" />
কারাবন্দী বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাসায় গিয়ে সহমর্মিতা জানিয়েছেন বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা।
রোববার (২৫ ডিসেম্বর) রাতে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও কাদের গনি চৌধুরীর নেতৃত্বে পেশাজীবীদের একটি প্রতিনিধি দল বিএনপি মহাসচিবের উত্তরার বাসায় তার সহধর্মিণী রাহাত আরা বেগমের সাথে দেখা করেন।
তারা বিএনপি মহাসচিবের সহধর্মিণীসহ পরিবারের সদস্যদের সার্বিক খোঁজখবর নেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ড. শামসুল আলম সেলিম, প্রফেসর মোর্শেদ হাসান খান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জল, রফিকুল ইসলাম, প্রফেসর ড. কামরুল আহসান, কৃষিবিদ প্রফেসর ড. গোলাম হাফিজ কেনেডি, সাংবাদিক শহিদুল ইসলাম, ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম, প্রফেসর ড. নুরুল ইসলাম, প্রফেসর ড. মামুন অর রশিদ, প্রফেসর আবু জাফর খান, ড. ইমতিয়াজ খান, ডা. আমিনুল বারি কানন, ডা. সোহেল আহমেদ, প্রফেসর ড. ইদ্রিস আলী, ব্যারিস্টার আবুল হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার মো: হানিফ, ইঞ্জিনিয়ার এ বি এম রুহুল আমিন আকন্দ, ইঞ্জিনিয়ার কাজী সাখাওয়াত হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার আবদুর রশিদ মিয়া, ইঞ্জিনিয়ার ওমর ফারুক, সাংবাদিক রিয়েল রোমান, তানভীরুল হাসান খান, কল্লোল প্রমুখ।
এ সময় সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তি জামিন পাওয়ার অধিকারী। সেই হিসেবে জামিন পাওয়ার যোগ্য মির্জা ফখরুল। এছাড়া বর্তমানে যে অভিযোগে তিনি কারাগারে রয়েছেন, প্রায় একই রকমের ৯০টি মামলায় এর আগে তিনি জামিন পেয়েছেন। শুধু রাজনৈতিক কারণে তার জামিন প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে। এতে আদালতের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে আস্থার সঙ্কট দেখা দিতে পারে।
পেশাজীবিদের শীর্ষ এ নেতা বলেন, মির্জা ফখরুল দেশের একজন অতি গুরুত্বপূর্ণ ও বয়োজ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ। ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশের ঠিক আগের দিন তাকে গ্রেফতার এবং বারবার তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করায় জনমনে এ ধারণাই প্রবল হচ্ছে তার বিরুদ্ধে মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল বাংলাদেশের একজন মার্জিত রাজনীতিক। তিনি এদেশের মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করছেন। তার বয়স এখন ৭৬ বছর। তিনি নানান জটিল রোগে ভুগছেন। তার বিরুদ্ধে গত ১০ বছরে ৯২টি মামলা দেয়া হয়েছে। এসব মামলা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ইতোমধ্যে ৯০টিতেই জামিন পেয়েছেন তিনি। একটি মামলা খারিজ এবং সর্বশেষ রাজধানীর নয়াপল্টনের মামলায় নিম্ন আদালতে জামিন আবেদন নাকচ হয়ে গেছে। একই ধরনের সব মামলায় জামিন পেলেও নতুন মামলায় কেন তার জামিন হচ্ছে না, তা বুঝতে কারো বাকি নেই।
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব সাংবাদিক কাদের গনি চৌধুরী বলেন, সামাজিক অবস্থান, বয়স ও শারীরিক অসুস্থতা বিবেচনায় তিনি জামিন পাওয়ার যোগ্য। জামিন না দিয়ে ন্যায়বিচার থেকে তাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, জামিন না দেয়া এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতায় পরিণত হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে বোঝা যায়, বিচারব্যবস্থা অচল এবং এর পরিবর্তন আবশ্যক। আদালতকে তার ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিচারপ্রার্থী কোনোভাবেই যেন হয়রানির শিকার না হন, তা বিবেচনা করতে হবে। মামলার এজাহারে তার নাম নেই, সুনির্দিষ্টভাবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগও নেই। তারপরও তাকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। এটা কি মগের মুল্লুক? অভিযোগ আনলেই হয় না। অভিযোগের সম্পৃক্ততাও আদালতে প্রমাণ করতে হবে। সম্পৃক্ততা থাকলে আদালত তাকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিতে পারেন। রাষ্ট্রপক্ষের বিরোধিতার কারণে জামিন না দেওয়াটা কাঙ্ক্ষিত নয়। এভাবে বিচারব্যবস্থা চলতে পারে না। প্রচলিত বিচারব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে। নয়তো আমাদের চরম মূল্য দিতে হবে।
ড. মোর্শদ হাসান খান বলেন, আইনগতভাবে মির্জা ফখরুল জামিন পাওয়ার যোগ্য। শুধু রাজনৈতিক কারণেই তাকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। মির্জা ফখরুল একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক দলের মহাসচিব। তিনি বোমাও মারেননি, তার কাছে বোমা পাওয়াও যায়নি। মির্জা ফখরুলকে যে মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে, সেখানে এজাহারে তার নাম নেই। মামলার এজাহারে তাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ নেই। এজাহারে যাদের নাম ছিল, তাদের মধ্যে দু’জন জামিনে গেছেন। একই আদালত মির্জা ফখরুলের জামিন আবেদন নাকচ করছেন। এখানে মনে হয়, নিম্ন আদালত হয়তো স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারছেন না। বয়স ও রাজনৈতিক অবস্থান বিবেচনায় আদালত তাকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিতে পারতেন।
প্রফেসর শামসুল আলম সেলিম বলেন, বিএনপি অফিসের সামনে কথিত ঘটনার ১৪ ঘণ্টা পর পুলিশ মামলা করেছে। এখানে মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ নেই। তার পরও তাকে জামিন দেয়া হয়নি। জামিন পাওয়া তার আইনি অধিকার। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ধারায় উল্লেখ আছে কাকে, কখন, কীভাবে জামিন দিতে হবে।