দেনদরবারের কারণ— চীন যেন রাশিয়াকে সহায়তা না করে এবং মস্কোর বিরুদ্ধে নিন্দা জানায়। কিন্তু বেইজিং নিজেকে এ যুদ্ধে নিরপেক্ষ অবস্থানে দেখানোতেই বেশি সপ্রতিভ। যদিও দেশের জনগণকে দেশটি এ যুদ্ধ নিয়ে দেখাচ্ছে ভিন্ন চিত্র।
চীনা মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার করা এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।ইউক্রেনে ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার হামলার পর চীন নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থানে আবিষ্কার করেছে। একদিকে দেশটির রাশিয়ার পরীক্ষিত মিত্র অপরদিকে আগ্রাসন শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা বেইজিংয়ের সঙ্গে দেনদরবার শুরু করতে বাধ্য হয়েছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদসংস্থা শিনহুয়া এ যুদ্ধকে বলছে, ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ ও ‘রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট’। কিন্তু সংবাদমাধ্যমটি কোনোভাবেই একে আগ্রাসন হিসেবে দেখাতে রাজি নয়।
সিসিটিভি হচ্ছে চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম। রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর তিন সপ্তাহ পর সম্প্রচারমাধ্যমটি প্রথমবারের মতো বেসামরিক মানুষ নিহত হওয়ার খবর জানায়।
অতি সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমগুলো রাশিয়ার ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচারে মনোনিবেশ করেছে। তাদের দাবি, ইউক্রেনে জীবাণু অস্ত্রের উন্নয়নে অর্থায়ন করছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া পরিযায়ী পাখিও প্রস্তুত করা হচ্ছে যার মাধ্যমে রাশিয়ায় ভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়া যায়।
মূলত দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো দর্শকদের কাছে বিষয়টি সরকারের অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে উপস্থাপন করছে।
চীন এখনও রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা জানায়নি। মস্কোর সঙ্গে চীনের শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিদ্যমান। দেশটি তাই এ ঘটনায় সতর্ক পদক্ষেপই নিচ্ছে। বেইজিং উল্টো বলছে, ‘বৈধ নিরাপত্তা উদ্বেগ’ নিয়ে সব পক্ষের আলোচনায় বসা দরকার। বুচা শহরে রাস্তায় পড়ে থাকা মরদেহ নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বে যেখানে উদ্বেগের শেষ নেই সে সময় চীনা গণমাধ্যম তা প্রচার করছে খুবই সংক্ষিপ্ত পরিসরে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের সেই শুরু থেকেই চীনের সংবাদমাধ্যমে একটি বার্তা স্থায়ী হয়ে আছে, সেটি হলো— যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে ভিলেন।
ফেব্রুয়ারিতে চীন ও রাশিয়া নিজেদের মধ্যে ‘সীমাহীন’ অংশীদারিত্ব ঘোষণার পর মস্কোর সঙ্গে বেইজিংয়ের সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে।
চীনা মিডিয়া প্রজেক্টের কো-ডিরেক্টর ডেভিড বান্দুরস্কি বলেন, আমাদের অবশ্যই দুই দেশের অংশীদারিত্বের দিক থেকে বিষয়টি বুঝতে হবে। চীনের সংবাদমাধ্যম ও রাশিয়ার স্পুতনিক-রাশিয়া টুডের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দীর্ঘ দিনের সহযোগিতার ইতিহাস রয়েছে। যেহেতু বিরোধ এখন চলছে, তাই চীনের সংবাদমাধ্যমগুলো রাশিয়ার অপপ্রচারকে আরও ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে যাচ্ছে। চীনের সংবাদমাধ্যমগুলো সংবাদের সূত্র হিসেবে ক্রেমলিনের কর্মকর্তা ও রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলোকে উল্লেখ করছে।
২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর থেকে বেইজিং-মস্কো আরও কাছাকাছি এসেছে। একে অপরের পাশে থাকার কথা জানাচ্ছে দুপক্ষই। দুই দেশের সংবাদমাধ্যমের এ আচরণ সহযোগিতামূলক কৌশলের অংশ বলেই ধরে নেওয়া যায়।