বান্দরবান প্রতিনিধিঃ
বান্দরবানের চিম্বুক এলাকার জামিনী পাড়ার পাহাড়।
সবুজ পাহাড় হলুদ হচ্ছে জুমের পাকা ধানে। এতে আনন্দিত হওয়ার কথা থাকলেও ফলন কম হওয়ায় হতাশ জুমিয়ারা (জুম চাষিরা)। পাহাড়ের ঢালুতে জুমে এক সাথে ধান,ভুট্টা,তিল,তিশি,কুমড়া,চিনাল(বাঙ্গি জাতীয়),মারফা(শসা জাতীয়) মরিচসহ কয়েক ধরনের ফসলের চাষ করে থাকেন জুমিয়ারা।তবে তাদের প্রধান ফসল ধান।এই জুম চাষ থেকে পাওয়া ফলন দিয়ে পুরো বছরের খাদ্য ও অর্থের যোগান দেয় জুম চাষি ও তাদের পরিবারের।ভালো ফলন পেতে ২ থেকে ৩ বছর অন্তর অন্তর একই স্থানে জুম চাষ করে থাকেন তারা।প্রতি বছরের মতো পরিবার-পরিজনের বার্ষিক খাদ্যের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে পাহাড়ের চূড়ায় নানা ফসল রোপণ করেন তারা। কিন্তু এবার ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ফলন আশানুরূপ হয়নি বলে জানান জুমচাষিরা। ফলে জুমচাষের ওপর নির্ভরশীল এই পাহাড়ি গ্রামের অধিকাংশ পরিবারের মধ্যে বিরাজ করছে চরম হতাশা।সরজমিনে চিম্বুকের জামিনী পাড়া এলাকায় গিয়ে কথা হয় জুম চাষি পালে ম্রো’র সাথে, তিনি জানান পরিবারের সদস্যদের নিয়ে
ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে ধান কাটা। কাটা ধান রাখা হয় খেতের পাশের জুমঘরে। সেখানে চলে মাড়াই। এরপর মাড়াই করা ধান শুকিয়ে নেওয়া হয় বসত ঘরের আঙ্গীণায়।ফলন কেমন হল? জানতে চাইলে বিষাদ কন্ঠে তিনি বলেন, গত বছর ৪ হাঁড়ি ( ১০ কেজি) ধানের বীজে জুম চাষ করে ২ শত হাঁড়ি ধান পেয়েছিলেন। এবছরও রাস্তার পাশে উচু পাহাড়ের ঢালুতে ৪ হাঁড়ি (১০ কেজি) ধানের বীজে আগাম জুম চাষ করেন। কিন্তু এবার বর্ষা মৌসুমে অপর্যাপ্ত বৃষ্টি ও বাতাস বেশি থাকায় ফলন তেমন ভাল হয়নি।গত বছর যেখানে ২ শত হাঁড়ি ধান পেয়েছিলেন সেখানে এবার ১ শত হাঁড়ি ধান পাবেন কিনা আশঙ্খা করেন তিনি।এছাড়া জুমের ধানের সাথে সাথী ফসল হিসেবে চাষ করা হয় মারফা ( শসা জাতীয়),তিল,তিশি,কুমড়া,ভুট্টা, মরিচসহ নানা ফলের চাষ করা হয়। সেগুলো ও পাকতে শুরু করেছে।কিন্তু সে গুলোর ফলনও ভাল হয়নি।
ফলে মুলধন ও আগামি বছর পরিবার নিয়ে খাদ্য খাদ্যাভাবের আশঙ্কা করেন তিনি।
আরেক চাষি তম্রুই ম্রো জানায়, তিনি প্রায় ২ কানি (৮০ শতক) পাহাড়ি জমিতে জুম চাষ করেছেন।দ্রব্য মূল্যের দাম বাড়ার কারনে শ্রমিকের বেতনও বেড়েছে।আগে ধান কাটার জন্য ২ থেকে ৩ শত টাকা দিয়ে শ্রমিক পাওয়া যেত।এখন জনপ্রতি ৫ শত টাকা দিতে হয় শ্রমিকের বেতন।ফলন ভাল না হওয়ায় চিন্তিত তিনিও।
বান্দরবান সদর উপজেলা টংকাবতী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড বাগান পাড়া এলাকার স্বামী হারা
বিধবা ম্রো নারী জুম চাষি সংরুম ম্রো, তার ছেলে মুংইয়া ম্রো ও তন ইয়া ম্রো। দুই সন্তান নিয়ে ৪আঁরি ধানের জুম করেছেন তিনি,নিয়মিত সময়ে জুম চাষ করেন তিনি,কিন্তু অনাবৃষ্টির কারনে জুমের ধানসহ অন্যান্য ফসল গুলোও ভাল ভাবে বেড়ে উঠেনি।এতে আগামীতে খাদ্য সংকটের আশংঙ্খা করছেন তিনি।বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ পরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান,জেলায় জুমের ধান আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ছিল ১৫ শ ২০ হেক্টর অর্জন হয়েছে ১৫শ ৬৫ হেক্টর। লক্ষ্য মাত্রা থেকে বেশি জুমের আবাদ অর্জন হলেও গত বছরের তুলনায় বৃষ্টি পাত কম হওয়ায় কিছুটা প্রভাব পড়ছে গাছ বৃদ্ধিতে।ফলে তুলনা মুলক ফলনও কম পাচ্ছে কৃষকরা।প্রথম পর্যায়ে আগাম জুমের আবাদ যারা করেছেন তারা তুলনামুলক ভাল ফল পাচ্ছেন।যারা মধ্যবর্তী ও শেষে করেছেন তারা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।তবে শেষে যারা আবাদ করেছে বৃষ্টি পাত হলে তারা অনেকটা পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।