মুনমুন। ১৯৯৭ থেকে ২০০৩ সাল। মাত্র ৬ বছরের ঢালিউডে টালমাটাল সময় পার করেছেন এই নায়িকা। যেমন জনপ্রিয় ছিলেন তেমন অভিযুক্ত। যদিও এসব তোয়াক্কা না করে ২০০৩ সালে হঠাৎ পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যে। এটি ছিলো নায়িকার প্রথম অধ্যায়।

মাঝে প্রায় ২০ বছর সে অর্থে পাওয়া যায়নি মুনমুনকে। অবশেষে আসছে অক্টোবর থেকে শুরু করতে যাচ্ছেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অধ্যায়। যেখানে তিনি নিজেকে পাল্টে নিয়েছেন শতভাগ। ঢাকা টকিজের পুরনো দর্শকরা যা দেখে চমকে ওঠার মতোই। প্রথমবার মুনমুন হাজির হচ্ছেন ভিলেন চরিত্রে। সিনেমার নাম ‘রাগী’। পরিচালনায় মিজানুর রহমান মিজান।অনেকদিন ধরেই সিনেমাটি সম্পর্কে শোনা যাচ্ছিলো। আনঅফিসিয়াল কিছু পোস্টারও প্রকাশ্যে আসে। সেগুলো নিয়ে দর্শকের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। সম্প্রতি আরও একটি পোস্টারে দেখা গেলো মুনমুনকে। যেখানে দেখা যায়, মুখের সামনে চাকু নিয়ে ভয়ানক চাহনিতে তাকিয়ে আছেন নায়িকা।‘রাগী’ দিয়ে নেটিজেনদের চমকে দিলেও শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) মুঠোফোনে তাকে পাওয়া গেলো চিরচেনা হাস্যোজ্বল কণ্ঠে। ছবিটির পোস্টার, মুক্তি এবং সিনেমাটিতে কাজের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা বলেছেন মুনমুন। জানালেন, আগামী অক্টোবরেই প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে সিনেমাটি। তবে শর্ত থাকায় নির্দিষ্ট তারিখ তিনি বলতে পারছেন না। শিগগিরই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে।
‘রাগী’ সিনেমায় ভিলেন তথা খলনায়িকার ভূমিকায় আছেন মুনমুন। এর আগে কখনও এমন চরিত্রে কাজ করেননি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাকে যখন এই সিনেমায় ভিলেনের চরিত্রের জন্য নেওয়া হয়, তখন অনেক কটূক্তি শুনতে হয়েছে। তারা মেনেই নিতে পারেননি যে, আমি ভিলেন হবো। তারা বলেছেন, মহিলা ভিলেনের সিনেমা নাকি এ দেশে কখনও চলেনি, চলবে না। আবার আমি সবসময় নায়িকার চরিত্রে কাজ করেছি, ভিলেন চরিত্রে পারব না। এসব কথা শুনে আমার মধ্যে একটা জেদ চাপে, কাজটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করি।’মুনমুন জানান, এই চ্যালেঞ্জিং কাজে তাকে সাহস যুগিয়েছেন সিনেমাটির নির্মাতা। শুটিং শুরুর পর আশেপাশের মানুষদের ধারণা পাল্টাতে বেশি সময় লাগেনি। তার ভাষ্য, ‘প্রথম দিন শুটিংয়ে গিয়ে দেখি পাতাভর্তি সংলাপ। নায়িকা হিসেবে এরকম সংলাপ তো আগে কখনও দেইনি। তবে যারা বলেছিলো আমি পারবো না, অভিনয় দেখার পর তারাই প্রশংসা করেছে।’ ‘রাগী’র গল্প প্রসঙ্গে মুনমুনের বক্তব্য, “গল্পটা অসাধারণ। দর্শক সিনেমাটি দেখলে যেমন হাসবে, কাঁদবে আবার রেগেও যাবে। এটা ‘হাওয়া’র মতো সিনেমা না, আবার শাকিব খান যেরকম অ্যাকশন সিনেমা করে, ওরকমও না। এটা নতুন একটি ধারা নিয়ে আসবে দেশের চলচ্চিত্রে।”এই সিনেমায় কাজ করে নিজের স্বর্ণালী সময়ের অনুভূতি পেয়েছেন বলে মনে করেন মুনমুন। তিনি বলেন, ‘বেশ বড় আয়োজনে সিনেমাটি বানিয়েছেন নির্মাতা। বাজেট কিংবা সময় কোনোকিছুতেই ছাড় দেননি। এজন্য অনেকদিন পর মনে হয়েছে, সিনেমায় কাজ করেছি। যদিও মাঝে কয়েকটি সিনেমার কাজ করেছি, কিন্তু সিনেম্যাটিক ফিলটা তখন পাইনি।’দেশের সিনেমার নবজাগরণ নিয়েও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন মুনমুন। সাম্প্রতিক সিনেমাগুলোর সাফল্যকে ‘অন্ধকার ঘরে এক চিলতে আলো’ বলে মন্তব্য তার। মুনমুনের ভাষ্য, ‘একে তো সিনেমা চলতোই না, তার ওপর করোনার কারণে দীর্ঘদিন হল বন্ধ ছিলো। এখন সিনেমাগুলো ভালো যাচ্ছে, এটা পুরো ইন্ডাস্ট্রির জন্য ইতিবাচক ব্যাপার। এর ফলে সিনেমার সংখ্যা বাড়বে, শুটিং বাড়বে। নায়ক-নায়িকারা তো বছরে একটা-দুইটা সিনেমা করলেই চলে। কিন্তু যারা ছোট চরিত্রে কাজ করেন কিংবা কলাকুশলী, তাদের আয় তো সীমিত। সিনেমার শুটিং বাড়লে তারাও জীবিকা নির্বাহ করতে পারবেন।’‘রাগী’ সিনেমায় নায়ক-নায়িকা চরিত্রে আছেন আবির চৌধুরী, আঁচল আঁখি ও মৌমিতা মৌ। জাকেরা খাতুন জয়া প্রযোজিত সিনেমাটি পরিবেশনা করবে জাজ মাল্টিমিডিয়া।