বাগেরহাটের রামপালে বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ উদ্যোগে নবনির্মিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দাপ্তরিক নাম বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড সংক্ষেপে (বিআইএফপিসিএল)। তবে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নামেই পরিচিতি পেয়েছে স্থাপনাটি। প্রকল্প পরিচালক সুভাস চন্দ্র পান্ডে জানান, গত ১৫ অগাস্ট ৯১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে আমরা লোড দিয়েছি। ধারাবাহিকভাবে তা বাড়িয়ে সক্ষমতা যাচাই করব। আমাদের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী অক্টোবরের শেষ নাগাদ খুলনা অঞ্চলের জন্য ইউনিট-১ এর মাধ্যমে একটি লাইনে ৬৬০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ উৎপাদনে যেতে পারব।রামপালে আনুষ্ঠানিক বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় আসতে পারে বলে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।তারা বলছেন, সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে। ওই সফরেই দুই দেশের সরকার প্রধান ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সুপার থারমাল বিদ্যুৎকেন্দ্র’টির বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার তারিখ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করতে পারেন। খুলনা অঞ্চলের জন্য বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন নির্মাণও শেষ হয়েছে। জাতীয় গ্রিড সংযুক্ত করা হয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির সঙ্গে।
সঞ্চালন লাইনটির জন্য নির্মিত সুইচবোর্ড এখন পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র ব্যবহার করছে বলে জানান সুভাস পান্ডে। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আসা উচ্চ ভোল্টের বিদ্যুৎ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত নয় খুলনা অঞ্চল। সেজন্য রামপালের সুইচ বোর্ড ব্যবহার করে ভোল্টেজ কমিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে।এছাড়া রামপালের বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য নির্মিত এ সুইচবোর্ড জাতীয় গ্রিডও ব্যবহার করছে, যা একটি বড় ধরনের সুবিধা বলেও মনে করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। সরেজমিনে দেখা যায়, দুটি ইউনিটের মাধ্যমে দুটি অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। এর মধ্যে ইউনিট-১ খুলনা অঞ্চলের জন্য, যেটি আগামী অক্টোবরেই পুরোদমে উৎপাদনে যাচ্ছে। আর ইউনিট-২ উৎপাদনে যাবে আগামী বছরের মার্চে। ইউনিট-২ উৎপাদনের মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুরো সক্ষমতা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে। পুরো প্রকল্পের প্রস্তুতি ৮২ দশমিক ২৫ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে জানান প্রকল্প কর্মকর্তারা।রামপালের পশুর নদীর তীরে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে। বয়লার ঠাণ্ডা ও উচ্চ চাপ তৈরি করতে এ নদী থেকেই প্রতিদিন পানি সংগ্রহ করা হবে। আর বিদ্যুৎ তৈরির প্রধান কাঁচামাল হবে আমদানি করা কয়লা। রামপালে স্থাপিত কেন্দ্রটিতে দেশীয় কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভবপর নয়। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশেষ গ্রেডের কয়লা আমদানি করতে হবে ইন্দোনেশিয়া, আফ্রিকার দেশ বা মোজাম্বিক থেকে। এখন ইন্দোনেশিয়ার কয়লা ব্যবহার করেই ট্রায়াল উৎপাদন কার্যক্রম চলছে। এজন্য এক পাশে নদীর তীরে জেটি নির্মাণ করা হয়েছে, যা বিদুৎকেন্দ্রটির জন্য বরাদ্দ দেওয়া ৯১৫ একর জমির সীমানাধীন। জেটি থেকে উচ্চ ক্রেইনের মাধ্যমে কয়লা সরাসরি কনভেয়ার বেল্টে করে বিদ্যুৎকেন্দ্রের বয়লার ও চারটি শেডে চলে যায়। প্রতিটি কয়লা ‘শেডের’ মজুদ সক্ষমতা আড়াই লাখ মেট্রিক টন। চারটিতে মোট ১০ লাখ টন কয়লা মজুদ করে রাখা সম্ভব হবে।