" />
নিজস্ব প্রতিবেদক: ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অস্থায়ী কর্মকর্তা। কয়েক বছরের ব্যবধানে হয়েছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। বলছি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবজাল হোসেনের কথা। ২০১৯ সালের ২৭ জুন আবজাল হোসেন ও তার স্ত্রী রুবিনা খানমের বিরুদ্ধে আলাদা দুটি মামলা করে দুদক। একটি মামলায় অবৈধভাবে অর্জিত ২৬৩ কোটি ৭৬ লাখ ৮১ হাজার ১৭৫ টাকা পাচারের অভিযোগ আনা হয়। আরেকটি মামলায় আবজালের বিরুদ্ধে ২০ কোটি ৭৪ লাখ ৩২ হাজার ৩২ টাকা অর্থপাচারের অভিযোগ আনা হয়। আর ৪ কোটি ৭৯ লাখ ৩৪ হাজার ৪৪৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু প্রায় সাড়ে বছরেও এসব মামলার তদন্ত শেষ করতে পারেনি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
২০১৯ সালের ২৭ জুন জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে আবজাল ও তাঁর স্ত্রী রুবিনা খানমের বিরুদ্ধে আলাদা দুইটি মামলা করে দুদক। এসব মামলার মধ্যে একটি মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান দুদকের উপপরিচালক তৌফিকুল ইসলাম। আরেকটি মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান দুদকের উপপরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম। কিন্তু দুদকের উপপরিচালক তৌফিকুল ইসলাম কিছুদিন আগে অবসরে গেছেন। ফলে তার তদন্তে থাকা মামলাটিরও নতুন তদন্তকারী কর্মকর্তা হয়েছেন মো. শহিদুল ইসলাম।
দুদকের একটি সূত্র জানায়, এই মামলার মধ্যে কোন মামলার তদন্ত কাজ এখনও শেষ হয়নি। তৌফিকুল ইসলামের করা অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলার তদন্ত কাজ শেষে দিকে। এই অবস্থায় তিনি অবসরে গেছেন। আর শহিদুল ইসলামের মামলার তদন্তও শেষ করতে পারেননি। আবজাল হোসেন বর্তমানে কাশিমপুর কারাগারে বন্দী রয়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দুদকের উপপরিচালক আরিফ সাদেক ঢাকাটাইমসকে বলেন, এই মুহুর্তে আবজালের বিষয়ে কোন তথ্য দিতে পারবো না। আমি এখন অফিস থেবে বাইরে চলে এসেছি।
কারাগারের একটি সূত্র জানায়, কারাগারে ভালোই আছেন আবজাল হোসেন। তবে তার স্ত্রী অষ্টেলিয়ায় পালিয়ে গেছেন। সেখানেও তাদের বাড়ি রয়েছে। করোনার কারণে কারাগারে দেখা স্বাক্ষাত একেবারে বন্ধ হওয়ায় আবজালকে দেখতে কেউই কারাগারে যাননি। কিন্তু তিনি নিয়মিত কারাগার থেকে ফোন করে পরিবার এবং আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন।
এ ব্যাপারে আবজাল হোসেনের আইনজীবী শাহিনুর ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, তিনি এখন কাশিমপুর কারাগারে বন্দী রয়েছেন। তবে আপাতত তার বিষয়ে আরো কোন তথ্য আমার কাছে নেই।
আবজাল হোেেনর বিরুদ্ধে একটি মামলায় অবৈধভাবে অর্জিত ২৬৩ কোটি ৭৬ লাখ ৮১ হাজার ১৭৫ টাকা পাচারের অভিযোগ আনা হয়। আরেকটি মামলায় আবজালের বিরুদ্ধে ২০ কোটি ৭৪ লাখ ৩২ হাজার ৩২ টাকা অর্থপাচারের অভিযোগ আনা হয়। আর ৪ কোটি ৭৯ লাখ ৩৪ হাজার ৪৪৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।
দুদক ও আদালত সূত্র বলছে,আবজাল হোসেন ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল এডুকেশন শাখার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তাঁর স্ত্রী রুবিনা খানম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন শাখার সাবেক স্টেনোগ্রাফার। তিনি রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে ব্যবসা করেছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামি আবজাল হোসেন একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে জমি, প্লট, বাড়িসহ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। মামলায় কাগজপত্রের তথ্য অনুযায়ী, আবজাল ও তাঁর স্ত্রীকে সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার নোটিশ দেয় দুদক। নোটিশ পেয়ে আবজাল ও তাঁর স্ত্রী দুদকের কাছে সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেয়।
দুদকের তথ্য অনুযায়ী, আবজাল সব মিলিয়ে ৩০ হাজার টাকার মতো বেতন পান। অথচ চড়েন হ্যারিয়ার ব্র্যান্ডের গাড়িতে। ঢাকার উত্তরায় তাঁর ও তাঁর স্ত্রীর নামে বাড়ি আছে পাঁচটি। আরেকটি বাড়ি আছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় আছে অন্তত ২৪টি প্লট ও ফ্ল্যাট। দেশে-বিদেশে আছে বাড়ি-মার্কেটসহ অনেক সম্পদ। এসব সম্পদের বাজারমূল্য হাজার কোটি টাকারও বেশি।
আবজাল হোসেনের বাড়ি ফরিদপুরে । ১৯৯২ সালে তৃতীয় বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর আর পড়াশোনা করা হয়নি তাঁর। ১৯৯৫ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের সুপারিশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৫টি মেডিকেল কলেজ স্থাপন প্রকল্পে অফিস সহকারী পদে অস্থায়ীভাবে যোগ দেন তিনি। ২০০০ সালে প্রকল্পটি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত হলে তিনি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে অফিস সহকারী হিসেবে যোগ দেন।
উত্তরায় ১৩ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর রোডের ভবনটি স্ত্রীর নামে ২০১০ সালে কিনেছিল আবজাল। এ ভবনের ছয় তলায় থাকতেন আবজাল দম্পতি। উত্তরায় একই সেক্টরের ১৬ নম্বর সড়কেও আরেকটি ভবন রয়েছে আবজালের।
২০২০ সালের ৭ জানুয়ারি আবজাল দম্পতির বিদেশযাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে পুলিশের বিশেষ শাখায় চিঠি দেয় দুদক। এরপর ১০ জানুয়ারি তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে সংস্থাটি।
আবজাল দম্পতির ২৫ বাড়ি-প্লট জব্দ
দুদকের তথ্য অনুযায়ী, আবজাল চড়তেন হ্যারিয়ার ব্র্যান্ডের গাড়িতে। ঢাকার উত্তরায় তার ও তার স্ত্রীর নামে বাড়ি আছে পাঁচটি। আরেকটি বাড়ি আছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় আছে অন্তত ২৪টি প্লট ও ফ্ল্যাট। দেশে-বিদেশে আছে বাড়ি-মার্কেটসহ অনেক সম্পদ। এসব সম্পদের বাজারমূল্য হাজার কোটি টাকারও বেশি।