জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে এই সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি।
নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনাস্থের কারণে বিএনপি সংলাপে যায়নি বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, আমরা সংলাপে যাইনি, কারণ আমরা নির্বাচন কমিশন চিনি না, নির্বাচন কমিশন বুঝি না, নির্বাচন কমিশন মানি না। আমরা চাই এ সরকার থাকবে না, এই পার্লামেন্ট থাকবে না। এই সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন এক সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন গঠন হবে, সেই নির্বাচনে আমরা যাবো।
মির্জা আব্বাস বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বলেছেন বিএনপিকে বারবার সংলাপে ডাকবো আমরা, আপনাকে সাধুবাদ জানাই। বিএনপিকে বারবার ডাকবেন এই কারণে যে, বিএনপিকে ছাড়া আপনারা নির্বাচন করতে পারবেন না। আপনি সিইসি দূরের কথা, বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন করার সাধ্য বাংলাদেশের কারো নেই। যারা এই নির্বাচনে যাওয়ার চেষ্টা করবে, ভেতরে কিংবা বাইরে, দেশে কিংবা বিদেশে, তাদের কোথাও ছাড় দেওয়া হবে না। ব্যর্থ ও দুর্বৃত্ত এই সরকারকে আমরা কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেবো না।
‘যথেষ্ট হয়েছে, এখন বাংলাদেশের মানুষকে আল্লাহর ওয়াস্তে মাফ করে দেন। ক্ষমতা ছাড়েন, নিরপেক্ষ নির্বাচন দেন, তারপর যদি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আসেন আমরা আপনাদের মাথায় তুলে নাচবো, কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু বিনা নির্বাচনে ক্ষমতায় থাকবেন, এটা বাংলাদেশের মানুষ কখনো মানবে না।’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বলতে খারাপ লাগে মুরাদ হাসানের যে অবস্থায় কথাবার্তা বন্ধ হয়ে গেছে, ওবায়দুল কাদেরদের কথাবার্তাও বন্ধ হয়ে যাবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে যে কটূক্তি করা হয়েছে সে বিষয়ে যদি ক্ষমা না চান- তাহলে বাংলাদেশের মানুষ ঢাকা কিংবা দেশের যে রাজপথে আপনাদের পাবে শায়েস্তা করে ছেড়ে দেবে। আপনাদের ছাড় দেওয়া হবে না।’
সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘তারেক রহমানকে বকা দেন-গালি দেন দিতে থাকেন। চামড়ার মুখ তো বলতে থাকেন। কিন্তু সময় পেলে জনগণ আপনাদের ছাড়বে না, এই কথাটা মনে রাখবেন। পালিয়ে পালিয়ে কথা বলে উপরে উঠতে চান, উপরে উঠতে গেলে কিন্তু মাথা ফাঁটা যাবে। ঢাকা শহরে আন্দোলনের যে জোয়ার উঠেছে আগামী দিনে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে সেই আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আমরা সেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আঘাত করে কটূক্তি করা আওয়ামী লীগের একটা স্বভাবগত কৌশল। যখন বাংলাদেশের মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না, পানি পাচ্ছে না, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বন্যায় দেশ ঢুকে যাচ্ছে ওই সময়ে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নিতে একটি কথা বলে দিল। যাতে করে আমরা ওই দিকে নজর দিয়ে দেই। বাংলাদেশের মানুষ এত বোকা নয়, আমরা সব বুঝি। এই সমস্ত আজেবাজে কথা বলে আমাদের এবং বাংলাদেশের মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানো যাবে না।’
সরকারের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘ইতিপূর্বে আপনারা বলেছেন ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে, বিদ্যুতের আর কোনো সমস্যা নেই। এখন আবার পানির মূল্য বৃদ্ধি, তেলের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। অথচ আমরা যতটুকু জানি সরকারি পর্যায়ে কখনো এসবের মূল্য বৃদ্ধি করা হয় না, বেসরকারি পর্যায়ে ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে মূল্য বৃদ্ধি করে। অথচ অনির্বাচিত এই সরকার সব কিছুর মূল্য বৃদ্ধি করছে।’
সিইসি বলছেন বিএনপি ছাড়া নির্বাচন হবে না অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলছেন বিএনপি নির্বাচনে না আসলেও নির্বাচন হবে এমন প্রসঙ্গ টেনে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘যদিও বিএনপির এই মুহূর্তে নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশন নিয়ে কোনো মাথাব্যাথা নেই। তারপরও সিইসি একটি কথা বলেছেন- তিনি মানুষ তো, বিএনপি ছাড়া নির্বাচন হবে না একেবারে সঠিক কথা বলেছেন। আমি উনাকে অনুরোধ করব আপনি বিএনপি’র একটি প্রোগ্রামে এসে এই কথাটা বলেন যে, বিএনপি ছাড়া নির্বাচন হবে না। কারণ বিএনপি ছাড়া নির্বাচন হবে না এই কথা এদেশের মানুষ বুঝে নির্বাচন কমিশন সিইসি বুঝে, আওয়ামী লীগ বুঝে কিন্তু এই সরকার বুঝে না। সরকার জানে নির্বাচনের কোনো প্রয়োজন নাই। নির্বাচন ছাড়াই তারা আবারও ক্ষমতায় আসবে।’
দেশের মানুষ আর এই সরকারকে চায় না দাবি করে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘আমাদের পানিতে চুবিয়ে মারা হচ্ছে আবার কখনো তিস্তার ব্যারেজ খুলে দেওয়া হচ্ছে, বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে আমরা কখনো পানিতে ডুবে মরি কখনো খরায় ডুবে মরি। অথচ এই ব্যাপারে সরকারের কোন কথাবার্তা নাই।’
‘১১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প পদ্মা সেতু ৩৩ হাজার কোটি টাকায় শেষ করা হয়েছে। এখন আবার মেট্রোরেল নিয়ে উন্নয়নের ট্যাবলেট খাওয়ানো হচ্ছে। ১১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প আবারও ৩৩ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাইতেছে। প্রশ্ন করতে চাই পদ্মা না হয় খরস্রোতা নদী পিলারের নিচে মাটি সরে গিয়েছিল ঢাকা শহরেও কি পাইলিংয়ের নিচে মাটি সরে যাচ্ছে নাকি? আবার মেট্রোরেলের খরচ বেড়ে গেল।’-বলেন আব্বাস।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, মীর সরাফত আলী সপু, ইশরাক হোসেনসহ প্রমুখ।