" /> মশার জাত বুঝে কীটনাশক প্রয়োগ বাড়াতে চায় ডিএনসিসি – নাগরিক দৃষ্টি টেলিভিশন
রবিবার, ২৬ মার্চ ২০২৩, ০৫:৫২ অপরাহ্ন

মশার জাত বুঝে কীটনাশক প্রয়োগ বাড়াতে চায় ডিএনসিসি

WhatsApp Image 2023 01 21 at 16.39.03 min

নিজস্ব প্রতিবেদক: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আয়োজনে দেশটির ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের কমার্শিয়াল ল ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রামের (সিএলডিপি) আমন্ত্রণ ও অর্থায়নে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধি দল ফ্লোরিডা সফর করে।

প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। সফরকালে মশক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দেশটির অভিজ্ঞতা হাতে কলমে শিখিয়ে দেন মিয়ামি ডেড কাউন্টির বিশেষজ্ঞরা। আর মশা নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের এই সফল কার্যক্রম ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ডিএনসিসি মেয়র।

শুক্রবার স্থানীয় সময় সকালে ফিল্ড ভিজিট ও কর্মশালায় তথ্য উপাত্ত তুলে ধরার মাধ্যমে ডিএনসিসি প্রতিনিধি দলকে হাতে কলমে শিখিয়ে দিয়েছে মিয়ামি ডেড কাউন্টি কর্তৃপক্ষ।

কর্মশালায় তুলে ধরা হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা রাজ্যের মিয়ামি শহরে প্রায় ৫২ প্রজাতির মশার অস্তিত্ব রয়েছে। ফলে বছরের ৩৬৫ দিনই মশাবাহিত রোগ যেমন ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায় শহরটিতে।

WhatsApp Image 2023 01 21 at 16.39.01 min

রাজধানীর ঢাকার আবহাওয়ার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা স্টেটের মিয়ামি ডেড কাউন্টির বেশ সাদৃশ্য রয়েছে। সেখানকার তাপমাত্রা গড়ে ১৫ থেকে ৩৫ ডিগ্রীতে উঠানামা করে। মাঝে মাঝে ভারি বৃষ্টিপাতও হয়ে থাকে। ফলে এডিস বাহিত ডেঙ্গুসহ সব ধরণের মশাবাহিত রোগের উর্বর ক্ষেত্র হতে পারত মিয়ামি। কিন্তু সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কারণে মশাবাহিত রোগ পুরোটাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে মিয়ামি ডেড কাউন্টি কর্তৃপক্ষ।

মিয়ামিতে মশা ধ্বংস করার ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে মশার প্রজাতি নির্ণয়। কেননা মশার ধরণ বুঝে ওষুধ স্প্রে করতে পারলেই কেবল মশার বংশবৃদ্ধি রোধ করা সম্ভব। অন্যথায় প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা ফগার স্প্রে করে কোনভাবেই মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে মিয়ামি ডেড কাউন্টি কর্তৃপক্ষ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা রাজ্যের মিয়ামি শহরের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান ডিএনসিসিতে কাজে লাগাতে চান ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, আমরা এতো দিন ভুল পদ্ধতি ব্যবহার করেছি। তাতে মশা তো ধ্বংস হয়নি বরং অর্থের অপচয় হয়েছে। তাই অতিদ্রুত ডিএনসিসি মশার প্রজাতি চিহ্নিত করতে একটি ল্যাব স্থাপন করতে চাই। মিয়ামি থেকে যে জ্ঞান অর্জিত হয়েছে সেটির সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে ডিএনসিসিকে মশক মুক্ত রাখতে চাই।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে তাদের সিডিসির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আমাদের দেশের কীটত্ত্ববিদদের নিয়ে একটি সভার আয়োজন করবো। তারা আসলে কীভাবে সফল সেটি কীভাবে ঢাকাতে প্রয়োগ করা যায় তার কর্মপদ্ধতি ঠিক করা হবে।

ডিএনসিসি মেয়র আরও বলেন, প্রয়োজনে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আলাপ করে তাদের ল্যাবেই মশার জীবন প্রকৃতি নির্ণয়ে কাজ করা যেতে পারে। আর ফগিংয়ে অর্থ অপচয় না করে লার্বিসাইডিংয়ে মনোযোগী হতে হবে। আমরা দেখেছি মিয়ামি আর ঢাকার আবহাওয়া এবং মশার ধরণ একই। তাই তারা সফল হলে অবশ্যই আমরা সফল হবো।

এখন আর পিছিয়ে থাকার সময় নেই। উন্নত দেশ তাদের পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারলে ঢাকাকেও মশামুক্ত করা সম্ভব। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিএলডিপি কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।

