" />
বগুড়া প্রতিনিধি: বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। এ মাস থেকেই জমে উঠছে বগুড়ার ফুলের বাজার। তাছাড়া এ মাসে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও মহান বিজয় দিবসেই প্রায় ১৫ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করেছেন বলে ফুল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। তাছাড়া ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত বিভিন্ন দিবসে, বিয়ের অনুষ্ঠানসহ রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ফুলের চাহিদা রয়েছে। এতে করে ফুলের চাহিদা বেশি থাকে ও বিক্রিও বেড়ে যায়। সারা বছর বগুড়ার বাজারে প্রায় সোয়া ৪ কোটি টাকার ফুল কেনাবেচা হয়ে থাকে। এর মধ্যে খুচরা দোকানে প্রায় আড়াই কোটি টাকা আর পাইকারি বাজারে দেড় কোটি টাকার ফুল কেনাবেচা হয়।
রবিবার(১৮ ডিসেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বগুড়া শহরের সাতমাথা এলাকায় শহীদ খোকন পৌর শিশু উদ্যানের ধার ঘেঁষে রয়েছে ছোট্ট একটি ফুলবাজার। বাহারী ও রঙ বেরঙের সুগন্ধি ফুলের সমাহার ওই বাজারে। প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত সেখানে থাকে নানা শ্রেণি পেশার মানুষের আনাগোনা। এটিই জেলার একমাত্র জায়গা যেখানে প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরনের ফুল বিক্রি হয়। যেকোনো উৎসবে জেলার বাসিন্দাদের একমাত্র ভরসা এই ফুলবাজার। প্রায় ১৮ বছর আগে সেখানে ফুলবাজার গড়ে ওঠে। সেখানে বছরের চার কোটি টাকার ফুল কেনাবেচা হয়। এর আগে, শহীদ খোকন পৌর শিশু উদ্যানের সামনে ফুটপাতে বসে ফুল বিক্রি করতেন ব্যবসায়ীরা।
ফুল ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপচারিতায় জানা যায়, বগুড়ার এই ফুলবাজারে ১৭টি দোকান রয়েছে। প্রতিটি দোকানে দিনে গড়ে পাঁচ হাজার টাকার ফুল বিক্রি হয়। তবে আর্থিক এই হিসাব বিশেষ কিছু দিন বাদ দিয়ে করা হয়েছে। কারণ বিশেষ কিছু দিনে অনেক দোকানে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকার ফুল কেনাবেচা হয়। যেকোনো উৎসব বা অনুষ্ঠানে বাড়ি, হোটেল, রিসোর্ট পূজা ম-প, মন্দির, সাজাতেও এখান থেকেই ফুল কেনেন জেলার বাসিন্দারা। এছাড়াও ফুলের পাপড়ি আর রঙ তুলি দিয়ে আলপনা, বিভিন্ন স্টেজ, বুর্কেট, ঝুড়ি সাজিয়ে দেওয়া হয়। কাউকে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য ফুলের তোড়াও তেরী করে দেন তারা।
এই ফুলবাজারে হলুদ গাঁদা, রজনীগন্ধা, জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকা, লাল, সাদা ও থাই গোলাপ, বেলি, কামিনী, সূর্যমুখী, ডালিয়া, টিউলিপ, লিলি, অর্কিটসহ আরও অনেক প্রজাতির ফুল বিক্রি হয়। এবার দেশি প্রতিটি লাল গোলাপ বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ৪০ টাকা, বিদেশি লাল গোলাপ, সাদা, গোলাপী গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। রজনীগন্ধার প্রতি স্টিক ১৫ থেকে ২০ টাকা, একগুচ্ছ সাদা চন্দ্রমল্লিকা ৫০ থেকে ৭০ টাকা, গ্লাডিওলাস প্রতি পিস ১০ থেকে ২০ টাকা, জারবেরা প্রতিটি ২০ থেকে ২৫ টাকা, জিপসি ফুল-২০ টাকা, হাইব্রিড ১৫ টাকা, গাদাফুল ১০০টি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এবার গাধা ফুল বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা শ’ হিসেবে। এসব ফুল বগুড়ার পাশপাশি ঢাকা, যশোরের কালিগঞ্জ, ঝিনাইদহ ও মেহেরপুর থেকে তারা ফুল সংগ্রহ করেন। এমনকি দেশের গ-ি পেরিয়ে ভারত থেকেও ফুল আমদানি করা হয়। তাইতো এ বাজারটি বগুড়ায় ফুলপট্টি নামেও পরিচিত।
ফুল ব্যবসায়ী রমজান আলী বলেন, বছর জুড়েই কমবেশি ফুলের চাহিদা থাকে। যেকোনো বিশেষ দিনে তাদের বেচাকেনা ভালো হয়। অনেক প্রজাতির ফুলই রয়েছে তাদের কাছে। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ফুলের তৈরী নানা জিনিসও তারা বিক্রি করেন।
বগুড়া শহরের চেলোপাড়া(বৌ বাজার)এলাকার সুব্রত ঘোষ বলেন, বসন্তবরণ ও ভালোবাসা দিবসে ফুলের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। ওই সময় ফুলবাজারে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে ফুল কিনতে হয়। একই অবস্থা হয় জাতীয় দিবসগুলোতেও। তবে ফুলের চাহিদা বাড়তেই দামও বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা।
বগুড়া ফুল ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও করতোয়া ফুলঘরের মালিক লক্ষণ দাস অমিত বলেন, ‘অনুষ্ঠান ও উৎসব উপলক্ষে সারা বছরই ফুলের কেনাবেচা হয়। সপ্তাহে তিনদিন (বুধবার, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার) ফুল বিক্রি বেশি হয়।’ তবে বিশেষ দিনগুলোতে (জাতীয় উৎসবসহ) অনেক দোকানে দেড় লাখ টাকার ফুল বিক্রি হয়। সবমিলে ফুলের এই বাজারে বছরে প্রায় সোয়া চার কোটি টাকার ফুল বেচাকেনা হয়। দেশের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি ভারত থেকেও ফুল আমদানি করা হয়। আমি নিজেও ভারত থেকে ফুল নিয়ে আসি। এছাড়াও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী আমরা ফুল সরবরাহ করা হয় তিনি জানান।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো.আব্দুর রহিম জানান, এ বছর জেলায় ২৬ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হয়েছে। বগুড়ায় ফুলের চাহিদা এবং চাষ দুটোই অনেকাংশে বেড়ে গেছে। অনেক বেকার যুবক ফুল চাষের সাথে জড়িত হয়ে বেশ লাভবান হয়েছেন। তবে জেলায় ফুলের চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, রংপুর, দিনাজপুর, সিরাজগঞ্জসহ অন্যান্য জেলায় বিক্রি হচ্ছে বলেও দাবী করেন ওই কর্মকর্তা।