টানা কয়েক সপ্তাহের উত্তেজনার মধ্যে হঠাৎই ইউক্রেন সীমান্ত থেকে রাশিয়ার কিছু সৈন্য ফিরিয়ে নেওয়ার খবর জানা যায় মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি)। তবে ইউক্রেনে রুশ প্রেসিডেন্টের হামলার বিষয়ে এখনো সতর্ক অবস্থানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট সতর্ক করে বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা চালানোর শঙ্কা এখনো রয়েছে। মস্কোর সৈন্য ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জো বাইডেন।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে জো বাইডেন একথা বলেন। বুধবার (১৬ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
জাতির উদ্দেশে দেওয়া এই ভাষণে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্র তার কঠোর জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে। তার ভাষায়, ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার সেনা মোতায়েন করে রেখেছে।
অবশ্য রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী মঙ্গলবার বলেছেন, সীমান্তে সামরিক মহড়া শেষে সেনাবাহিনীর একাংশকে সামরিক ঘাঁটিতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন দাবি করেছেন, রুশ সেনা ফিরিয়ে নেওয়ার খবরের সত্যতা এখনও নিশ্চিত করা যায়নি।
ইউক্রেন সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরেই প্রায় এক লাখ সেনাসদস্য মোতায়েন রেখেছে প্রতিবেশী রাশিয়া। এর মধ্যে ট্যাংক ও কামানসহ যুদ্ধবিমানের বহরও ইউক্রেন সীমান্তে পাঠিয়েছে দেশটি। যেকোনো মুহূর্তে রুশ সেনারা দেশটিতে আক্রমণ করতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। যদিও ইউক্রেনে হামলার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে বরাবরই দাবি করে আসছে মস্কো।
তবে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, যেকোনো মুহূর্তে ইউক্রেনে হামলা করে বসতে পারে রাশিয়া। একই আশঙ্কা প্রকাশ করছে ওয়াশিংটনের অন্যান্য মিত্র দেশগুলোও। এমনকি আগামীকাল বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) এই হামলা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। যদিও নির্দিষ্ট কোনো তারিখের কথা নিশ্চিত করতে অস্বীকৃতি জানায় বাইডেন প্রশাসন।
বুধবার প্রেসিডেন্ট বাইডেন আরও বলেন, ‘রুশ সেনাদেরকে তাদের ঘাঁটিতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে একটি ভালো ঘটনা কিন্তু আমরা এখনও এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারছি না। প্রকৃতপক্ষে আমাদের বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব সেনা এখনও ইউক্রেনকে হুমকিতে রাখার মতো অবস্থায় রয়ে গেছে।’
এদিকে বাইডেনের বক্তব্যের আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছিলেন, তিনি তার দেশের নিরাপত্তার যে গ্যারান্টি চেয়েছেন তাকে আন্তরিকতার সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে। ইউক্রেনে হামলার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে পুতিন বারবার বলে এসেছেন, তিনি ইউরোপের সঙ্গে আরেকটি যুদ্ধ চান না। কিন্তু তা সত্ত্বেও নভেম্বরের পর থেকে ইউক্রেন-রাশিয়া সীমান্তে উত্তেজনা বহাল রয়েছে।
এর আগে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন নিজের অফিশিয়াল টুইটার দেওয়া এক বার্তায় বলেন, রাশিয়া থেকে পরস্পরবিরোধী খবর আসছে। তিনি বলেন, ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো খবর দিয়েছে, রাশিয়া ইউক্রেন সীমান্তে একাধিক ফিল্ড হাসপাতাল নির্মাণ করছে। জনসন বলেন, এটিকে শুধু যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবেই ধরে নেওয়া যায়।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার ঘোষণা দেয় যে, ইউক্রেন সীমান্ত এলাকায় কিছু রুশ সেনার মহড়া শেষ হয়েছে। তাই তাদের ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। এতে আরও বলা হয় প্রশিক্ষণের জন্য এখনো একটি বড় অংশ সেখানে রয়েছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, তারা বারবার বলে আসছেন যে, প্রশিক্ষণ শেষ হলে সৈন্যরা তাদের স্থায়ী ঘাঁটিতে ফিরে আসবেন। এটা নতুন কিছু নয়, সাধারণ ব্যাপার।
যদিও গত শনিবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাতে দাবি করা হয়েছিল, মঙ্গলবারের মধ্যেই ইউক্রেন আক্রমণ করতে পারে রুশ সেনারা। হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভানও চলতি সপ্তাহ বলেন, তাদের সূত্র ও গোয়েন্দা তথ্যের হিসাব মোতাবেক, রাশিয়ার বিশাল সামরিক অভিযান যেকোনো দিন শুরু হতে পারে। আর তা শীতকালীন অলিম্পিক শেষ হওয়ার আগেই ঘটবে বলে দাবি করেছিলেন তিনি।