বুধবার (১৫ জুন) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)-এর ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানকে ঘিরে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। যারা পদ্মা সেতুর বিরোধিতা করেছিল তারা এমন কিছু ঘটাতে পারে যাতে আমরা উদ্বোধনটা করতেই না পারি।
সম্প্রতি বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলোকে রহস্যজনক উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নজর রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। যারা পদ্মা সেতুর বিরোধিতা করেছিল- আমাদের কাছে তথ্য আছে, এমন একটা ঘটনা ঘটাবে যাতে আমরা উদ্বোধনটা করতেই না পারি। বিভিন্ন জায়গায় আগুন, সমস্ত জিনিস রহস্যজনক। আমাদের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় সবার নজর দিতে হবে।’
তার নিরাপত্তার কাজে যারা নিয়োজিত, তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি নিজেও তো গুলি ও বোমার মুখে পড়েছি। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছে। হয়তো আল্লাহ আমাকে দিয়ে কোনো কাজ করাবেন, এজন্য বাঁচিয়ে রেখেছেন। দেশ অভিশাপমুক্ত যাতে হয়, সেই ব্যবস্থাটাই নিয়েছিলাম। যার কারণে বাংলাদেশ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।
এসময় এসএসএফ’র প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে যারা বিদেশি অতিথি এসেছেন, তারা প্রত্যেকে (এসএসফ’র) ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। এটা ধরে রাখতে হবে। আমার পরিবারের মতো যারা আমার সঙ্গে কাজ করেন, তাদের জন্য দোয়া করি। বিশেষ করে এসএসএফ’র জন্য দোয়া করি। আমি জানি তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের নিরাপত্তা দিচ্ছেন।
‘তবে খেয়াল রাখতে হবে- আমি যেন জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন না হই। আমরা রাজনীতি করি জনগণের জন্য। জনগণের কথা শোনা, তাদের জন্য কিছু করতে পারা, এতটুকুই চাই। কারণ জনগণই আমাদের প্রাণ শক্তি।’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেন, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীতে নারী সদস্য নিয়োগ আমরা শুরু করি। পুলিশে নারী সদস্য নিয়োগ জাতির পিতাই শুরু করেছেন। আমরা দেশটাকে সেভাবে গড়ে তুলতে চাই। আমরা ভৌগলিক সীমারেখায় হয়তো ছোট, কিন্তু জনসংখ্যায় বড়। আমরা বড় হয়ে চলবো। বিশ্বে মর্যাদা নিয়ে চলবো। আজকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এই মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখে এবং সেটা বাস্তবায়ন করে এগিয়ে যাবো, এটাই আমাদের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, এসএসএফকে যতটুকু পেরেছি আধুনিক করেছি। অন্যান্য বাহিনীকেও আধুনিক করার পদক্ষেপ নিয়েছি। প্রত্যেকটি বাহিনী জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস দমনে দায়িত্ব পালন করেছে। যার কারণে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। প্রত্যেককেই এ ব্যাপারে সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে। প্রযুক্তি যেমন উন্নয়নের দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি যারা সন্ত্রাস ও অপকর্মে জড়িত তাদেরও সুযোগ করে দেয়।
নানা মেগা প্রজেক্টের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সব প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিতে হবে। সব বাহিনী প্রধানকে এই উদ্যোগ নিতে হবে।
সরকার প্রধান বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে একটা মিথ্যা অপবাদ আমাদের দিয়েছিল। দুর্ভাগ্য, আমাদের একজন স্বনামধন্য মানুষ, যাকে আমি সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা দিয়েছিলাম। সেই ড. ইউনূস বেইমানি করেছেন। গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদে থাকতে না পেরে তিনি এ কাজ করেছেন। তিনি তার বন্ধু তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের স্বামীর ‘ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে’ তিন লাখ ডলার ডোনেশন দিয়েছিলেন। হিলারি আমাকে ফোনও করেন। আমার কাছে ধর্ণা দেন। তাকে আমি আইনের কথা বলেছি। বিশ্ব ব্যাংকের কাছে বার বার মেইল পাঠান, দুর্নীতি হয়েছে বলা হয়। আমি বলেছিলাম- দুর্নীতির প্রমাণ দিতে হবে।
‘আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম যে, এটা প্রমাণ করতে হবে। পরে এটা ভুয়া প্রমাণ হয়েছে। কিন্তু ইউনুসের প্ররোচনায় বিশ্ব ব্যাংক অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ায়। আমরা বলেছিলাম, নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করবো, করেছি।
অনুষ্ঠানে এসএসফ’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. শফিকুর রহমানসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাগণ, তিন বাহিনী প্রধান, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও এসএসএফ’র কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।