" />
জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, জনগণের সম্মতি ও সমর্থন ছাড়া ক্ষমতা ধরে রাখতে গিয়ে সরকার রাষ্ট্রকে দলীয় ও ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত করে ফেলেছে। ফলে অন্যায় অবিচার এবং দুঃশাসনে সমাজ বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডির কাউন্সিল উত্তর রাজনৈতিক প্রস্তাবনা উপস্থাপন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
আ স ম আব্দুর রব বলেন, বিরোধী দল বিএনপির ঢাকার একটি সমাবেশকে কেন্দ্র করে, সরকারের যুদ্ধংদেহি মনোভাব, প্রাণহরণ দলীয় কার্যালয় লন্ডভন্ডসহ অনুর্বর মস্তিষ্কপ্রসূত সরকারের কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়।
নির্মম বাস্তবতা হচ্ছে পুলিশ এবং রাষ্ট্রযন্ত্র কেবলমাত্র ক্ষমতাসীন সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রমাণ ও নজির স্থাপন করে চলেছে। মানুষ হত্যা দুর্নীতি, অর্থপাচার এবং রাতে ভোট চুরির সবচেয়ে নিন্দনীয় অন্যায়। কাজকেও সরকার মহিমান্বিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে, যা ভয়াবহ অন্যায়।
তিনি বলেন, প্রজাতন্ত্র এখন কর্তৃত্ববাদী দেশের বৈশ্বিক তালিকায় স্থান পেয়েছে। দ্যা গ্লোবাল স্টেট অব ডেমোক্রেসি তালিকায় বাংলাদেশ কর্তৃত্ববাদী দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এটা রাষ্ট্রের জন্য লজ্জাজনক।
তিনি আরও বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিশেষ করে বাকস্বাধীনতা দমনে বা অনলাইনে মত প্রকাশ ঠেকাতে দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অন্যতম হাতিয়ার। সন্ত্রাসবিরোধী, জঙ্গিবিরোধী, গুজববিরোধী এবং জাতীয় নিরাপত্তার নামে এসব আইন অপপ্রয়োগের পথ প্রশস্ত করেছে। এসব আইনের পরিধি ও প্রকৃতি প্রতিনিয়ত ভিন্ন আকার নিয়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে আঘাতের মূল লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে।
তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনরা তাদের মিথ্যাকে ‘অল্টারনেটিভ ফ্যাক্ট হিসেবে সমাজে হাজির করতে চাচ্ছে। এটি যা সত্য এবং যা বাস্তব তা অস্বীকার করে মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠা বা গ্রহণযোগ্য করার ইচ্ছাকৃত রাজনৈতিক এক অপকৌশল। ব্যক্তির ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার নামে সরকার ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভিন্নমত ও পথকে সংকুচিত এবং বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গিকেও করে ফেলছে সীমিত। কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় বিরোধী রাজনৈতিক দলসহ শ্রমজীবী, কর্মজীবী, পেশাজীবী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো প্রতিনিয়ত সরকারের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে। গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গ্রেপ্তার এবং গায়েবি মামলা প্রজাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যকে চরমভাবে ক্ষুণ্ন করছে।
আ স ম আব্দুর রব বলেন, সরকার উন্নয়নের নামে দুর্নীতি, লুটপাট ও অর্থ পাচারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে এক দুর্যোগপীড়িত এবং ক্ষুধাভাড়িত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করছে। আর্থিক দুরাবস্থা সর্বত্র সংক্রমিত হয়ে ভয়ানক আয় হ্রাস পেয়েছে এবং জীবনযাত্রার মান নিম্নগামী হয়েছে। পাঁচ থেকে ছয় কোটি মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করছে। বিপন্ন মানুষের প্রতি, ক্ষুধাতাড়িত মানুষের প্রতি, অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের প্রতি সরকারের কোনো মনোযোগ নেই। নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ ক্রমাগত বাড়ছে। উন্নয়নের আত্মতুষ্টির আড়ালে গণতন্ত্র, সংবিধান ও মানবাধিকারকে বলি দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যমান সংকট নিরসনে সরকারের পদত্যাগ বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন, রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক সংস্কার প্রশ্নে যুগপৎ আন্দোলন শুরু হবে অচিরেই। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রকে সচেতনভাবে পরিকল্পনা অনুসারে বিনির্মাণ করার লক্ষ্যে জেএসডির ১০ দফা কর্মসূচি (সংক্ষেপিত) তুলে ধরেন। এগুলো হচ্ছে- সংবিধান সংশোধন, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা: মানবাধিকারের নিশ্চয়তা, রাষ্ট্র ব্যবস্থার আমূল সংস্কার, নিরপেক্ষ নির্বাচন, প্রজাতন্ত্র দিবস ঘোষণা, প্রতিরক্ষা বাহিনী আধুনিকীকরণ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান, জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিল গঠন, সার্কের অধীন উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক জোট গঠন করাসহ অন্যান্য বিষয় তিনি তুলে ধরেন।
এছাড়া তিনি গত ৪ ডিসেম্বর দলের কাউন্সিলে গৃহীত পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন আ স ম আব্দুর রব, বক্তব্য রাখেন জেএসডি সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন স্বপন, অ্যাড. আনোয়ার হোসেন তালুকদার, মো. সিরাজ মিয়াসহ অন্যান্য নেতারা।