আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম রম্যরচয়িতা ও ভ্রমণকাহিনিকার সৈয়দ মুজতবা আলীর জন্মদিন আজ। ১৯০৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর অবিভক্ত ব্রিটিশ ভারতে আসামের অন্তর্ভুক্ত সিলেটের করিমগঞ্জে এই বিশিষ্ট লেখকের জন্ম। বাবা খান বাহাদুর সৈয়দ সিকান্দার আলী সাব-রেজিস্ট্রার ছিলেন। তার পৈতৃক ভিটা মৌলভীবাজার।
১৯২১ সালে তিনি শান্তিনিকেতনে ভর্তি হন। তিনি ছিলেন বিশ্বভারতীর প্রথম দিকের ছাত্র। এখানে তিনি সংস্কৃত, ইংরেজি, আরবি, ফার্সি, হিন্দি, গুজরাটি, ফরাসি, জার্মান ও ইতালীয় ভাষা শিক্ষা লাভ করেন। ১৯২৬ সালে তিনি এখান থেকে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি বৃত্তি নিয়ে জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বে গবেষণার জন্য তিনি ডি.ফিল লাভ করেন ১৯৩২ সালে। ১৯৩৪-১৯৩৫ সময়ে তিনি মিসরে কায়রোর আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।
১৯২৭ থেকে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত সৈয়দ মুজতবা আলী কাবুলের শিক্ষা দপ্তরে অধ্যাপনা করেন। শান্তিনিকেতনে পড়ার সময় সেখানকার বিশ্বভারতী নামের হাতে লেখা ম্যাগাজিনে মুজতবা আলী লিখতেন। ১৯৩৫ সালে বরোদা কলেজে ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেন। এখানে তিনি আট বছর কাটান। এরপর দিল্লির শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। পরে ১৯৪৯ সালে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের বগুড়ার আযীযুল হক কলেজের অধ্যক্ষ হিসাবে এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের খণ্ডকালীন প্রভাষকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পঞ্চাশের দশকে কিছু দিন আকাশবাণীর স্টেশন ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালন করেন পাটনা, কটক, কলকাতা এবং দিল্লিতে। ১৯৬১ সালে তিনি শান্তিনিকেতনে প্রত্যাবর্তন করেন। বিশ্বভারতীর ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের রিডার হিসাবে যোগ দেন।
তিনি বিভিন্ন ম্যাগাজিনে ‘সত্যপীর’, ‘ওমর খৈয়াম’, ‘টেকচাঁদ’, ‘প্রিয়দর্শী’ প্রভৃতি ছদ্মনামে বিভিন্ন দেশ, আনন্দবাজার, বসুমতী, সত্যযুগ, মোহাম্মদীতে কলাম লেখেন। তার বহু দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন ভ্রমণকাহিনি। লিখেছেন ছোটগল্প, উপন্যাস, রম্যরচনা। তার সাহিত্যকর্মের মধ্যে ‘দেশে বিদেশে’, ‘জলে-ডাঙ্গায়’, ‘পঞ্চতন্ত্র’, ‘ময়ূরকণ্ঠী’, ‘চাচাকাহিনী’, ‘পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’, ‘ধূপছায়া’, ‘চতুরঙ্গ’, ‘ভবঘুরে ও অন্যান্য’, ‘বড়বাবু’, ‘রাজা-উজির’, ‘হিটলার’, ‘অবিশ্বাস্য, ‘শবনম’, ‘শহর ইয়ার’, ‘তুলনাহীনা’ অন্যতম।
১৯৪৯ সালে তিনি নরসিং দাস পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৬১ সালে তিনি আনন্দ পুরস্কারে ভূষিত হন। সাহিত্য ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য তাকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয় ২০০৫ সালে । ১৯৭৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সৈয়দ মুজতবা আলী মৃত্যুবরণ করেন।