" /> গুরুত্বপূর্ণ স্থপনায় আক্রমের পরিকল্পনা ছিল হুজির – নাগরিক দৃষ্টি টেলিভিশন
বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩, ০৪:২০ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ

গুরুত্বপূর্ণ স্থপনায় আক্রমের পরিকল্পনা ছিল হুজির

WhatsApp Image 2023 01 28 at 16.48.38

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা ছিল নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জঙ্গি বিরোধী অভিযানে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ নেতৃত্ব শূণ্য হয়ে যায়।

ইসলাম জঙ্গি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি’র) সদস্য সংগ্রহ, অর্থ সংগ্রহ করা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। আর গ্রেপ্তারকৃত ফখরুল ইসলাম দেশে পাকিস্তান থেকে এসে জঙ্গি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও হুজি’র সদস্য সংগ্রহ, অর্থ সংগ্রহ করা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। ফখরুল ইসলাম সাংঠনিক কার্যক্রম স্বশরীরে ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যম ব্যবহার করে অব্যাহত রাখেন। তিনি অত্যাধুনিক সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যম এনক্রিপটেড এ্যাপস ব্যবহারের মাধ্যমে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের এবং বাংলাদেশের অন্যান্য হুজি সদস্যদের সাথে উগ্রবাদী ও আক্রমনাত্মক বিষয়ে আলোচনা করে ম্যাসেজ দিতেন। আর যেকোন সময় বাংলাদেশের গুরুপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে বড় ধরনের জঙ্গি হামলা পরিচালনার বিষয়ে নিজেদের মধ্যে পরিকল্পনা করেন।


শনিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপি সিটিটিসির অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।

এরআগে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হুজি’র ছয়জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির সিটিটিসির সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের ডিজিটাল ফরেনসিকের একটি টিম। শুক্রবার দিবাগত রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-মো. ফখরুল ইসলাম, মো. সাইফুল ইসলাম, মো. সুরুজ্জামান, হাফেজ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, মো. দীন ইসলাম এবং মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন । এ সময়ে তাদের কাছ থেকে নয়টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।


সংবাদ সম্মেলনে আসাদুজ্জামান বলেন, বিদেশ থেকে জঙ্গি বিষয়ে ট্রেনিং প্রাপ্ত বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি’র) সক্রিয় সদস্য মো. ফখরুল ইসলাম ১৯৮৮ সালে গাজীপুরের টঙ্গী থানার তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসায় তিনি দারোয়ানের চাকরি করতেন। পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালে কাজের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের করাচি শহরে যান। তিনি পাকিস্থানে থাকাকালীন সময়ে বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত মুফতি জাকির হোসেনের সাথে পরিচয় হয়। মুফতি জাকির হোসেন যিনি পাকিস্তানের করাচি শহরে ইসলামীয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল এবং আল কায়েদার সামরিক কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। মুফতি জাকির আল কায়েদা সংগঠনের জিহাদী প্রশিক্ষণের কমান্ডার। মুফতি জাকির মো. ফখরুল ইসলাম’কে জিহাদের দাওয়াত দিলে তিনি দাওয়াত গ্রহন করেন। ফখরুল ইসলাম জিহাদী প্রশিক্ষণে অংশগ্রহনের জন্য মুফতি জাকিরের সাথে একাধিকবার পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানের কান্দাহার শহরে দীর্ঘকালীন প্রশিক্ষণে যায়। ফখরুল ওই প্রশিক্ষণে বিভিন্ন অস্ত্র প্রশিক্ষনের পাশাপাশি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র- একে ৪৭, এলএমজি ও রকেট লাঞ্চার পরিচালনা শিখেন। প্রশিক্ষণের সময় কান্দাহারের সমশেদ পাহাড়ে তিনি নিয়মিত ফায়ারিং অনুশীলন করতেন। অনুশীলনের সময় ফখরুল ইসলাম একে ৪৭ সহ সশস্ত্র অবস্থায় প্রশিক্ষন এলাকায় চার ঘন্টা করে নিরাপত্তামূলক পাহারা ডিউটি করতেন। ওই সময়ে তিনি আলকায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন ও মোল্লা ওমরের সাথে একাধিকবার সাক্ষাত করেন। তিনি আফগানিস্তানে বিভিন্ন মেয়াদে জিহাদি প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরে আবারও পাকিস্তানের করাচিতে ফিরে আসেন। করাচি থেকে ১৯৯৫ সালে ইরানের রাজধানী তেহরান যান এবং প্রায় তিন বছর সেখানে থাকার পর করাচিতে ফিরে এসে তিনি পরবর্তীতে ইসলামাবাদ থেকে ভারতের ভিসা নিয়ে ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে চলে আসেন।


সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি সিটিটিসির প্রধান বলেন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা সিটিটিসি’র জঙ্গি কার্যক্রম বিরোধী অপারেশন চলমান থাকায় এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের মুফতি হান্নান সহ একাধিক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি গ্রেপ্তার হওয়ায় হরকাতুল জিহাদ সংগঠনটি নেতৃত্ব শূণ্য হয়ে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় দেশে এসে ফখরুল ইসলাম জঙ্গি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি’র) সদস্য সংগ্রহ, অর্থ সংগ্রহ করা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। তিনি সাংঠনিক কার্যক্রম স্বশরীরে ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যম ব্যবহার করে অব্যাহত রাখেন। তিনি অত্যাধুনিক সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যম এনক্রিপটেড এ্যাপস ব্যবহারের মাধ্যমে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের এবং বাংলাদেশের অন্যান্য হুজি সদস্যদের সাথে উগ্রবাদী ও আক্রমনাত্মক বিষয়ে আলোচনা করে ম্যাসেজ আদান প্রদান দিতেন এবং যেকোন সময় বাংলাদেশের গুরুপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে বড় ধরনের জঙ্গি হামলা পরিচালনার বিষয়ে নিজেদের মধ্যে পরিকল্পনা করেন। বাংলাদেশের হুজি সদস্যদের বান্দরবন পাহাড়ি এলাকায় প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করে। তিনি ও তার ছেলে আটককৃত আসামি মো. সাইফুল ইসলাম অন্যান্য হুজি সদস্যদের নিয়ে একাধিকবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের তাদের সংগঠনে রিক্রুটের উদ্দেশ্যে এবং জিহাদি কার্যক্রমের অংশ হিসাবে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রানিত করার জন্য তাদেরকে বিভিন্ন মোটা অংকের টাকা অনুদান দেন।


সংবাদ সম্মেলনে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গ্রেপ্তারকৃত অপর আসামি হাফেজ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সিকিউরড এনক্রিপটেড এ্যাপস টেলিগ্রাম ব্যবহার করে টেলিগ্রাম গ্রুপ “মোরা সত্যের সৈনিক” এর অ্যাডমিন “অস্থায়ী মুসাফির” হিসাবে ছদ্মনাম ধারণ করে গ্রুপটি পরিচালনা করে। মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বিপ অ্যাপসে এ নিজেকে ম্যানুয়াল হিসেবে ছদ্মনাম ধারণ করেন। হাফেজ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন টেলিগ্রাম অ্যাপসের মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের এবং বাংলাদেশের অন্যান্য হুজি সদস্যদের সাথে উগ্রবাদী ও আক্রমনাত্মক বিষয়ে আলোচনা করে ম্যাসেজ দেন। আর নিষিদ্ধ ঘোষিত হুজির একটি এনক্রিপটেড এ্যাপের প্রাইভেট চ্যানেল “একটু প্রস্তুতির” কনটেন্ট হিসেবে “একটি বোমা তৈরি করো তোমার মায়ের রান্নার ঘরে” শীর্ষক ১০ পাতার ডকুমেন্ট এবং একই চ্যানেল থেকে টাইম বোমা বানানো বাংলা বিবরনীসহ ভিডিও শেয়ার করে। আব্দুল্লাহ আল মামুন ওই এনক্রিপটেড এ্যাপসের চ্যানেল থেকে প্রাপ্ত কনটেন্ট তার সংগঠনের পরিচিত দুই একজনকে হাতে কলমে বোমা বানানোর প্রশিক্ষন লাভের উদ্দেশ্যে এবং বোমা বানানোর নির্দেশনা দিয়ে শেয়ার করেছে।


গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি সিটিটিসির প্রধান বলেন, তারা টেলিগ্রাম গ্রুপের মাধ্যমে সক্রিয় থেকে উগ্রবাদী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। গ্রেপ্তারকৃত ও তাদের অন্যান্য সহযোগীরা পরস্পরের যোগসাজসে উগ্রবাদী ও আক্রমনাত্মক ভিডিও ও তথ্য শেয়ার এবং নিজেদের মধ্যে গোপন তথ্য দেন। তারা ওই গ্রুপে উগ্রবাদী ও আক্রমনাত্মক প্রশিক্ষনের বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি সচিত্র প্রশিক্ষণ ডকুমেন্টস(পিডিএফ,ভিডিও, অডিও) আদান প্রদান করতো। পলাতক অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।


গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে একটি মামলা করা হয়েছে। সিটিটিসি ইউনিটের সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের ডিজিটাল ফরেনসিক টিম অভিযানটি পরিচালনা করেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুকে আমরা