রোববার (১৯ জুন) দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘বন্যার মহাদুর্যোগের করাল গ্রাসে যখন মানুষ বিপর্যস্ত, তখন নিশিরাতের সরকার পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের উৎসব আনন্দে আত্মহারা। বন্যায় ভাসছে দেশ আর সরকার ব্যস্ত সেতু নিয়ে। সেতু নিয়ে আনন্দে ভাসছে তারা। প্রতিদিন আনন্দ মিছিল করছে, কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদেশি নাচগানের লোক নিয়ে এসে কনসার্ট করছে। কি বিভৎসতা! কি অমানবিকতা!
এ সময় পদ্মা সেতু নিয়ে উৎসব বন্ধ করে বন্যাকবলিত অঞ্চলকে দুর্গত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানান রুহুল কবির রিজভী।
রিজভী দাবি করেন, ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের নামে শত শত কোটি টাকা খরচ করে সারাদেশে উৎসবের আয়োজন নিয়ে শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রী-এমপিরা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সব জেলা প্রশাসককে লিখিত নির্দেশ দিয়েছে, টানা পাঁচ দিন সারাদেশে আনন্দ উৎসব করতে হবে। পদ্মা সেতুর মূল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সারাদেশে একযোগে বড় পর্দায় দেখাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ৩০০ লঞ্চ রিকুইজিশন করা হয়েছে। জনসভাস্থলে ৫০০ টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে ৪০ ফুট উচ্চতার দুটি ম্যুরাল নির্মাণ করা হচ্ছে। যারা উৎসবে অংশ নিতে অনীহা দেখাবে, তাদের চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে। দুই প্রান্তে থানা করা হচ্ছে। শেখ হাসিনার নিরাপত্তার জন্য হাজার হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে।
পদ্মা সেতু উদ্বোধন উৎসবের নামে শত শত কোটি টাকা উড়ানো হচ্ছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, অথচ বন্যাকবলিত এলাকায় কোটি পানিবন্দি মানুষ সাহায্যের জন্য তাকিয়ে আছে। সেখানে সরকারি বরাদ্দ একেবারেই অপ্রতুল। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সিলেটে ২০০ টন চাল, নগদ ৩০ লাখ টাকা, ৮ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে। ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেছেন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৪০ লাখ মানুষ। বরাদ্দ ৬০ লাখ টাকার কথা বলা হলেও মূলত, ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তার মানে জনপ্রতি দেড় টাকা। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের জনসভাস্থলে অস্থায়ী ৫০০ টয়লেট স্থাপন করতে যে খরচ হবে তার দশ ভাগের এক ভাগও বরাদ্দ পায়নি বন্যার্তরা।
রিজভী বলেন, আমাদের দাবী পদ্মা সেতু নিয়ে উৎসব বন্ধ করুন। বন্যাকবলিত অঞ্চলগুলোকে দুর্গত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হোক। কোনো বিলম্ব ছাড়া এই অঞ্চলগুলোর জনগণের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা হোক।
তিনি বলেন, আমরা অবিলম্বে সরকারকে বন্যাকবলিত এলাকায় গিয়ে দুর্গত মানুষের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে ওইসব অঞ্চলে যেন আর বন্যা না হয়, তার জন্য উদ্যোগ নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ১২২ বছরের ইতিহাসে সিলেট ও সুনামগঞ্জে এমন ভয়ংকর বন্যা আর হয়নি। সবকিছু হারিয়ে মানুষ এখন সর্বশান্ত। ত্রাণের জন্য গোটা বন্যাদুর্গত এলাকা হাহাকার করছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জে শুকনো মাটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সারাদেশ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে জেলা দুটি।
‘এই বন্যার আরও কারণ আছে। হাওর ও নদীগুলোতে বাঁধ এবং সেতু দেওয়া হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। সেখানে এত দুর্নীতি হয়েছে যে, সব বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে এবং নতুন করে যেসব রাস্তা তৈরি করা হয়েছে, তাও ভেঙে যাচ্ছে। সবকিছু সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। সেজন্য আজকে এমন একটা অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে আমাদের দেশে।’
‘এরই মধ্যে সিলেট মহানগর, সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলা বিএনপি বন্যাদুর্গতদের সাহায্যার্থে কাজ করে যাচ্ছে। তারা স্যালো নৌকা ও ট্রলার দিয়ে দুর্গত এলাকার লোকজনদের নিরাপদ স্থলে আনতে সহযোগিতা শুরু করেছে। বন্যার্তদের মাঝে বিএনপির পক্ষ থেকে ত্রাণ-সামগ্রীও বিতরণ করা হচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্তিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক অব্দুস সালাম আজাদ ও স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু প্রমুখ।