মিয়ামি ডেড কাউন্টি যেভাবে মশা নিয়ন্ত্রণ করে:
প্রথমমতো তারা মশার প্রজনন স্থল খুঁজে বের করতে একটি টিমকে দায়িত্ব দিয়ে থাকে। তারা খুঁজে খুঁজে মশার প্রজনন স্থল থেকে পূর্ণাঙ্গ মশা ও মশার ডিম সংগ্রহ করে তাদের ল্যাবে পাঠিয়ে দেয়। ল্যাবে থাকা বিশেষজ্ঞরা সেই মশা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে প্রজাতি পৃথক করে দেন। দেখা যায় এক জায়গায় কিউলেক্স বেশি তো আর এক জায়গা এডিস মশা বেশি।

আবার অন্য জায়গায় পাওয়া যায় ইজিপ্ট মশা। এভাবে মশার প্রজাতিত নির্ণয় করা থাকে। মিয়ামির ডেড কাউন্টি কর্তৃপক্ষের দাবি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫২ প্রজাতির মশা রয়েছে। প্রজাতি চিহ্নিত করতে পারলেই মশা নিয়ন্ত্রণের প্রথম ধাপ শেষ হয়।


মশার ধরণ বুঝে পরিমিত ওষুধ স্প্রে করার মাধ্যমে স্ব স্ব প্রজাতির মশা ধ্বংস করা হয়। তারা ফগিংকে গুরুত্ব না দিয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন লার্বিসাইডিংকে। তাদের মশক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মোট বাজেটের ৮০ ভাগই খরচ হয় লারবিসাইডিং কার্যক্রমে। তাদের দাবি ফগিং পুরনো পদ্ধতি। এটি দিয়ে মশা কখনও মরে না। তাই মশা নিয়ন্ত্রণও সম্ভব হয় না। যে কারণে তারা মশার প্রজনন স্থান চিহ্নিত করে সেখানে লার্বিসাইডিং কার্যক্রম বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। আর কীটনাশকেও পরিবর্তন আনার পরামর্শ দিয়েছেন।

দেশে সাধারণত টেমিফস্ট ও নোভারিয়ন ওষুধ ব্যবহার করা হয়। দীর্ঘ দিন এই ওষুধ ব্যবহার করার ফলে সেখানে ওষুধের কার্যকারিতা নষ্ট হয়েছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

যুক্তরাষ্ট্রে বেশি ব্যবহৃত হয় বিআইটি। মিয়ামিতে যে ল্যাব রয়েছে সেটি খুব বড় কোনো জায়গা নিয়ে নয়। মাত্র ৫০ বর্গফুটের দুটি রুমে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দিয়ে মশার জীবন চক্র নির্ণয় করে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। কীটনাশক ব্যবহারে তারা মানুষের ব্যবহার কমিয়ে যন্ত্রের উপর নির্ভরশীলতা দেখিয়েছেন। এখানেও রয়েছে ভিন্নতা। তাদের দাবি মানুষের মাধ্যমে কীটনাশক মিশ্রণ ঘটালে কমবেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই যন্ত্রের মাধ্যমে সঠিক পরিমাণের কীটনাশক মিশিয়ে একটি গাড়ীর মাধ্যমে খোলা জায়গায় স্প্রে করে থাকে।

গাড়িটির স্প্রে যন্ত্র ১০০ ফুট উপরে এবং ডানে বামে ঘুরিয়ে স্প্রে করার সক্ষমতা রাখে। এতে কীটনাশকের পরিমিত ড্রফলেটটি মশার প্রজনন ক্ষেত্রে পড়ে। মজার বিষয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মশক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা দেশটির ডিপার্টমেন্ট অব সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের কর্তৃপক্ষের হাতে।

মশক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দিনব্যাপী কর্মশালা ও ফিল্ড পরিদর্শনে সহায়তা করেন দেশটির ডিপার্টমেন্ট অব সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের অপারেশন ম্যানেজার উসিক উনলু ও পরিচালক ড. উইলিয়াম ডি পেট্রি।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে রয়েছেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক, ২৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ আল মঞ্জুর, ৫২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ আহমেদ, সংরক্ষিত কাউন্সিলর রাজিয়া সুলতানা ইতি ও মিতু আক্তার, ডিএনসিসির প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. বরকত হায়াত, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) অতিরিক্ত ড্রেনেজ সার্কেল আবুল হাসনাত মো. আশরাফুল আলম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সিভিল) খন্দকার মাহবুব আলম, নির্বাহী প্রকৌশলী অতিরিক্ত দায়িত্ব পরিকল্পনা ও নকশা বিভাগ তাবাসসুম আব্দুল্লাহ, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইমদাদুল হক, নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) ফারুক হাসান মো. আল মাসুদ, মেয়রের একান্ত ব্যক্তিগত সহকারী ফরিদ উদ্দিন প্রমুখ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুকে আমরা