এরই মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধের ছয় মাস পূর্ণ হয়েছে। মার্কিন গণমাধ্যমটির প্র্রতিবেদনে যুদ্ধের বর্তমান পরিস্থিতি, এর গন্তব্য, অন্য দেশগুলোর ওপর এর প্রভাবসহ নানা বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এতে বলা হয়, যুদ্ধটি কেবল অস্ত্রের বাস্তবতায় সীমাবদ্ধ থাকেনি, দুই দেশের মধ্যে ইতিহাস-ঐতিহ্যের মেলবন্ধন থাকায় তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকেও লড়াইয়ের ক্ষেত্রে পরিণত করেছে।ছয় মাসে ধরে একটি বৃহৎ স্থলযুদ্ধ ইউরোপজুড়ে আতঙ্কের বীজ বপন করেছে। এটা এমন এক যুদ্ধ যেখানে সহিংসতা ও স্বাভাবিকতা সহাবস্থান করছে, আছে মৃত্যু ও ধ্বংস। এতে ভারী অস্ত্রের ব্যবহার এবং পরিখা খননের মাধ্যমে সম্মুখ লড়াই- উভয়ই আছে। যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা বিশ্বে যে মুদ্রাস্ম্ফীতি ও জ্বালানি ঘাটতি দেখা দিয়েছে, তা যুদ্ধের পরবর্তী অধ্যায়কে রূপ দিতে পারে। এভাবেই বদলে গেছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। গতকাল বুধবার দি নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এসব কথা উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কেউ জানেন না কীভাবে এ যুদ্ধের শেষ হবে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভদ্মাদিমির পুতিন এ নিয়ে নীরবতা পালন করছেন। যুদ্ধের ইতি টানতে কোনো ‘আন্তরিক’ আলোচনা চলছে না, সে বিষয়ে আগেই তিনি জানিয়েছিলেন। আর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি নিষ্পত্তির সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে দেশবাসীকে মাথা নত না করতে আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর পেছনে পশ্চিমাদের সমর্থন আছে। এ পরিস্থিতিতে কয়েকটি প্রশ্ন সামনে আসছে- আগামী শীতে ইউরোপে রুশ তেল ও গ্যাসের ব্যাপক চাহিদার মধ্যে পশ্চিমা দেশগুলো কি ইউক্রেনের প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখবে? ক্রিমিয়ায় (ইউক্রেনের) হামলা ও রুশ জাতীয়তাবাদী দারিয়ার দুগিনা হত্যাকাণ্ডের পর পুতিন কি আক্রমণ বাড়াবেন? জেলেনস্কি কি পারবেন পরমাণু শক্তিধর শত্রুর বিরুদ্ধে দেশবাসীকে সংকল্পবদ্ধ রাখতে?
মার্কিন গণমাধ্যমটি জানায়, যুদ্ধে ইউক্রেনের ২০ শতাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন পুতিন। তিনি ইউক্রেনকে আবারও রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে আনতে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি সক্রিয়তা দেখাচ্ছেন। তিনি যে আক্রমণ থামাবেন, সে সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
গতকাল পর্যন্ত ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের ছয় মাসে বহু ইউক্রেনীয় বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, বহু সেনার মৃত্যু হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অর্থনীতি। আগ্রাসনের কারণে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে পশ্চিমা দেশগুলো। এতে দেশটির অর্থনীতিও চাপের মুখে পড়ে। রুশ জনগণের একটি অংশ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। স্বাধীন জরিপ সংস্থা লাভাডা সেন্টার দেখেছে, গত চার মাসে ৪৩ শতাংশ রাশিয়ার নাগরিক ইউক্রেনের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে সামান্য অথবা একেবারেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
যুদ্ধের মধ্যেও ইউক্রেনের অধিকাংশ এলাকার পরিস্থিতি অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল ও নিরাপদ রয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার জানিয়েছেন, যুদ্ধে এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৫৮৭ জন বেসামরিক নাগরিকের প্রাণ গেছে। আহত হয়েছেন ৭ হাজার ৮৯০ জন। প্রাণ গেছে প্রায় ৯ হাজার ইউক্রেনীয় সেনার।
ছয় মাসের যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোনো ইঙ্গিত না থাকলেও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মূল্যে ইউরোপীয়রা ইউক্রেনের প্রতি সংহতি অব্যাহত রেখেছেন। ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেনের মতো দেশগুলো মুদ্রাস্ম্ফীতির কবলে রয়েছে। কিন্তু ইউরোপীয় নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মস্কোর ওপর চাপ প্রয়োগ করতে কাজ করে চলেছেন।