মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে ভারতের মিডিয়াজগত একটা খবর নিয়ে উত্তাল, আদানি কি প্রণয় ও রাধিকা রায়ের এনডিটিভি কিনে নিতে চলেছে? মঙ্গলবার এনডিটিভি’র ২৯ শতাংশ শেয়ার কিনে নিচ্ছে বলে ঘোষণা দিয়েছে আদানি গোষ্ঠীর মিডিয়া সংক্রান্ত কোম্পানি। তারপর তারা আরো ২৬ শতাংশ শেয়ার বাজার থেকে কেনার কথা জানিয়েছে। এরপর থেকেই ভারতের অন্যতম পুরনো এবং প্রতিষ্ঠানবিরোধী বলে পরিচিত মিডিয়া এনডিটিভিকে আদানিদের কেনা নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে উঠেছে।
গৌতম আদানির সংস্থা আদানি গ্রুপ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপি’র ঘনিষ্ঠ বলে বিরোধীরা হামেশাই অভিযোগ করে। নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাদের রকেটের গতিতে উত্থান হয়েছে বলেও বিরোধীদের দাবি। এহেন আদানি গোষ্ঠীর হাতে যদি এনডিটিভি চলে যায়, তাহলে শেষ পর্যন্ত তারা প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা, বিশেষ করে কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপি-বিরোধী খবরের থেকে সরে আসবে বলে তাদের আশঙ্কা।
কিভাবে হতে পারে হাতবদল?
মঙ্গলবার আদানি গোষ্ঠীর মিডিয়া সংস্থা এএমজি মিডিয়া নেটওয়ার্কস লিমিটেড (এএমএনএল) একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা আরআরপিআর গোষ্ঠীর কাছ থেকে এনডিটিভির ২৯ দশমিক ১৯ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয়ার পরিকল্পনা করেছে। কত টাকা দিয়ে এই শেয়ার কেনা হচ্ছে, তা তারা জানায়নি। এএমএনএল জানিয়েছে, তারা আরো ২৬ শতাংশ শেয়ার কেনার জন্য ওপেন অফার দিচ্ছে। তারা এই মিডিয়া সংস্থার পুরো নিয়ন্ত্রণভার পেতে চায়।
এরপর বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ এবং ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জকে চিঠি দিয়ে এনডিটিভি জানায়, সাংবাদিকরা তাদের প্রশ্ন করছে, এনডিটিভির প্রতিষ্ঠাতারা আরআরপিআরের মাধ্যমে কোনো শেয়ার বিক্রি করেছে কি না? এনডিটিভি সব শেয়ারহোল্ডারদের জানাতে চায়, প্রণয় ও রাধিকা রায়ের কাছে ব্যক্তিগতভাবে এবং আরআরপিআর সংস্থার মাধ্যমে ৬১ দশমিক ৪৫ শতাংশ শেয়ার আছে। তারা এই শেয়ার কাউকে বিক্রি করছেন না।
বুধবার এনডিটিভি তাদের ওয়াবসাইটে জানায়, রাধিকা ও প্রণয় রায়ের সাথে কোনো আলোচনা না করেই বিশ্বপ্রধান কমার্শিয়াল প্রাইভেট লিমিটেড জানিয়েছে, তারা আরআরপিআরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। তাই আরআরপিআরের কাছে থাকা এনডিটিভির ২৯ দশমিক ১৯ শতাংশ শেয়ার যেন দুই দিনের মধ্যে তাদের হস্তান্তর করে দেয়া হয়। এনডিটিভি বুধবার সকালেই বিষয়টি জানতে পারে। তাদের সাথে কোনোরকম আলোচনা না করেই এই কাজ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ জার্মান গণমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, প্রণয় ও রাধিকার কাছে থাকা ৬১ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে আরআরপিআরের কাছে থাকা ২৯ শতাংশও ছিল। সেই ২৯ শতাংশ যদি আদানির কাছে চলে যায়, তাহলে প্রণয়দের কাছে থাকবে ৩২ শতাংশ। এনডিটিভির কর্মী ও সাংবাদিকদের কাছে কিছু শেয়ার আছে। এই অবস্থায় বাকি ২৬ শতাংশ শেয়ার জোগাড় করা আদানিদের কাছে কিছু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
কী প্রতিক্রিয়া?
প্রবীণ সাংবাদিক ও কলকাতা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শুভাশিস মৈত্র ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘সংস্থার হাতবদল হতেই পারে এবং হয়ও। কিন্তু এনডিটিভির হাতবদল হলে একটা আশঙ্কা মনে আসে। এনডিটিভি হলো সেই কতিপয় মিডিয়া সংস্থার অন্যতম যারা সরকার-বিরোধী খবর করে। হাতবদলের পর কি সেই চরিত্র বদল হতে পারে? যদি হয়, তাহলে সেটা ভালো হবে না।’
দীর্ঘদিন ধরে দিল্লিতে সাংবাদিকতা করা সুনীল চওকে মনে করেন, ‘এনডিটিভি হাতছাড়া হয়ে গেলে প্রণয় রায়রা আরেকটি নতুন চ্যানেল তৈরি করতেই পারেন। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ‘প্রতিষ্ঠানবিরোধী খবরের একটা জায়গা আছে। এখন ভারতে সেই জায়গায় তেমন প্রতিযোগিতা নেই। ফলে চাইলে এনডিটিভি হারানোর ক্ষতিটা তারা পূরণ করার সুযোগও পাবেন।’
আরেক প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত ভট্টাচার্য মনে করেন, ‘এখন ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ নীতি নিয়ে চলাই ভালো।’ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘আদানিরা সবক্ষেত্রেই আম্বানিদের টক্কর দিচ্ছে। আম্বানিরা অনেকদিন ধরেই মিডিয়ায় আছে। আদানি এই প্রথম সেখানে ঢুকছে। তাই নেহাতই বাণিজ্যিক প্রতিয়োগিতা নাকি প্রোপাগান্ডার কারণে তারা এই কাজ করছে, তা স্পষ্ট হওয়ার জন্য কিছুটা সময় দরকার।’
সূত্র : ডয়চে ভেলে