রোববার সকাল থেকে নগরের পূর্ব ফিরোজশাহ এক নম্বর ঝিল এলাকার পাহাড়ে উচ্ছেদ অভিযান কার্যক্রম শুরু করা হয়। জেলা প্রশাসনের চার জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে এতে র্যাব, পুলিশ, আনসার ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা অংশ নেন। দুপুরে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিদর্শনে যান জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান। পাহাড় ধসে চার জনের প্রাণহানির পর অবশেষে ঘুম ভাঙল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের।
রোববার সকাল থেকে নগরের কয়েকটি পাহাড়ে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে প্রশাসন। বিকেল পর্যন্ত পাহাড়ের পাদদেশে অবৈধভাবে বসবাসকারী ১৮০টি বসতি উচ্ছেদ করেছেন জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা।অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওমর ফারুক সমকালকে বলেন, আকবর শাহ থানার এক নম্বর ঝিলের বরিশাল ঘোনা এলাকার জায়গাটা রেলওয়ের। এখানকার পাহাড়গুলোও রেলওয়ের। এখানে থাকা স্থাপনা উচ্ছেদ করে আমরা রেলওয়েকে বুঝিয়ে দিই। তবে এরপরও আমরা দেখতে পাই এখানে কিছু লোক আবারও বসবাস শুরু করে। অবৈধভাবে বসবাসকারী এসব বসতিদের ব্যাপারে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি। তারই অংশ হিসেবে উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখানকার অতি ঝুঁকিপূর্ণ সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করব আমরা।
তিনি বলেন, রোববার বিকেল পর্যন্ত ১৮০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। রাত পর্যন্ত এই অভিযান চলবে।
ওমর ফারুক জানান, এখানে যতগুলো অবৈধ স্থাপনা রয়েছে এরই মধ্যে সবগুলোর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বসবাসকারী মানুষরা নিজ দায়িত্বে সরে না যাওয়াতেই আমাদের বাধ্য হয়েই তাদের স্থাপনাগুলো ভাঙতে হচ্ছে। র্যাব, পুলিশ, আনসার, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়ে চারভাগে বিভক্ত হয়ে চার জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে এখানে যতগুলো ঘর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে সেগুলো উচ্ছেদ করতে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। যারা এখান থেকে বিচ্যুত হবে তাদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেখানে সবার জন্য খাবার ও অবস্থানের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
দুপুরে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিদর্শনে গিয়ে জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান বলেন, পাহাড়ে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ যেসব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে সেখানে পুনরায় কেউ যাতে দখলে নিয়ে স্থাপনা নির্মাণ করতে না পারে সেজন্য আমরা কাঁটা তারের বেড়া ও গাছ লাগিয়ে দিবো। যদি কেউ এ সীমানা ভেঙে বসতি গড়ে তুলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, আমরা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এবং রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে তাদের আওতাধীন পাহাড়ি জায়গায় নির্মিত অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করে সেখানে কাঁটা তারের বেড়া ও গাছ লাগিয়ে সংরক্ষণ করতে বলেছি। পাহাড়ে বসবাসকারীদের বিরুদ্ধে চলমান এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এ সময় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সিনিয়র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম, চান্দগাঁও সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদ রানা, কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) উমর ফারুক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আল আমিন সরকার উপস্থিত ছিলেন।
দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা জানান, ঝিলপাড় ও বিজয়নগর এলাকার পাহাড়ের পাদদেশে কিছু আধাপাকা ঘর অবৈধভাবে তৈরি করে ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। ধসের কবলে পড়া ঘরগুলো পাহাড়ের পাদদেশে দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল।
এদিকে রোববারও নগরের বিভিন্ন পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী বাসিন্দাদের সরে যেতে মাইকিং কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে জেলা প্রশাসন। পর্যায়ক্রমে সব পাহাড়ের পাদদেশ থেকে অবৈধ বসতিদের উচ্ছেদ করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার গভীর রাতে টানা বৃষ্টিতে নগরের আকবর শাহ থানার এক নম্বর ঝিল এবং বিজয় নগর এলাকায় পৃথক দুটি পাহাড় ধসে দুই ভাই এবং দুই বোনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আহত আরও দুজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। প্রশাসন আগে থেকে উচ্ছেদ অভিযানের পাশাপাশি কার্যকর পদক্ষেপ নিলে এই প্রাণহানি ঠেকানো সম্ভব হতো বলে মনে করছেন চট্টগ্রামের সচেতন নাগরিকরা।