শনিবার রাতে অনাস্থা ভোটে হেরে পাকিস্তানের সাত দশকের কোনো প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মেয়াদ পূর্ণ করতে না পারার ইতিহাসের অংশ হলেন ইমরান খান। তার বিরুদ্ধে ১৭৪টি ভোট পড়েছে। প্রস্তাব পাসের জন্য দরকার ছিল ১৭২টি ভোট।প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইমরান খানের ক্ষমতাচ্যুতির পর তার দল পিটিআই এর ওপর প্রতিশোধ পরায়ন হবেন না বলে জানিয়েছেন পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন) এর সভাপতি শাহবাজ শরিফ। শনিবার গভীর রাতে তিনি বলেন, বিরোধী দলীয় জোট ক্ষমতায় গেলেও তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবে না।
ইমরান খানের পদত্যাগের পর জাতীয় পরিষদে তিনি বলেন, ‘তাদের ত্যাগের জন্য আমরা সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। সংবিধান ও আইনের ভিত্তিতে পাকিস্তান নিজ অস্তিত্বে ফিরে আসবে। আমাদের জোট দেশকে উন্নতির দিকে নিয়ে যাবে বলে আশা করছি।’
শাহবাজ বলেন, ‘ইমরানের সময় পাকিস্তানে প্রথমবারের মতো দেশের কন্যা ও বোনদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সময় হলে আমরা বিস্তারিত কথা বলবো। তবে আমরা জাতির ক্ষত সারাতে চাই। আমরা কখনও নিরপরাধ লোকদের জেলে পাঠাবো না এবং প্রতিশোধও নেবো না।’
ঐতিহাসিক অধিবেশনে সভাপতিত্ব করার জন্য সাদিককে ধন্যবাদ জানিয়ে পিএমএল নেতা বলেন, ‘আমি বিলাওয়াল বা মাওলানা ফজলুর রহমান বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবো না। আইন বহাল থাকবে এবং আমরা বিচার বিভাগকে সম্মান করবো।’
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানতে স্থানীয় সময় রাত ১২টার কিছু সময় আগে ভোটাভুটি শুরু হয়। তবে শুরু হয়েই চার মিনিটের জন্য স্থগিত করা হয় অনাস্থা ভোটের প্রক্রিয়া। পরে তা আবার শুরু হয়। খবর জি নিউজ, ডেইলি জংয়ের।
অনাস্থা ভোটের আগে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকার আসাদ কায়সার ও ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি পদত্যাগ করেন। নতুন স্পিকারের পদে বসেন সরদার আয়াজ সাদিক। তার সভাপতিত্বেই ভোট অনুষ্ঠিত হয়।
ভোট শুরুর আগেই ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ছেড়ে বেরিয়ে যান ক্ষমতাসীন তেহরিক-এ-ইনসাফ দলের সাংসদরা। ফলে সরকারি দলের কোনো সদস্য ভোটের সময় পার্লামেন্টে ছিলেন না।
এর আগে সকালে শুরু হওয়া অধিবেশনটি তুমুল বিতর্কের মধ্যে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। এরপরও দফায় দফায় মুলতবি করা হয় অধিবেশন। দিনভর নানা নাটকীয়তার পর শেষ প্রহরে শুরু হয় অনাস্থা ভোট।
গত ৮ মার্চ পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেয় বিরোধী দলগুলো। কয়েক দফা স্থগিত শেষে ৩ এপ্রিল এ বিষয়ে ভোটাভুটি হওয়ার কথা ছিল। এরই মধ্যে গত ৭ এপ্রিল পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত অনাস্থা প্রস্তাব খারিজের সিদ্ধান্তকে অবৈধ হিসেবে রায় দেয়। সেই সঙ্গে ৯ এপ্রিল অনাস্থা ভোট আয়োজনের নির্দেশ দেয়।
৩৪২ সদস্যের পাক জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে ইমরান খানের ১৭২ জনের সমর্থন প্রয়োজন। তার দল পিটিআইয়ের সদস্য সংখ্যা ১৫৫। এ হিসেবে আগেই ধারণা করা হচ্ছিল, অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হলে সাবেক ক্রিকেট তারকা ইমরান খানকে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারাতে হতে পারে।
ইমরান খান ছিলেন পাকিস্তানের ২২তম প্রধানমন্ত্রী। তার ক্ষমতাচ্যুতির মধ্য দিয়ে দেশটির নির্বাচিত একজন প্রধানমন্ত্রীও তার মেয়াদ পূর্ণ করতে পারলেন না।
এদিকে ইমরান খান শেষ পর্যন্ত পদ ধরে রাখার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। শনিবার সন্ধ্যায় তিনি মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকেন। সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তবে শেষ পর্যন্ত পদ ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়ে রাতেই হেলিকপ্টারে করে ইসলামাবাদ ছাড়েন বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের বিভিন্ন গণমাধ্যম।