" />
বগুড়া প্রতিনিধি: বগুড়া করতোয়া নদীর ওপর পরিত্যাক্ত ফতেহ আলী ব্রিজের টেন্ডার কাজ গত ডিসেম্বর মাসের ১৬ তারিখে সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হতে যাচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যাক্ত বগুড়ার করতোয়া নদীর উপর দৃষ্টিনন্দন ফতেহ আলী ব্রিজের নির্মাণ কাজ। তাছাড়া টেন্ডার যাচাই-বাছাই করে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে শুরু হওয়ার আশাবাদ ব্যাক্ত করছেন জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান।
জানা যায়, ১৯৬২ সালে করতোয়া নদীর ওপর ৬৮ মিটার দীর্ঘ ফতেহ আলী সেতু নির্মাণ করে তৎকালীন সড়ক ও জনপথ বিভাগ। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সেতুটির কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দেশ স্বাধীনের পর তা মেরামত করা হয়। এরপর আর সংস্কার না হওয়ায় দিন দিন সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। বগুড়া জেলা শহরের সঙ্গে সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও গাবতলী উপজেলার লোকজন এ সেতু হয়ে যাতায়াত করেন। তিন উপজেলার সাধারণ মানুষের যেমন চলাচলের পাশাপাশি তেমনি কৃষিপণ্যসহ সব যোগাযোগের ক্ষেত্রেও সেতুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক কথায় পূর্ব বগুড়ার মানুষের চলাচলের ভরসা ফতেহ আলী সেতু। ২০১৮ সালে বগুড়া সড়ক বিভাগ সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। তবে ব্রিজের দুই প্রান্তে বাঁশের খুঁটি দিয়ে ভারী যানবাহন বন্ধ করে দিয়ে শুধু রিক্সা ও মানুষ চলাচলের জন্য রাখা হয়েছে।
ব্রিজ পরিত্যক্ত হিসেবে গণ্য থাকায় ভারী যানবাহন চলাচলে বিকল্প সড়ক ব্যবহার হলেও পোহাতে হয় নানা দুর্ভোগ। এর ফলে প্রায় ৫কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ ঘুরে ভারী যানবাহনগুলো চলাচল করে। এ অবস্থায় সেতুটিও পুননির্মাণের উদ্যোগ নেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সেতুটি নির্মাণ হলে দুর্ভোগ লাঘব হবে সাধারণ মানুষের।
বগুড়া শহরে চলাচলকারী কামরুজ্জামান জানান, ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকে পূর্ব বগুড়া থেকে জেলা সদরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। কয়েক কিলোমিটার ঘুরে চলাচলের ক্ষেত্রে নানা দুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে পণ্য পরিবহন খরচ।
সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক খোরশেদ আলম, পিন্টু মিয়া, আব্দুল জলিল জানান, সড়ক বিভাগ থেকে সেতুটির দুই পাশে খুঁটি দিয়ে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করেছে। এতে করে সিএনজিও পার হতে পারে না। সিএনজি পারাপারে কয়েক কিলোমিটার ঘুরে আসতে হয়। সেক্ষেত্রে ঘুরে আসার পথটিও সরু। সে পথে ভারী যানবাহন ও অন্যান্য বাস চলাচলের কারণে যানজটেরও সৃষ্টি হয়ে দুর্ভোগে পড়তে হয়।
জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এর দৃষ্টিনন্দন নকশার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২২ কোটি টাকা ব্যায়ে ব্রিজটি নির্মাণের অনুমোদন লাভ করে। ব্রিজটি লম্বায় হবে ৬৮ ফুট আর প্রস্থ হবে ৪০ ফুট । পুণ:নির্মাণ ব্রিজের দুইপাশে আড়াই মিটার প্রশস্ত ফুটপাত থাকবে। দুইপাশের পাঁচ ফুটসহ মোট চওড়া হবে ১২ দশমিক ৭৬ মিটার। এই ব্রিজ নির্মাণ হলে শহরের সাথে জেলার পূর্বাঞ্চলের উপজেলাতে মোটর যানচলাচল সহজতর হবে। এই ব্রিজটি জেলার পূর্বাঞ্চলের সাথে পশ্চিমাঞ্চলকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। গাবতলী ও সারিয়াকান্দি উপজেলার সাথে যোগাযোগ সহজ হবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.আসাদুজ্জামান জানান, বগুড়াবাসীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেতু হিসেবে পরিচিত পাবে এই ব্রিজটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে। অন্যদিকে সেতুটি হবে দৃষ্টিনন্দন যাহা সাধারণ মানুষের মনের খোরাক অনেকটাই মেটাবে। সেতুটি টেকসই দির্ঘস্থায়ী করতে দুইপাশে নদীর তীর রক্ষা বাঁধ তৈরী করা হবে। এছাড়া সেতু নির্মাণকালে বর্তমান সেতুর পাশ দিয়ে সাধারণ মানুষ চলাচলের জন্য ভ্রাম্যমান সড়ক নির্মাণ করা হবে বলে দাবী করে ওই কর্মকর্তা।