স্বপ্নজয়ের একবুক আশা নিয়ে দীর্ঘ সাধনার পর শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয় দেশের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি)। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মেধাবী এই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তাদের মা-বাবা ও আত্মীয় স্বজনরাও। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলেই ভাবেন, এবার তাদের সন্তান উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে অনেক বড় হবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার কিছু দিনের মধ্যে ভাঙতে শুরু করে তাদের সেই স্বপ্ন। আর এই স্বপ্নভঙ্গের পেছনে নানা কারণের মধ্যে অন্যতম হলো ক্যাম্পাসের পরিবেশ।
দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে নানান ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্মারক এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ক্রমেই ফ্যাকাসে হয়ে আসছে। যার প্রতিফলন চোখে পড়বে আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ের দিকে তাকালেই। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে করা কোয়াককোয়ারেল সাইমন্ডসসহ (কিউএস) স্বীকৃত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর র্যাংকিংয়ে ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে ঢাবি। সেই সঙ্গে পিছিয়ে পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়টির লাগোয়া দেশের আরেক অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ও (বুয়েট)। অথচ এসব র্যাংকিংয়ে উন্নতি করছে দেশের বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধারা অব্যাহত থাকলে অচিরেই বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে ঢাবি-বুয়েটকে পেছনে ফেলে শীর্ষে উঠে আসবে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা এখানে এসে শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ পাচ্ছেন না, পাচ্ছেন না সুস্থ নিরিবিলি ক্যাম্পাস। আর ক্যাম্পাসে নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই দেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যার সকল প্রবেশ ধার সবসময়ই খোলা থাকে, ক্যাম্পাসের ওপর দিয়েই চলে লোকাল বাস, যে কেউ চাইলে যেকোনও সময় প্রবেশ করতে পারেন। রাত গভীর হলেই চলে দূরপাল্লার মালবাহী গাড়ি। শুক্রবার-শনিবারসহ ছুটির দিনগুলোতে ক্যাম্পাস হয়ে উঠে বিনোদন কেন্দ্র, বসে বহিরাগতদের মিলনমেলা।
সবসময় সবার জন্য উন্মুক্ত থাকায় উদ্বাস্তু, মাদকাসক্ত, ভবঘুরে আর বখাটেদের আশ্রয়স্থল যেন এই ক্যাম্পাস। টিএসসি, স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বর, যাত্রী ছাউনিসহ মেয়েদের হলগুলোর সামনে অবস্থান করে মাদকাসক্ত ভবঘুরেরা। আর হেনস্তার শিকার হতে হয় নারী শিক্ষার্থীদের। মাদকাসক্তরা নারী শিক্ষার্থীদের দেখলে অশ্লীল ইশারা করে।
ক্যাম্পাসের ভিতরেই ঘটে ছিনতাইয়ের ঘটনা। এ বছরের শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের হাকিম চত্বরে দিনেদুপুরে কয়েকজন নারী শিক্ষার্থী ছিনতাইয়ের শিকার হোন। হারান মোবাইল, টাকাসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানালে তারা শাহবাগ থানায় অভিযোগ করার পরামর্শ দেন। কিন্তু বহিরাগত থাকায় তাদের আজও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
ক্যাম্পাসে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে রাতের বেলায়ও। সংগঠিত এসব ঘটনার সঙ্গে অনেক সময় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত সিসিটিভি ক্যামেরার অধিকাংশই অকেজো। যার ফলে অপরাধীদের শনাক্ত করাও দুরুহ হয়ে পড়ে।
আর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর পরিবেশ নিয়েও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরেই। হলের গেস্টরুমগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ নিয়ে জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আশরেফা পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আদৌ কোনও শিক্ষার পরিবেশ আছে কি? ফুটপাতে ভবঘুরে, মাদকাসক্তরা শুয়ে থাকে, মলত্যাগ করে রাখে। এমনকি তারা নারী শিক্ষার্থীদের দেখলে অনেক বাজে কথা বলে, অঙ্গভঙ্গি করে টিজ করে।‘ প্রায়শই তাদের নিয়ে মেয়েরা অভিযোগ করেন বলেও জানান তিনি।