সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বিষয়টি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, নৌবাহিনী চলে এসেছে। ৩৫ জনের একটি ডুবুরিদল কাজ শুরু করেছে। বিকেলে ৬০ জনের আরেকটি বড় দল আসবে। কোস্ট গার্ডের দুইটি ক্রুজ দুপুরের পর আসবে। একটি সুনামগঞ্জ যাবে এবং একটি সিলেটে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত হবে। এছাড়া বিমান বাহিনীর দুটি হেলিকপ্টার উদ্ধার কাজে নিয়োজিত থাকবে।
বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠেছে। বেড়েই চলছে নদীর পানি। সেই সঙ্গে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পুরো জেলাজুড়ে চলছে হাহাকার। বন্যা আক্রান্ত বেশিরভাগ উপজেলায় পা রাখার মতো শুকনো মাটি নেই। এ অবস্থায় স্থানীয় প্রশাসনকে উদ্ধার তৎপরতায় সহযোগিতা ও মানবিক কার্যক্রমে অংশ নিতে এবার নামছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি ডুবুরি দল, এছাড়া বিমানবাহিনীর দুটি হেলিকপ্টার ও কোস্ট গার্ডের দুটি ক্রুজ। ইতোমধ্যে নৌবাহিনীর ৩৫ সদস্যের একটি দল সিলেটে পৌঁছে কাজ শুরু করেছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বিষয়টি জানিয়েছেন।
বন্যার ভয়াবহতা আরও বাড়তে পারে এমন আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। এখনো প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। আক্রান্ত মানুষের এখন প্রাণে বাঁচার আর্তনাদ। অনেকে গবাদি পশু রেখে প্লাবিত এলাকা ছাড়ছেন না। কিন্তু বন্যার পানি বৃদ্ধির কারণে মানুষের প্রাণ সংহার হতে পারে। আক্রান্ত বেশিরভাগ এলাকায় এখন শুকনো মাটিও নেই।
এ অবস্থায় পানিবন্দি লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনতে উদ্ধার কাজে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি শনিবার (১৮ জুন) থেকে উদ্ধার কাজে নৌবাহিনীও যুক্ত হলো।
বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হওয়ায় স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষে উদ্ধার কাজ চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় শুক্রবার (১৭ জুন) সকালে উদ্ধার কাজসহ সার্বিক সহযোগিতার জন্য সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চান জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান। জেলা প্রশাসকের লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে গতকাল শুক্রবার দুপুর থেকে সিলেট ও সুনামগঞ্জের ৮টি উপজেলায় সেনাবাহিনীর ৯ টিম কাজ শুরু করেছে। ‘রেসকিউ বোট’ দিয়ে তারা গ্রামে গ্রামে গিয়ে পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার করে নিয়ে আসছে।
সিলেট সেনানিবাসের অধিনায়ক মেজর জেনারেল হামিদুল হক গণমাধ্যমকে জানান, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সিলেটের ৩ উপজেলা ও সুনামগঞ্জের ৫ উপজেলায় সেনাবাহিনী পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারসহ পাঁচটি কাজে তৎপরতা শুরু করেছে। সিলেটের উপজেলাগুলো হচ্ছে সদর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ জেলার সদর, দিরাই, ছাতক, দোয়ারাবাজার ও জামালগঞ্জ।
মেজর জেনারেল হামিদুল হক আরও জানান, সিলেট কুমারগাঁও বিদ্যুৎকেন্দ্রে পানি ওঠে বিদ্যুৎ সরবরাহ হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া সুনামগঞ্জের বেশ কয়েকটি খাদ্য গুদাম হুমকিতে রয়েছে। এগুলো রক্ষায়ও সেনা সদস্যরা কাজ করছেন।
জিওসি জানান, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বন্যা কবলিত এলাকায় পাঁচটি কাজ করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে- পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করা। বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে পানিবন্দি মানুষের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা। বন্যা আক্রান্তদের চিকিৎসা সহায়তা প্রদান। স্পর্শকাতর স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং সীমিত পরিসরে খাদ্য সামগ্রী ও বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করা।
মেজর জেনারেল হামিদুল হক আরও জানান, সেনাবাহিনী নিজস্ব নৌকা দিয়ে পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার করছে। ঢাকা ও কুমিল্লা থেকে আরও ‘রেসকিউ বোট’ আনা হচ্ছে। এছাড়া স্থানীয় লোকজনের নৌকাগুলোও উদ্ধার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিপদের সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানো ও তাদের কাজ করতে পারাকে সেনাবাহিনী গৌরবের মনে করে বলেও মন্তব্য করেন এই সেনা কর্মকর্তা।