" />
নিজস্ব প্রতিবেদক: সাংবাদিকতার এবং গোয়েন্দা পরিচয়ের আড়ালে মাদক ব্যবসা করতেন একটি চক্র। চক্রের সদস্যরা নিজের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে সখ্যতা গড়ে তুলতেন যাতে তাদের যানবাহন কেউ তল্লাশি না করে। এমন সব অভিযোগে রাজধানীর বংশাল এলাকা থেকে ভূয়া সাংবাদিক পরিচয়ে মাদক বহনকালে বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ চারজন মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৩।
মঙ্গলবার দুপুরে র্যাব-৩ এর সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে.কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, র্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল সোমবার দিবাগত রাতে রাজধানীর বংশাল এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানে একটি ব্যক্তিগত গাড়ির পিছনের ডালা থেকে বিশেষ কায়দায় লুকানো অবস্থায় তিনটি ব্যাগ ভর্তি ৫০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। আর মো. মুকুল হোসেন ওরফে মকবুল আহমেদ, তার সহযোগী মো. আব্দুল শাহীন ওরফে নোমান হোসেন, মো. ফয়সাল ও মো. আল-আমিন হোসেন নামের চারজন মাদক চোরাকারবারি চক্রের সদস্যদেরকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, এই মাদক চোরাকারবারি চক্রের মূলহোতা মুকুল হোসেন ওরফে মকবুল আহমেদ নিজেকে কখনো নারায়ণগঞ্জ ভিত্তিক লোকাল পত্রিকা ‘‘দৈনিক মাতৃভূমির খবর’’ এর একজন সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টার পরিচয় দিতেন। তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে চতুরতার মাধ্যমে কুমিল্লাসহ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যক্তিগত গাড়িতে করে অবৈধ মাদকদ্রব্য গাঁজার চালান এনে তার অন্য তিন সহযোগিসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নিজেদের হেফাজতে রেখে কেনা-বেচা করতেন। তার প্রধান সহযোগি ফয়সাল বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তার ব্যক্তিগত গাড়ির চালক। ছুটির দিনে বা অবসর সময়ে সুযোগ বুঝে ফয়সাল এই গাড়িটিকে ব্যবহার করে এই চক্রটির সাথে মিলে মাদকদ্রব্য চোরাচালানের কাজ করে থাকে।
সংবাদ সম্মেলনে লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গাড়ির মালিকের ব্যবহৃত আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের স্টিকার ব্যবহার করে তিনি নিয়মিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য আনা-নেয়া করে থাকেন। চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে মাদক পরিবহনের সময় পথিমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশি চৌকি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিজেদেরকে সাংবাদিক পরিচয় দেয়। যাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের মাদক পরিবহনের গাড়িটি তল্লাশি না করে ছেড়ে দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে মূলহোতা মুকুল হোসেন গত ২৫ বছর ধরে বিভিন্ন পরিবহনের চালক হিসেবে কাজ করতেন। তিনি অবৈধ পথে সহজেই অধিক অর্থ উপার্জনের আশায় ২০১৬ সাল থেকে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত হন। বিভিন্ন পরিবহনে চাকরি নেয়া স্বত্তেও মাদকের সাথে জড়িত থাকার কারণেই তিনি বারবারই চাকরিচ্যুত হয়। চাকরিচ্যুত হয়ে ২০২২ সালের শুরুর দিকে তিনি নতুন পথ খুজতে থাকেন। এ সময় চলতি বছরের জুন মাস থেকে নারায়ণগঞ্জ ভিত্তিক স্থানীয় পত্রিকা “দৈনিক মাতৃভূমির খবরের” এর গাড়ি চালক হিসেবে চাকরি শুরু করে। এই চাকরির পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকতার লগো ব্যবহার করে খুব সহজেই মাদকদ্রব্য চোরাচালানের কাজ চালাতে থাকে। একপর্যায়ে তার বিরুদ্ধে এসব অপকর্মের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেলে তাকে গত দুই মাস আগে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়। চাকরিচ্যুত হওয়ার সময়ে তিনি লুকিয়ে “দৈনিক মাতৃভূমির খবর” পত্রিকার লগো সম্বলিত একটি মাউথস্পীকার নিয়ে আসেন যা ব্যবহার করে বর্তমানে তিনি মাদকদ্রব্য বহনকারী গাড়ি চালানোর সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশির মুখে পড়লে সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টার পরিচয় দিয়ে সহজেই পার পাওয়ার চেষ্টা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, এছাড়াও ভূয়া সাংবাদিক পরিচয়পত্র তৈরি করে নারায়ণগঞ্জসহ কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকা থেকে কৌশলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ মাদকদ্রব্য গাঁজা এনে তার তিন সহযোগীসহ মাদক কেনা-বেচার বিশাল সিন্ডিকেট তৈরি করে। এভাবে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন সময় সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে গাঁজাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্যের ব্যবসা করে আসছে। তার নামে ২০০৮ সালে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় এক ব্যক্তির মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে একটি হত্যা মামলাসহ একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে আজ পর্যন্ত একাধিক মামলায় তিনি বিভিন্ন মেয়াদে হাজতবাস করেছেন।
গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, আর গ্রেপ্তারকৃত ফয়সাল একজন উর্দ্ধতন সরকারি কর্মকর্তার ব্যক্তিগত গাড়ির চালক। ছুটির দিনে বা অবসর সময়ে সুযোগ বুঝে তিনি ওই গাড়িটিকে ব্যবহার করে চক্রটির সাথে মিলে মাদকদ্রব্য চোরাচালানের কাজ করে থাকেন। গাড়ির মালিকের ব্যবহৃত আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের স্টিকার ব্যবহার করে তিনি নিয়মিত বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য আনা-নেয়া করে থাকেন। গ্রেপ্তারকৃত মুকুল এবং ফয়সাল দুইজনেই ভিন্ন ভিন্ন দুইটি সম্মানজনক সংস্থার ভূয়া পরিচয় ব্যবহার করে মাদকদ্রব্য চোরাচালানের মত গর্হিত কাজ করে রাষ্ট্রের সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ প্রতারণা করে আসছেন। আর এই চক্রের অপরাপর দুই সহযোগি মো. আব্দুল শাহীন ওরফে নোমান হোসেন এবং আল-আমিন হোসেন বিভিন্ন জায়গা থেকে গাঁজাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য কেনা-বেচার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। তাদের প্রত্যেকের নামেই বিভিন্ন থানায় একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত মো. মুকুল হোসেন ওরফে মকবুল আহমেদ বগুড়া জেলার ধুনট থানার খাদুলি গ্রামের মৃত আবু বক্কর শেখের ছেলে, মো. আব্দুল শাহীন ওরফে নোমান হোসেন কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানার চরণল গ্রামের মৃত বসু মিয়ার ছেলে, আর আল-আমিন হোসেন একই গ্রামের মো. আমির আলীর ছেলে এবং মো. ফয়সাল নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও থানার গোপেরবাগ গ্রামের মো. নবীনের ছেলে।