অন্যান্য শহরের পাশাপাশি করাচি, পেশোয়ার, মালাকান্দ, মুলতান, খানেওয়াল, খাইবার, জাং, কোয়েটা, ওকারা, ইসলামাবাদ, লাহোর এবং অ্যাবোটাবাদে বিক্ষোভ হয়েছে। এছাড়া বাজাউর, লোয়ের দির, সাংলা, কোহিস্তান, মানেসরা, সোয়াত, গুজরাট, ফয়সালাবাদ, নওশেরা, ডেরা গাজি খান এবং মান্দি বাহাউদ্দিনেও বিক্ষোভ হয়েছে।
অনাস্থা ভোটে ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রতিবাদে পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করেছে তার সমর্থকেরা। রবিবার রাতে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের কর্মীরা বেশ কয়েকটি শহরের রাস্তায় বিক্ষোভ করেছে।
ক্ষমতা থেকে উৎখাত হওয়ার পর ইমরান গতকাল এশার নামাজের পর শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ডাক দেন। তিনি বলেন, বিদেশি-অর্থায়নের নাটকের বিরুদ্ধে ঘর থেকে বেরিয়ে সবার প্রতিবাদ করা উচিত। আমি আপনাদের সঙ্গে থাকব। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদেশি ষড়যন্ত্র মেনে নেব না।
এর আগে অনাস্থা ভোটকে সামনে রেখে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে ইমরান বিদেশি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানে বিদেশি সরকার বসাতে দেব না। আমরা এমন জাতি নই যে আমাদের টিস্যু পেপারের মতো ব্যবহার করা হবে।
পিটিআই আন্দোলনের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করছে। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দলটি বলছে, যাতে তারা আন্দোলনের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করে।
পিটিআই মুখপাত্র ফাওয়াদ চৌধুরীও ইশার নামাজের পর বিক্ষোভে নামার আহ্বান জানান। ইসলামাবাদে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপের সময় তিনি বলেন, দেশের ‘রাজনীতি ও সংবিধানের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার’ বিরুদ্ধে বড় আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইমরান খান।
পরে বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভের সময়সূচি প্রকাশ করে দলটি। রাত সাড়ে নয়টা থেকে এসব বিক্ষোভ শুরু হয়।
রাজধানী ইসলামাবাদে জিরো পয়েন্ট থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়। পিটিআই সমর্থকেরা জড়ো হয়ে পতাকা নাড়িয়ে, স্লোগান দিয়ে ইমরানের পক্ষে সমর্থন ব্যক্ত করেন। মিছিলের কারণে শ্রীনগর মহাসড়কের রাস্তায় যান চলাচল বিঘ্নিত হয়ে বিশাল ট্রাফিক জ্যাম তৈরি হয়।
রাওয়ালপিন্ডির রাস্তায় বেরিয়ে আসেন ইমরান সমর্থকেরা। সেখানে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী মুসলিম লিগ প্রধান শেখ রশিদ। বিরোধী জোটের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হওয়া শাহবাজ শরিফের ব্যাপক সমালোচনা করেন শেখ রশিদ।
পাকিস্তানের আর্থিক দুরবস্থা ও ভুল পররাষ্ট্রনীতির অভিযোগে ইমরানের বিরুদ্ধে গত ৮ মার্চ অনাস্থা প্রস্তাব আনে বিরোধী দলগুলো। তবে এ প্রস্তাবকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে ৩ এপ্রিল তা খারিজ করে দেন জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি।
সেদিনই প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। এ পরিস্থিতিতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নোটিশ দেন সুপ্রিম কোর্ট। টানা পাঁচ দিন শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্ট ৭ এপ্রিল অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ এবং জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করেন এবং অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোট আয়োজনের নির্দেশ দেন।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা মেনে দেশটির সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদের স্পিকার আসাদ কায়সারের সভাপতিত্বে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় অধিবেশন শুরু হয়। দিনভর চলে নাটকীয়তা। কয়েক দফায় অধিবেশন স্থগিত করা হয়।
পরে মধ্যরাতে সংসদের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের পদত্যাগের পর অনাস্থা ভোটে হেরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ হারান ইমরান খান। দেশটির ৩৪২ সদস্যের সংসদের ১৭৪ জনই তার বিরুদ্ধে ভোট দেন