" />
বগুড়া প্রতিনিধি: আগামী ১ ফেব্রুয়ারি বুধবার জাতীয় সংসদের বগুড়া সদর-৬ ও কাহালু-নন্দীগ্রাম-৪ আসনের উপ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে জমে উঠেছে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা। আজ (৩০ জানুয়ারি) মধ্যরাতেই শেষ হচ্ছে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা। ইতিমধ্যে আসন দুটোর।
২৫৫টি ভোটকেন্দ্রের এক হাজার ৭৯৪টি ভোটকক্ষে ইভিএম পদ্ধতিতে নিবার্চন ব্যবস্থা সুষ্ঠ ও নিরাপত্তার জন্য সকল ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে জেলা প্রশাসন। তবে অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন নিয়ে ভোটের দিন সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে ভোটারদের মনে। জেলা পুলিশের গোপনীয় শাখা (ডিএসবি) থেকে আসন দুটির ২৫৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৫৮টিকেই ঝুঁকিপূর্ণ (অধিক গুরুত্বপূর্ণ) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যার মধ্যে বগুড়া-৬ সদর আসনে মোট ১৪৩টির মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের সংখ্যা ৭৯টি। বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনেও মোট ১১২টির মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ৭৯টি। আসন দুটোর ভোটকেন্দ্রগুলোর নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তায় ৩৫জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ৩জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, দেড় হাজার পুলিশ, ৩ হাজার ৬১ জন আনসারের পাশাপাশি ১০ প্লাটুন বিজিবি ও র্যাবের ১৭টি টিম দায়িত্ব পালন করবে।
জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিএসবি) সূত্রে জানা যায়, এবার এ দুটি আসনে অর্ধেকের বেশি ভোট কেন্দ্র গুরত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ। তবে ঝুঁকিপুর্ণ কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তা থাকবে। বগুড়া সদর আসনে মোট কেন্দ্র ১৪৩টি। এর মধ্যে ৭৯টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ। বাকি ৬৪টি কেন্দ্র সাধারন কেন্দ্র বলে চিহিৃত করা হয়েছে।
অপর আসন কাহালু-নন্দীগ্রাম-৪ এ মোট ১১২ কেন্দ্রে মধ্যে কাহালুতে ৩৫টি কেন্দ্র গুরত্বপুর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ, বাকি ২৮টি সাধারণ কেন্দ্র। এ ছাড়া নন্দীগ্রামে রয়েছে ২৩টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ এবং ২৬টি কেন্দ্র সাধারন বলে চিহিৃত করা হয়েছে। তবে গুরত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র গুলোতে ৪ জন করে পুলিশ সদস্য ও ১২ জন করে আনসার সদস্য, সাধারণ কেন্দ্রে ৩ জন পুলিশ ও ১২ জন করে আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। মোট কথা আসন দুটোর ভোটকেন্দ্রগুলোর নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তায় দেড় হাজার পুলিশ, ৩ হাজার ৬১ জন আনসারের পাশাপাশি ১০ প্লাটুন বিজিবি ও র্যাবের ১৭টি টিম দায়িত্ব পালন করবে। পুলিশের সাঁজোয়া গাড়ী এপিসি ও জলকামান প্রস্তুত থাকবে। এ ছাড়াও ভোট কেন্দ্রগুলোর সার্বিক দায়িত্ব পালন করবে ডিবির স্পেশাল টিম, পুলিশের মোবাইল টিম, স্টাইকিং ও স্ট্যান্ডবাই টিম, কুইক রেসপন্স টিম। এ ছাড়া ২৯ জনেরও বেশি ম্যাজিষ্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। তবে ম্যাজিস্ট্রেটের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে জেলা রির্টানিং অফিস ও ডিএসবি সূত্র থেকে জানা যায়।
ইতিমধ্যে শনিবার (২৮ জানুয়ারি) জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়। বগুড়া-৪ (কাহালু ও নন্দীগ্রাম) এবং বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনকে ঘিরে এই দুই আসনে যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) রাত ১২টা থেকে বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত ১২টা পর্যন্ত ট্রাক, পিকআপ, ইঞ্জিনচালিত সকল ধরনের নৌযান, স্পিডবোট ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে।
একইসঙ্গে সোমবার (৩০ জানুয়ারি) রাত ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার (২ফেব্রুয়ারি) রাত ১২টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ থাকবে।
গণবিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী, তাদের নির্বাচনী এজেন্ট, গণমাধ্যমকর্মী, পর্যবেক্ষক, নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, নির্বাচনের বৈধ পরিদর্শক এবং জরুরি কাজে নিয়োজিত যেমন অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ারসার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক, টেলিযোগাযোগ ইত্যাদির ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা শিথিলযোগ্য।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা যায়, বগুড়া-৬ সদর আসনে ১৪৩ কেন্দ্রে মোট ৪ লাখ ১০ হাজার ৭৪৩ জন তাদের ভোটারিধকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ৮ হাজার ২৫৯ জন এবং ২ লাখ ২ হাজার ৪৮৪ জন পূরুষ ভোটার। সে হিসাবে বগুড়া সদর আসনে নারী ভোটার সংখ্যা বেশি।
কাহালু-নন্দীগ্রাম-৪ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ২৮ হাজার ৪৬৯ ভোটার রয়েছেন। এর মধ্যে কাহালু উপজেলায় ৯০ হাজার ৯৬৩ জন নারী এবং ৮৯ হাজার ৮৮০ জন পূরুষ। নন্দীগ্রাম উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৪৭ হাজার ৬২৬ জন। এদের মধ্যে ৭৪ হাজার ৪৭১জন নারী এবং ৭৩ হাজার ১৫৫ জন পুরুষ ভোটার তাদের ভোটারাধিকার প্রয়োগ করবেন। তবে আসনেও পুরুষের চেয়ে নারী ভোটার সংখ্যা বেশি।
উপ-নির্বাচনে প্রস্তুত দুটো আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ভোট অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ করতে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সাড়ে চার হাজার নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করা হবে। পাশাপাশি নির্বাচনী এলাকায় ১৬ প্লাটুন বিজিবি সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া ৩৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ৩ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে নির্বাচনী এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হবে।
এছাড়াও আসন দুটোর ২৫৫টি ভোটকেন্দ্রের এক হাজার ৭৯৪টি ভোটকক্ষে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ করা হবে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য তিনজন পুলিশ ছাড়াও এপিবিএন, আনসার ভিডিপিসহ ১৭ জন নিরাপত্তকর্মী দায়িত্ব পালন করবেন। ভোটকেন্দ্রের বাইরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃৃত্বে পুলিশের স্ট্রাকিং ফোর্স ও বিজিবি সদস্যরা টহল দেবেন বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, এ উপ নির্বাচনে বগুড়া-৬ সদর আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের প্রার্থীসহ ১১ জন এবং কাহালু-নন্দীগ্রাম-৪ আসনে ১৪ দলীয় প্রার্থীসহ ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।