জীবনের প্রতিটি বাঁকেই তিনি শ্রেষ্ঠত্বের নজির রেখে গেছেন। আদর্শ হিসেবে অনুকরণে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায় তারুণ্য থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে। ১৯৫৩ সালে ব্রিটিশ সিংহাসনে ২৬ বছর বয়সে অভিষেক হয় রানীর। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে যখন ব্রিটেনের প্রভাব ক্রমেই কমতে থাকে, রাজতন্ত্র প্রশ্নবিদ্ধ; তখনও অনেকের কাছে রানীর জনপ্রিয়তা কমেনি।ব্রিটেনের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের একজন, তাঁর ছিল রাজকীয় সম্পত্তি, সোনার গাড়িসহ আরও কত কী। কিন্তু তিনি ছিলেন মিতব্যয়ী। সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান থাকলেও দীর্ঘ রাজত্বে তিনি কখনও তাঁর সৈন্যদের অন্য কোথাও যুদ্ধে পাঠাননি। তাঁর আগে যারা ব্রিটেনের রাজা ছিলেন, তাঁদের কর্মকাণ্ড থেকে ঠিক উল্টো পথে সাম্রাজ্য চালিয়েছেন তিনি। অন্যদের সময় সাম্রাজ্যের পরিধি বাড়লেও, তাঁর শাসনে কমেছে উপনিবেশ শাসিত এলাকা। এখানেই তিনি ব্যতিক্রম। তাইতো তাঁকে ঈশ্বরের সন্তুষ্টির রানী আর মা বলে সম্বোধন করেন অনেকে। তাঁকে বিশ্বাসের প্রতীকও বলা হয়। ওয়াশিংটন পোস্ট।
৭০ বছর শাসন করা ব্রিটেনের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি রাজশাসক রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষ হয়েছে গতকাল। ৯৬ বছর বয়সী রানীর মৃত্যুতে শোকাহত বিশ্বনেতারা তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া উপলক্ষে ক’দিন আগেই জড়ো হন বাকিংহাম প্যালেসে। রাজকীয় আচার-অনুষ্ঠান শেষে তাঁকে সমাহিত করা হয়। এর আগে স্কটল্যান্ড থেকে মরদেহ ব্রিটেনে স্থানান্তরের সময় লাখ লাখ মানুষ তাঁর কফিন একনজর দেখার জন্য মাইলের পর মাইল দাঁড়িয়ে থাকেন রাস্তার দুই পাশে।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশ উপনিবেশ তখন অনেকটাই সংকুচিত হয়ে আসে। সিংহাসনে বসে তিনি যখন কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোতে দীর্ঘ সফরে বের হন, তখন ভারতীয় উপমহাদেশসহ অনেক দেশে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয়েছে।
১১৭টি দেশে রানীর ২৯০টি রাষ্ট্রীয় সফরের তথ্য দিয়েছে দ্য টেলিগ্রাফ। প্রতিবেদনে বলা হয়, রানীর কফিন দেখার জন্য লাখো মানুষের সারিতে শুধু ব্রিটিশরাই ছিলেন না। তাঁর সফরগুলো স্মরণ করেছিলেন নেপাল, মেক্সিকো, আইসল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ইথিওপিয়া, জাপান, ওমান, নরওয়ের নাগরিকরাও।
রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের আগে যাঁরা রাজত্ব করেছেন, তাঁদের শাসনামল ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যানের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। বিশেষ করে ব্রিটেনের সাবেক সাম্রাজ্য ও উপনিবেশ যেমন- ভারত, আয়ারল্যান্ড ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের নাগরিকরা ব্রিটিশ রাজাদের অত্যন্ত ঘৃণা করতেন। কিন্তু আগের রাজাদের মতো তিনি নতুন নতুন অঞ্চল জয় করেননি। যুদ্ধের পরে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য আর বাড়েনি। বরং সংকুচিত হয়েছে।
ব্রিটিশ রাজপরিবারের ওয়েবসাইটে বলা হয়, কমনওয়েলথের প্রধান হিসেবে, এলিজাবেথ বিশ্বব্যাপী দুই বিলিয়নেরও বেশি মানুষের জন্য একটি সংযোগ ছিলেন।
কেমব্রিজের অ্যান্ড্রু রস বলেন, তিনি শুধু আমাদের ছোট দেশ নয়, তিনি বিশ্বের রানী।
রানী সাংবিধানিক রাজা। তিনি যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রপ্রধান। যদিও তাঁর ক্ষমতা প্রতীকী ও আনুষ্ঠানিক। তাঁকে রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ থাকতে হয়। যুক্তরাজ্যে আইন প্রণয়ন বা আইন পাস করার ক্ষমতা দেশটির পার্লামেন্টের হাতে। এসব পার্লামেন্টের হাতে থাকলেও আইনে পরিণত হতে আনুষ্ঠানিকভাবে রানীর অনুমতি নিতে হয়।
হাজার বছরের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে অনেক রাজা-রানী এসেছেন। কিন্তু ৭০ বছরের দীর্ঘ সময়ে দ্বিতীয় এলিজাবেথ নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়।