" />
রংপুর ব্যুরো: ২০১৩ সালের নদী সংরক্ষণ আইনে আছে নদী তীরের ৩০ফিটের মধ্যে কোনো স্থাপনা করা যাবে না। কিন্তু সেই আইনকে তোয়াক্কা না করে রংপুরের বদরগঞ্জ পৌর শহরের নদীরতীর ঘেঁষে ইজারা নেওয়া সরকারি জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন স্কুল শিক্ষক শাহজাহান আলী। অভিযোগ উঠেছে, বদরগঞ্জ মেয়র আহসানুল হক চৌধুরী টুটুলের ছত্রছায়া ইতিমধ্যে একতলার কাজ শেষ করেছেন ওই স্কুল শিক্ষক।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলার ঘাটাবিল শহীদ স্মৃতি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান আলী উপজেলা পরিষদ এলাকার পাশে সেতুসংলগ্ন মহাসড়ক ও মরা তিস্তা নদী ঘেঁষে ১০ শতক জায়গা দখল করে টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে ৭মাস ধরে নিয়ম না মেনে ঝুঁকিপূর্ণ পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করছেন। নদী ঘেঁষে পাঁচতলা বিশিষ্ট এই ভবন নির্মাণ হলে যে কোনো মুহুর্তে ধসে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। এ নিয়ে বদরগঞ্জ পৌরশহরে চলছে নানা আলোচনা, সমালোচনার ঝড়।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীর কোল ঘেঁষে টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। বহুতল ভবনের বিমের রডগুলো বেড়া ডিঙিয়ে উকি দিচ্ছে। রাজমিস্ত্রিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন নির্মাণ কাজে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুব লীগের এক নেতা বলেন, ‘শাহজাহান আলী এখানকার প্রভাবশালীদের একজন। তাঁর টাকা ও বৈভব আছে। পৌর মেয়রের সঙ্গে তাঁর গভীর সখ্যতা। যার কারণে তাঁর বিরুদ্ধে আইন মানা হচ্ছে না। প্রশাসনের লোকজনের চোখের সামনে নদী ঘেঁষে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নির্মাণ করছেন।’
পৌরসভার বাসিন্দা রোকুনুজ্জামান নদী ঘেঁষা ভবন দেখিয়ে বলেন, ‘যার টাকা ও ক্ষমতা আছে, তাঁর কাছে আইন কিছুই না। যার বড় প্রমাণ শাহজাহান আলীর নদীর তীরে এই ভবন। টাকা দিয়ে প্রশাসন ও পৌরসভার লোকজনকে ম্যানেজ করে কোটি টাকার সম্পত্তি লুঠে সেখানে অবৈধ ভাবে ভবন নির্মাণ করছেন। উপজেলা ভূমি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ওই জায়গা সিএস সরকারি খতিয়ানভুক্ত। ৬৫২ দাগে সেখানে ৭৬ শতক জায়গা রয়েছে। এই জায়গা ১৯৪০ ও ৬২ সালের রেকর্ড সরকারের নামে। সিএস খতিয়ানে উল্লেখ রয়েছে, সাধারণের জন্য ব্যবহার্য। কিন্তু ১৯৬৫ সালের দিকে ওই জায়গা বন্দোবস্ত নেন গোলাম হোসেন নামের এক ব্যক্তি। পরে তিনি ওই জায়গা নিজের নামে রেকর্ড করে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৭৬ শতক জায়গার মধ্যে অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, পশুচিকিৎসক রহমান ও আজম আলী নামের আরেক ব্যক্তি ওই জায়গায় ভবন নির্মাণ করেছেন। তাঁদের দেখে পৌরসভা থেকে অনুমোদন নিয়ে তড়িঘড়ি করে নদী ঘেঁষেই বহুতল ভবন নির্মাণ শুরু করেছেন শাহজাহান আলী। পৌর শহরের ভূমি কর্মকর্তা (সদ্য বদলী) রতন কুমার বলেন, ৪০ ও ৬২ সালের রেকর্ড সরকারের নামে রয়েছে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক এবং নদী রক্ষা বিষয়ক সংগঠন রিভারাইন পিপলের পরিচালক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, আইন অনুযায়ী নদী ঘেঁষে ভবন নির্মাণ অবৈধ। এতে নদীর ক্ষতি হয়। ভবন ঝুঁকির মধ্যে থাকে। নদীর যে জায়গায় শিক্ষক শাহজাহান আলী ভবন নির্মাণ করেছেন, তা জনসম্মুখে। এটা যদি বন্ধ করা না যায়, তাহলে অন্যরাও নদী ঘেঁষে ভবন নির্মাণের সুযোগ নিবেন। প্রশাসনের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।
এ ব্যাপারে শাহজাহান আলী বলেন, ‘আমি ক্রয়কৃত সম্পতিতে ভবন নির্মাণ করছি। ভবন নির্মানে কোনো অনিয়ম করছি না।’
বদরগঞ্জ পৌরসভার প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘শাহজাহানকে পৌরসভা থেকে পাঁচতলা ভবন নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।পৌর মেয়র আহসানুল হক চৌধুরী টুটুল মুঠোফোনে বলেন, ওই জমির কাগজপত্র শাহজাহানের নামে সঠিক থাকায় সেখানে ভবন নির্মানের অনুমতি দেই।ইউএনও আবু সাঈদ বলেন ‘ওই জায়গায় ভবন নির্মাণে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে কথা হলে রংপুরের জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন বলেন, বিষয়টি ইউএনওকে দেখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’