানেল

727277 18

7 / 100

রোমান সভ্যতার চিহ্ন বহনকারী প্রাচীন শহর পম্পেইয়ের নানা জায়গায় বসানো হচ্ছে অদৃশ্য সৌর প্যানেল। যাতে পরিবেশ বাঁচানোর পাশাপাশি বিদ্যুতের খরচেও রাশ টানা যায়। ইতোমধ্যেই পম্পেই শহরের দু’টি প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চলে এ কাজ শেষ হয়েছে।

ইতালির নেপলসের দক্ষিণ-পূর্বে কাম্পানিয়া অঞ্চলে পম্পেইয়ের নানা নির্দশন ছড়িয়ে রয়েছে। তার কোনোটির ধ্বংসাবশেষে আবার গত ২০ বছর ধরে সংস্কার কাজ চলছে। এমনই একটি হলো হাউস অফ ভেট্টি।

প্রাচীন রোমে পম্পেইয়ের অভিজাতদের বাস ছিল এই হাউস অফ ভেট্টিতে। তবে খ্রিস্টপূর্ব ৭৯-তে মাউন্ট ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরিতে তা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। দু’দশক ধরে এর ধ্বংসাবশেষে সংস্কারের কাজ করা হয়েছে।

অভিজাতদের ওই শহর ছাড়াও সংস্কার করা হয়েছে হাউস অফ সিরিয়ার নামে একটি জায়গায়। প্রাচীন রোমে তা স্ন্যাক্‌স বার হিসেবে পরিচিত ছিল। সম্প্রতি এই দু’জায়গাই পর্যটকদের জন্য আবার খুলে দেয়া হয়েছে।

পম্পেইয়ের প্রত্নতত্ত্বিক পার্কের এই দু’জায়গায় অদৃশ্য সৌর প্যানেল লাগানো হয়েছে। সম্প্রতি একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়েছেন পার্কের ডিরেক্টর গ্যাব্রিয়েল জাকট্রিয়েজেল। প্রাচীন ধ্বংসাবশেষের সাথে আধুনিক প্যানেলগুলো যাতে মানানসই হয়, সে দিকেও খেয়াল রাখা হয়েছে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে গ্যাব্রিয়েল বলেছেন, ‘ওই প্যানেলগুলো দেখতে একেবারে টেরাকোটা টাইল্‌সের মতো, ঠিক যেমনটা রোমানরা ব্যবহার করতেন। তবে এগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।’ ধ্বংসাবশেষের বহিরঙ্গ আলোকোজ্জ্বল করার জন্য এগুলো কাজে লাগানো হয়েছে।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পম্পেইয়ের ধ্বংসাবশেষ দেখতে প্রতি বছর প্রায় ৩৫ লাখ পর্যটক ভিড় করেন। এক কালে যা আগ্নেয়গিরির লাভায় চাপা পড়ে গিয়েছিল।

প্রাচীন এই শহরটি আলোয় ভরিয়ে দিতে বিদ্যুতের খরচ কম হতো না। ফলে অপ্রচলিত পদ্ধতিতে এখানে আলো জ্বালানোর পথ বেছে নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি, প্রচলিত উপায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে গেলে আরো এক প্রস্ত খোঁড়াখুঁড়িও প্রয়োজন হতো, যাতে প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চলগুলোর অমূল্য সম্পদ নষ্টের আশঙ্কা রয়েছে।

গ্যাব্রিয়েল বলেন, ‘পম্পেইয়ের কয়েকটি জায়গায় সংস্কারের কাজের পর পুরোপুরি সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে। তবে এ সব জায়গায় সর্বত্র বিদ্যুতের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু খুঁটি পুঁতে, তার জড়িয়ে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে গিয়ে এই জায়গাগুলোর অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যেত। তা ছাড়া, আমরা লাখ লাখ ইউরো বাঁচাতে চেয়েছি।’

গ্যাব্রিয়েলের মতে, নয়া প্রযুক্তিতে প্রত্নতাত্ত্বিক সাইটগুলোতে প্রভূত পরিমাণ বিদ্যুতের বিল বাঁচানো যাবে। সেই সাথে এর আলোর সাহায্যে সাইটগুলোকে নয়া রূপে পর্যটকদের কাছে তুলে ধরা হবে।

সৌর প্যানেলগুলোর নকশা তৈরি করেছে ‘ডায়কুয়া’ নামে ইতালির এক সংস্থা। এগুলোকে ‘অদৃশ্য’ রাখার জন্য যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, তাকে চিরাচরিত ‘পিভি টাইল্‌স’ বলা হচ্ছে।

সৌর প্যানেলগুলো অদৃশ্য কেন?
আসলে এগুলোকে প্রয়োজনে দেওয়ালে, মেঝে অথবা ছাদে ‘লুকিয়ে’ রাখা যায়। অর্থাৎ সকলের নজরের সামনে থাকলেও তা দেখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

সংবাদমাধ্যমে এলিসাবেতা বলেন, ‘আমাদের এই উদ্যোগ প্রতীকী নয়। বরং প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটকের মাধ্যমে বিশ্বের কাছে একটি বার্তা পৌঁছে দিতে চাই আমরা।’

কী সেই বার্তা?
এলিসাবেতা বলেন, ‘সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে অন্যভাবেও রক্ষা করা যায় এবং তা করা যায় পরিবেশের ক্ষতি না করেই।’

প্রাচীন রোমের পম্পেই শহর ছাড়াও ইতালির অন্যত্র এই পদ্ধতিতে বিদ্যুতের আলো ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছে।

ভিকোফোর্তে কমিউন নামে পঞ্চদশ শতকের একটি গির্জায় ইতোমধ্যেই এ ধরনের সৌর প্যানেল বসানো হয়েছে। রোমের শিল্প সংগ্রহশালা ম্যাক্সিতেও তা রয়েছে।

ইতালির মতো বিশ্বের অন্য জায়গাতেও এ ধরনের প্যানেল বসানো হবে। পর্তুগালের ইভোরায় বিভিন্ন সরকারি ভবনে অথবা ক্রোয়েশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর স্‌প্লিটে এই প্যানেল বসবে বলে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। পম্পেইয়ে এ ধরনের প্যানেল বসানোয় একটি নতুন দিক খুলেছে।

এলিসাবেতা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে সব ধরনের সংস্কারের কাজে এই সৌর প্যানেল যাতে কাজে লাগানো যায়, সে চেষ্টাই করবেন তারা।
সূত্র : আনন্দবাজার


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুকে আমরা