" />
নীলগিরি জেলা দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের ৩৮ টি জেলার মধ্যে একটি। মূলত তামিলনাড়ু, কর্ণাটক এবং কেরালা রাজ্যের মধ্যে সীমানা জুড়ে বিস্তৃত পাহাড়ের একটি নাম নীলগিরি। তামিল নাড়ুর কোয়েম্বাটোর বিমান বন্দর থেকে প্রায় ৮০ কিমি দূরে অবস্থান এই জেলার। জেলার ওয়েলিংটনে রয়েছে ভারতের একমাত্র ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজ। সবার কাছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক বিশেষ নির্দেশন বহন করছে কলেজটি। কলেজের একটি ভবনে মসজিদ, মন্দির, গির্জা এবং একটি গুরুদুয়ারা রয়েছে। এক ছাদের নিচেই মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান এবং শিখরা প্রার্থনা বা উপাসনা করেন।ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে সফরের অংশ হিসেবে সম্প্রতি বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল কলেজটি পরিদর্শনকালে এসব তথ্য জানানো হয়। ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় এ রাজ্যের ‘পাহাড়ের রাণী’ খ্যাত উটি শহর থেকে এই কলেজের দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার।
সামরিক ছাত্রদের পাশাপাশি, এই কলেজ থেকে যারা স্নাতক সম্পন্ন করেছেন তাদের অনেকেই তাদের রাজ্যের প্রধান, সিনিয়র ক্যাবিনেট মন্ত্রী, স্টাফ প্রধান, সিনিয়র কমান্ডার, কূটনীতিক এবং বেসামরিক প্রশাসনে অধিষ্ঠ হয়েছেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা হলেন- শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপাকসে, ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত, সাবেক সেনাপ্রধান মনোজ মুকুন্দ নারাভানে, ভারতের বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল বিবেক রাম চৌধুরী, নাইজেরিয়ার বর্তমান রাষ্ট্রপতি মুহাম্মদু বাহারি, নাইজেরিয়ার সাবেক রাষ্ট্রপতি ওলুস্যাগুন অবাসাঞ্জ, জামার্নির সাবেক সেনা কর্মকর্তা হানস-ক্রিস্টোফ আম্মোন প্রমুখ।
জানা যায়, ৫০টি বিদেশি কোটায় তিনজন বাংলাদেশিসহ সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর তিন ক্যাটাগরিতে প্রায় ৫০০ ছাত্র কর্মকর্তা ১০ মাসের প্রশিক্ষণের জন্য প্রতি ব্যাচে এখানে আসেন। এখানে ছাত্র নির্বাচন প্রক্রিয়া একটু কঠিন। কলেজের লক্ষ্য হল ‘সেরা’ অফিসারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। অর্থাৎ যারা ইতোমধ্যে ১০ বছর কাজ করেছেন, তাদের পরবর্তী ২০ বছরের জন্য প্রস্তুত করতে এখানে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। কলেজটির একটি গৌরবময় অতীত রয়েছে। কলেজটি ১৯০৫ সালে মহারাষ্ট্রের দেবলালিতে স্থাপিত হয়েছিল। ১৯০৭ সালে, এটি বর্তমান পাকিস্তানের কোয়েটায় স্থানান্তরিত হয়। পরে ১৯৪৭ সালে ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়।
ওয়েলিংটনের ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজ মূলত চিফ অফ স্টাফ কমিটির জারি করা নির্দেশনা অনুসারে কাজ করে। মূলত কমান্ড্যান্ট চেয়ারম্যান, জয়েন্ট ট্রেনিং কমিটির মাধ্যমে চিফ অফ স্টাফ কমিটির কাছে দায়বদ্ধ। জানা গেছে, প্রথম বাংলাদেশী অফিসার হিসেবে ১৯৭৪ সালের ২১ জানুয়ারি থেকে ৩০ নবেম্বর পর্যন্ত কলেজে পাঠদান করেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ মতিন। বর্তমানে তিনজন বাংলাদেশী অফিসার কলেজটিতে একটি কোর্সে অংশগ্রহণ করেছেন। এরমধ্যে একজন সেনাবাহিনীর, একজন নৌবাহিনীর এবং অন্যজন বিমানবাহিনীর। এই তিনজনসহ এ পর্যন্ত ৯৬ জন বাংলাদেশি কর্মকর্তা স্টাফ কলেজ থেকে প্রশিক্ষণ নেয়ার সুযোগ পেয়েছেন।
এর সুউচ্চ পর্বতমালা, বিস্তৃত চা বাগান এবং সব সময় বৃষ্টির মেঘের সঙ্গে মনোরম আবহাওয়ার জন্য এটি ভারতের সবচেয়ে সুন্দর স্থানগুলির মধ্যে নামকরণ করা হয়েছে। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২২৪০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। উটি বোটানিক্যাল গার্ডেন ভারতের প্রাচীনতম উদ্যানগুলির মধ্যে একটি। এটি ১৮৯৭ সালে মার্কুইস অফ টুইডেল দ্বারা স্থাপন করা হয়েছিল এবং এটি ৫৫ একর জুড়ে বিস্তৃত। কিছু বিরল গাছ রয়েছে এখানে। এরমধ্যে অন্যতম কর্ক গাছ, কাগজের ছাল গাছ এবং মাঙ্কি পাজল ট্রি।