" /> হায়দারাবাদের অষ্টম ও শেষ নিজাম মুকাররম জাহ বিপুল সম্পত্তির মালিক থেকে নিঃস্ব – নাগরিক দৃষ্টি টেলিভিশন
শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩, ০৭:১৭ পূর্বাহ্ন

হায়দারাবাদের অষ্টম ও শেষ নিজাম মুকাররম জাহ বিপুল সম্পত্তির মালিক থেকে নিঃস্ব

Mukkaram jah e1674393728441

5 / 100

হায়দারাবাদের অষ্টম ও শেষ নিজাম, নবাব মীর বরকত আলি খান বালাশন মুকাররম জাহ বাহাদুরকে বুধবার রাতে তার পূর্বপুরুষদের রাজধানী শহরেই পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে। মুকাররম জাহর বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। তিনি ১৪ জানুয়ারি তুরস্কের ইস্তানবুলে মারা যান।
তার দপ্তর থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “মহামহিম নবাব মীর বরকত আলি খান বালাশন মুকাররম জাহ বাহাদুরের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার জন্ম-শহর হায়দারাবাদে দাফন করা হয়।“

ইস্তানবুল থেকে হায়দারাবাদে আনার পরে তার মরদেহ চৌমহলা প্যালেসে রাখা ছিল। তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে হাজার হাজার মানুষ হাজির হয়েছিলেন ওই প্যালেসে।

হায়দারাবাদের শেষ নিজাম মীর উসমান আলি খান বাহাদুরের নাতি ছিলেন এই মুকাররম জাহ।
সপ্তম নিজাম মীর উসমান আলি খান ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত হায়দারাবাদের শাসক ছিলেন। তার পুত্র, আজম জাহ এবং রাজকুমারী দুরু শহবরের পুত্র মুকাররম জাহের জন্ম হয় ১৯৩৩ সালে।
‘দ্যা হিন্দু’ সংবাদপত্রের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, উসমান আলি খান উত্তরাধিকারী হিসাবে নিজের ছেলেকে বেছে না নিয়ে নাতি মুকাররম জাহকে পরবর্তী নিজাম হিসাবে ঘোষণা করে গিয়েছিলেন।
একই প্রতিবেদনে ‘দ্যা হিন্দু’ লিখেছে যে ১৯৬৭ সালে রাজ্যাভিষেকর পরে অষ্টম নিজাম হন মুকাররম জাহ। সেই রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানও হয়েছিল চৌমহলা প্যালেসেই, যেখানে দাফনের আগে তার মরদেহ রাখা হয়েছিল। অভিষেকের পরেই মুকাররম জাহ অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান। কিছুদিন পরে তুরস্কে পাকাপাকি ভাবে থাকতে শুরু করেন তিনি।

হায়দারাবাদ থেকে প্রকাশিত ‘সিয়াসত’ সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী সপ্তম নিজামের উত্তরাধিকারী হিসাবে মুকাররম জাহ পৃথিবীর সব থেকে বড় সম্পত্তির মালিক হয়েছিলেন। কিন্তু বিলাসী জীবনযাপন, রাজকীয় মহলের দেখভালে অবহেলা, বেহিসাবির মত দামী অলঙ্কার কিনতে খরচ করা ছিল মুকাররম জাহের স্বভাব। সেইভাবেই সব সম্পত্তি শেষ হয়ে যায় অষ্টম নিজামের। উত্তরাধিকার সূত্রে মুকাররম জাহ ২৫ হাজার কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি পেয়েছিলেন। সেই সময়ে তার বয়স ছিল মাত্র ৩০ বছর। কিন্তু বেহিসাবি জীবনযাপনের ফলে শেষ দিনগুলো তাকে কাটাতে হয়েছিল একটা দুই কক্ষের ফ্ল্যাটে।

হায়দারাবাদের যে নিজাম শাসনের শুরু হয়েছিল ১৭২৪ সালে, তা জারি ছিল ১৯৪৮ পর্যন্ত। হায়দারাবাদের শেষ শাসক, নিজাম – আসফ জাহ মুজফ্ফরুল মুল্ক স্যার উসমান আলি খান ১৯১১ সালে শাসনভার গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ শাসকদের খুব কাছের মানুষ। টাইম ম্যাগাজিন ১৯৩৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি উসমান আলি খানের ওপরে একটা সংখ্যাই ছেপেছিল। সেই সময়ে তিনিই ছিলেন বিশ্বের সব থেকে ধনী মানুষ। তার কাছে ২৪২ ক্যারেটের ‘জেকব’ হীরা ছিল। এটি পৃথিবীর সবথেকে বড় হীরেগুলির একটা। যারা ওই হীরা দেখেছেন, তাদের কথায়, হীরেটি একটা ছোট লেবুর আকৃতির ছিল। ওই হীরা রক্ষা করার জন্য সেটিকে একটা সাবানের বাক্সের ভেতরে লুকিয়ে রাখা হত। কখনও আবার নিজাম সেটিকে পেপারওয়েট হিসাবেও ব্যবহার করতেন।

স্বাধীনতার পরে যে তিনটি দেশীয় রাজ্য ভারতে যোগদান করতে অস্বীকার করেছিল, তারই অন্যতম ছিল হায়দারাবাদ । তবে ভারত সরকার সেনাবাহিনী পাঠিয়ে ১৯৪৮ সালে হায়দারাবাদ দেশের বাকি অংশের সঙ্গে মিশিয়ে দেয়। হায়দারাবাদের সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের পরে ভারত সরকার নিজামের সমর্থক কাশিম রিজভি এবং লায়েক আহমেদকে হেফাজতে নেয়। লায়েক আহমেদ হেফাজত থেকে পালিয়ে বোম্বে (বর্তমানের মুম্বাই) চলে যান আর সেখান থেকে বিমানে করে পাকিস্তান পৌঁছেন।
কিন্তু ভারত সরকার সপ্তম নিজাম বা তার পরিবারের কোনও ক্ষতি করেনি। তাদের সপরিবারে নিজেদের প্রসাদেই থাকার অনুমতি দিয়েছিল সরকার। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পরে ৫৬২তম দেশীয় রাজ্য হিসাবে হায়দারাবাদ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। সপ্তম নিজাম ও ভারত সরকারের মধ্যে ১৯৫০ সালের ২৫ জানুয়ারি স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী নিজাম বছরে ৪২ লক্ষ ৮৫ হাজার ৭১৪ টাকা প্রিভি পার্স হিসাবে পেতেন। হায়দারাবাদ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হলেও নিজাম সেখানকার গভর্নর ছিলেন ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত। রাজ্য পুনর্গঠনের পরে নিজামের পূর্বতন সাম্রাজ্য ভেঙ্গে তিনটি রাজ্য তৈরি হয় – অন্ধ্র প্রদেশ, কর্ণাটক এবং মহারাষ্ট্র। সপ্তম নিজাম মীর উসমান আলি খান ১৯৬৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মারা যান।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুকে আমরা