গণভবনে উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন নির্দেশনা এসব কথা বলেন। বিকেল সোয়া ৪টায় শুরু হওয়া সভা চলে রাত পৌনে ১০টা পর্যন্ত।পদ্মা সেতু উদ্বোধন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ষড়যন্ত্রের মাঠে অনেকে সক্রিয় উল্লেখ করে সবাইকে সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, রাজনীতির মাঠে কেউ কেউ লাশ চায়। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিতে হবে। কেউ যেন সুযোগ না নিতে পারে।
দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার এই বৈঠকে দল, দেশ ও সরকারের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। বিশেষ করে পদ্মা সেতু উদ্বোধন, আসন্ন জাতীয় সম্মেলন ও নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা হয়। এগুলো সামনে রেখে দেশি-বিদেশি নানা চক্র ষড়যন্ত্র ও সেসব মোকাবিলার বিষয় আলোচনায় উঠে আসে বলে জানা গেছে।
বৈঠক শেষে দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, অনেক ষড়যন্ত্র হবে। নেতাকর্মীদের গঠনমূলকভাবে সেসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করবে। অনেকেই এখন রাজনীতির মাঠে লাশ চায়। তাদের সেই স্বার্থ যেন হাসিল না হয় সে বিষয়ে ছাত্রলীগসহ সব সংগঠনকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূল পর্যায় থেকে দলকে শক্তিশালী করার পরামর্শ দিয়েছেন উপদেষ্টারা। দেশের ষড়যন্ত্র আছে, সেই বিষয়েও দলকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে আওয়ামী লীগের এই থিংকট্যাঙ্ক গ্রুপ। ছাত্রলীগকে মানববন্ধনের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করার পরামর্শ দিয়েছেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশি-বিদেশী বিভিন্ন সংকট মোকাবিলার বিষয়ে নেতৃবৃন্দকে সতর্ক থাকতে হবে। গঠনমূলকভাবে ষড়যন্ত্র মোকাবিলার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অনেকে রাজনীতির মাঠে এখন লাশ চায়। ছাত্রলীগকে সতর্কতার সঙ্গে চলতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, কেউ আন্দোলনের নামে সহিংসতা করলে সে অবস্থায় প্রতিহত করবো। রাজনৈতিকভাবে আসলে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা আর সহিংসতা করলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ব্যবস্থা নেবে।
সভার শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, ১৫ আগস্টের শহীদ ও উপদেষ্টা পরিষদের প্রয়াত সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এ সময় তাদের সবার আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়।
সভার সূচনা বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা দিয়ে জয়ী হওয়ার পর সরকার গঠন করে আমরা সেটা ভুলে যাই না। প্রতিবার বাজেট ঘোষণার সময় সেই ইশতেহার হাতে নিয়ে কতটুকু অর্জন করতে পারলাম, কতটুকু আমাদের সামনে করতে হবে সেগুলো বিবেচনা করে সেভাবেই বাজেট করি।
সরকারপ্রধান বলেন, আমরা তৃণমূল থেকে উন্নয়ন করেছি। আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। পদ্মা সেতু একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। সততা ছিল বলেই এই চ্যালেঞ্জ নিতে পেরেছি, নিজের অর্থে সেই সেতু করেছি। ২৫ জুন উদ্বোধন করব ইনশাল্লাহ। কানাডার কোর্ট রায়ে বলেছে সব অভিযোগ ভুয়া ও মিথ্যা। ড. ইউনুস এটা করেছে শুধু গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদের জন্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থা দুঃখজনক ছিল। কারণ ক্ষমতা তো জনগণের হাতে ছিল না। ক্ষমতা চলে গিয়েছিল সেই মিলিটারি ডিকটেটরদের হাতে।
তিনি বলেন, উর্দি পরে ক্ষমতা দখল করত। যার ফলে দেশের উন্নয়ন না করে তারা তাদের উন্নয়ন করেছে। ১৯/২০টা ক্যু হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিল, সেশন জট ছিল।
তিনি বলেন, ৭১ বছর বয়স পর্যন্ত ড. ইউনূস বেআইনিভাবে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি থেকেছেন। এ নিয়ে মামলা করে সে হেরে যায়। বিশ্বব্যাংক তার কথায় ফান্ড বন্ধ করে দেয়। পরে আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করি। দেশের ৯০ ভাগ উন্নয়ন নিজস্ব অর্থায়নে করছি। বাংলাদেশ আজ বদলে গেছে।
এসময় শেখ হসিনা বলেন, আগামী ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এ লক্ষ্যে তৃণমূল থেকে দলকে প্রস্তুত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মেয়াদত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলনও এরই মধ্যে শেষ করতে হবে বলেও জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি। বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সংগঠনকে শক্তিশালী করার কোনও বিকল্প নাই। সভা-সমাবেশ বাড়াতে হবে। জনগণের পাশে থাকতে হবে। জনগণের মন জয় করতে পারলে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হবে।’ তিনি সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগে সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরারও নির্দেশনা দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশে বিরাজমান গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে অনেকেই চেষ্টা করছে, কারও ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।’